জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সমন্বয় করে অভিন্ন কর্মসূচি দেবে ২০ দলীয় জোট #ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সমন্বয় করে অভিন্ন কর্মসূচি দেবে ২০ দলীয় জোট। তবে কর্মসূচি পালিত হবে ভিন্ন ভিন্ন। গতকাল সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে জোটের একাধিক নেতা গত শনিবার গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, যেহেতু ২০ দলীয় জোটের দাবি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত ৭ দফা দাবি প্রায় অভিন্ন, তাই ঐক্যফ্রন্টের সাথে সমন্বয় করেই ২০ দলীয় জোট আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করবে। বৈঠক সূত্র জানায়, চলতি মাস থেকেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, খালেদা জিয়ারসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও আটক নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি প্রদান, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ অন্যান্য দাবিতে কর্মসূচি প্রদানে সবাই একমত হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০ দলীয় জোটকে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম খান, জোটের প্রধান শরিক দল বাংলাদেশ জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, জাগপার ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, লেবার পার্টির অপর অংশের হামদুল্লাহ আল মেহেদী, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মণি, পিপলস লীগের (পিএল) সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) মঞ্জুর হোসেন ঈসা প্রমুখ।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনকে স্বাগত জানিয়েছে ২০ দলীয় জোট। গতকাল রাতে জোটের বৈঠকের পর এক সংবাদ ব্রিফিঙে সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান একথা জানান। তিনি বলেন, আজকে সভায় গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে গঠিত হয়েছে তাদের যে দাবিনামা ও লক্ষ্যসমূহ আমরা পর্যালোচনা করেছি। আমরা আলোচনা করে এই মর্মে ২০ দলীয় জোট একমত হয়েছি যে, এটা একটা স্বৈরাচারি সরকারকে হটিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটা অগ্রগতি। আমরা সেজন্য এই ফ্রন্টকে স্বাগত জানাচ্ছি ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে। আমরা আশা করছি এই ফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে আগামী দিনে জনগণের আন্দোলন আরো জোরদার হবে, বেগবান হবে এবং এই সরকার জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তাদের যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব পালন করবে।
নবগঠিত যুক্তফ্রন্টের দাবিতে জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকায় অভিনন্দন জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা দেখেছি যে দাবিগুলো আছে তাতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, জাতীয় সংসদ বাতিল, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, বিচারিক ক্ষমতাসহ নির্বাচনের আগে থেকে সেনাবাহিনী নিয়োগ এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দাবি যে দাবিতে অনেক দিন আগে থেকে আমরা আন্দোলন করছিলাম। এসব দাবির সঙ্গে এই জোট দেশের গণতন্ত্রের আন্দোলনের নেত্রী, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও দাবি করেছে। আমরা ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে সেজন্য ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সর্বশেষ জোটের সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিলো ২৭ সেপ্টেম্বর।
সূত্র মতে, নানা সমীকরণের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট। এই ফ্রন্টে ডান-বাম ও মধ্যপন্থী মতাদর্শের সব ধরনের রাজনৈতিক দল রয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে দেশের সকল গণতান্ত্রিক দলসহ পেশাজীবীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নব গঠিত ঐক্যফ্রন্টে মূলত বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকেই এগিয়ে নিতে হবে। কারণ ভোট ও সমর্থকের হেসেবে সরকার বিরোধী আন্দোলনে মূল দল হচ্ছে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এছাড়া জোটের বেশ কয়েকটি দলেরও দেশব্যাপী ভালো অবস্থান রয়েছে। তাই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত দাবিগুলো বাস্তবায়নে ২০ দলীয় জোটকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
নতুন ঐক্যফ্রন্টের সম্ভাবনা নিয়েই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্লেষকরা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, এই ফ্রন্টের বড় দল বিএনপি। এছাড়া তাদের ২০ দলীয় জোটে আরও কয়েকটি দলের ভালো সমর্থন রয়েছে। তাই ঐক্যফ্রন্টের দাবি বাস্তবায়নে মূলত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটকেই বেশী দায়িত্ব নিতে হবে।
সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। গত দশ বছরে তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের বৈঠ-অবৈঠভাবে নানান সুবিধা দিয়েছে। অর্থনৈতিক ভীত গড়ে উঠেছে। তারা ইতোমধ্যে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন, প্রচার করছেন। অন্যদিকে সরকার বিরোধী যে জোটটি গঠিত হলো তারা মাত্র যাত্রা শুরু করলো। তারা কতদূর যেতে পারবে তা আল্লাহই জানে। বিচার-বিশ্লেষণের জন্য আরো কিছুদিন সময় লাগবে।
এম হাফিজ উদ্দিনের মতে, এই জোটের বিএনপি একমাত্র দল যার সাংগঠনিক ও জনসমর্থন রয়েছে। অন্য দলগুলো সংগঠন হিসেবে শক্তিশালী না। কিছু ব্যক্তি আছেন যারা সুপরিচিত। জনসমর্থন কম। তাই এই ঐক্যফ্রন্টের নির্ভরতা হবে বিএনপি কেন্দ্রিক। তবে এদের সঙ্গে বাকি দলগুলোকে সম্পৃক্ত করে রাস্তায় নামলে একটা ফলাফল পেতেও পারে। এর জন্য যে সময়ের প্রয়োজন জাতীয় নির্বাচনের আগে তত সময় নেই বলেও ধারণা করছেন সাবেক এই উপদেষ্টা।
নব গঠিত জোটের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ প্রবীণ আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃতত্বে সদ্য গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি একটি অবাধ. সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিশ্চই ভালো। এই দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে নতুন ফ্রন্ট বড় ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, সরকারও চায় নির্বাচন। আমরাও অবাধে-নিশ্চিন্তে ভোট দিতে চাই। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কিছু বিষয় নিয়ে সরকার এবং বিরোধীদের মধ্যে দ্বিমত দেখা দিয়েছে। তা দূর করার জন্য এই ফ্রন্ট ভূমিকা রাখতে পারবে। ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পর ফলাফল কি হবে তার ওপর নির্ভর করবে সরকার গঠন বা ভারসাম্যের বিষয়টি। নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণার পর এই ফ্রন্টের ইশতেহার দেখে বলা যাবে তাদের চলার পথ কতোদূর হবে।
গত শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামের রাজনৈতিক জোট। এই জোটের প্রধান নেতা সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনে। তার সঙ্গে রয়েছে বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য। এছাড়াও সুশীল সমাজের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন নবগঠিত ফ্রন্টের মঞ্চে। এই ফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা বাংলাদেশ-এর। কিন্তু বিএনপির প্রতি ক্ষমতার আগাম বন্টন (সংসদীয় ১৫০ আসন) সহ কিছু শর্ত দিয়ে তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ফ্রন্টের প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে গেছেন তারা। এদিকে বিকল্পধারাকে ক্ষুদ্র দল আখ্যা দিয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ দুই এমপি পাওয়ার যোগ্য দলটি ১৫০ আসন চাওয়া ‘চাটায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন্’ প্রবাদ বাক্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সদ্য আত্মপ্রকাশ হওয়া নতুন জোট‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’কে পর্যবেক্ষণ রেখেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকরা। ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’এবং বিকল্প ধারার পৃথক সংবাদ সম্মেলন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের শরিক ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রাকিব বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়ার চক্রান্ত নিয়ে বিকল্পধারা যে মন্তব্য করেছে এতে মনে হয় আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য করছি এটা তার পরিপন্থী। ‘জনভিত্তি না থাকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ভাঙন’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমন মন্তব্যে মাওলানা রাকিব বলেন, এটা তাদের ইমোশনাল বক্তব্য। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন হওয়ায় তারা যে আতঙ্কিত হয়েছে এটা তারই বহির্প্রকাশ।
২০ দলের আরেক শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আমরা স্বাগত জানাই।’ বিকল্প ধারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা জনগণের মূল স্রোতে না আসবে তারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হবে।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান বলেন, ঐক্য হয়েছে বিএনপির সঙ্গে। ভালো-মন্দ তারাই ভালো বলতে পারবে। আমরা ২০ দলীয় জোটে আছি। কিন্তু ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে নেই। তাই ঐক্য নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য নেই। অপেক্ষা করুন সময়ই বলে দেবে ঐক্যের ভবিষ্যৎ।
২০ দলীয় জোটের শরিক ন্যাপ বাংলাদেশের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, এখনই মন্তব্য নয়, পর্যবেক্ষণ করি, তারপর দেখা যাক।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে শনিবার যে জোটের আত্মপ্রকাশ করেছে তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পর দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরাও সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন। রোববার মাদারীপুরের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদ্য গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে নানা মন্তব্য করেন। তবে এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলছেন, ক্ষমতাসীনদের সব স্তর থেকে বক্তৃতা বিবৃতি কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবজায়গাতেই একযোগে প্রচারণা চালানো হচ্ছে নতুন জোটের বিরুদ্ধে। তার মতে, এটি সরকার বা সরকারি দলের একটি রাজনৈতিক কৌশল, যাতে করে নতুন জোটটি কোনোভাবে তার সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে না দাঁড়াতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উদাহরণ তুলে ধরে দিলারা চৌধুরী বলন, নতুন জোটের নেতাদের নানাভাবে চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে এবং ক্ষমতাসীন দল বা তাদের সমমনা সবার দিক থেকেই এটা চোখে পড়ছে।
জানা গেছে, সরকারবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল সম্মিলিতভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এর প্ল্যাটফর্ম থেকে দাবি আদায়ের কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি আর ১১টি লক্ষ্য অর্জনে শিগগিরই একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে তারা। এসব দাবি, লক্ষ্য ও কর্মসূচি প্রণয়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফ্রন্টের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেছেন। রোববার গুলশানে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন। গতকাল ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সাথেও কর্মসূচি ও আগামী দিনের করণীয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। জানা গেছে, বৈঠক থেকে ঐক্যফ্রন্টের সাথে সমন্বয় করে অভিন্ন কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সব মিলিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে একটি নির্বাচনী মোর্চায় রূপ দিতে চায় বিএনপি ও জোটের হাইকমান্ড।
জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকার কী ধরনের হবে, কিভাবে তা গঠিত হবে এবং ঐক্যফ্রন্টের নতুন কর্মসূচি কী হবে তা নিয়ে নবগঠিত ঐক্যফ্রন্ট শিগগিরই একটা রূপরেখা তুলে ধরবে। এ সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নতুন কর্মসূচি আসবে এবং অক্টোবরের মধ্যেই কর্মসূচি সম্পন্ন করা হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যেসব দাবি ও লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে তা পূরণে এবং নির্বাচনে আসন বণ্টন ও অন্যান্য বিষয়েও পর্যায়ক্রমে আলোচনায় বসবেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় ঐক্যের কথা বলে আসছিলাম। অবশেষে তা চূড়ান্তরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। এ নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে নতুনভাবে উদ্দীপনা ও আশার আলো তৈরি হয়েছে। আমরা শিগগিরই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচির একটা রূপরেখা ঘোষণা দেবো। এটা নিয়ে এখন আমরা কাজ করছি, যথাসময়ে আমরা রূপরেখা দেবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই। এখন প্রেক্ষাপট বদলেছে। আমরা ঐক্যফ্রন্ট করেছি, এককভাবে কিছু করার তো প্রশ্ন এখন নেই। আমরা প্রথম খসড়া তৈরি করেছি, এটার ওপর আলাপ-আলোচনা করতে হবে। আমাদের আন্দোলনের কয়েকটা পর্যায় থাকবে এবং এই মাসের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে। দু-এক দিনের মধ্যেই আমরা কর্মসূচির রূপরেখা ঘোষণা করব। নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির আগে আসন বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা আপাতত হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্ত

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত জানালো ২০ দলীয় জোট – ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত জানিয়েছে ২০ দলীয় জোট।  গত রাতে গুলশান কার্যালয়ে জোটের বৈঠক শেষে সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত জানিয়েছে ২০ দলীয় জোটের নেতারা।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত দাবি ও ল্যগুলো নিয়ে জোটের বৈঠকে পর্যালোচনা করেছি। আলোচনা করে ২০ দলীয় জোট একমত হয়েছে, একটি স্বৈরাচারী সরকারকে হটিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার েেত্র একটা অগ্রগতি হয়েছে। সে জন্য আমরা এই ফ্রন্টকে স্বাগত জানিয়েছি।

তিনি বলেন, আশা করি, এই জোট গঠনের মধ্য দিয়ে আগামী দিনে জনগণের আন্দোলন আরো বেগবান হবে। একই সাথে এই সরকার জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তাদের যে দায়িত্ব তা পালন করবে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তোলায় এই জোটের নেতাদের ২০ দলীয় জোট ধন্যবাদ জানিয়েছে বলেও জানান নজরুল ইসলাম খান।
এ দিকে বৈঠক শেষে জোটের একটি শরিক দলের নেতা বলেন, বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জোটের নেতাদের আশস্ত করেছেন যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে নির্বাচনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জোটকে আগে জানানো হবে।
২০ দলীয় জোটের আরেক নেতা বলেন, আজ মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে বৈঠকের পর আবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হবে। সেখানে আগামী দিনের কর্মসূচি ও নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা আবদুল হালিম, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহম্মদ ইবরাহিম, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হামদুল্লাহ আল মেহেদী, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, জমিয়তের মুফতি ওয়াক্কাস, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম প্রমুখ।

সারা দেশের আইনজীবীদের নিয়ে মহাসমাবেশ করবে সুপ্রিম কোর্ট বার

গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সারা দেশের আইনজীবীদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে মহাসমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। এ ছাড়া সব মানবাধিকার সংগঠন এবং পেশাজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে একটি বৃহত্তর সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন এ ঘোষণা দেন।

বার সমিতি অডিটোরিয়ামে এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। সমিতির সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, গোলাম রহমান ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সিনিয়র সহ-সম্পাদক কাজী মো: জয়নুল আবেদীন, সদস্য মাহফুজ বিন ইউসুফ, শফিউল আলম মাহবুব, আহসান উল্লাহ, মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সদস্য আবেদ রাজা, ওয়ালিউর রহমান খান, মো: আখতারুজ্জামান, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, মোহাম্মদ আলী, আনিছুর রহমান খানসহ শতাধিক আইনজীবী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জয়নুল আবেদীন বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃউদ্ধারে সুপ্রিম কোর্ট বার যা যা করার তাই করবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অতীতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন করে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। দেশের বর্তমান ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সারা দেশের আইনজীবীদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।