এপি, সাবাহ, নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি : মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে আশঙ্কা করছে তুর্কী তদন্তকারীরা। ইস্তামবুলে সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগির অন্তিম মুহূর্তের অডিও রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এক তুর্কী সূত্রকে উদ্ধৃত করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খবরটি জানিয়েছে।
জামাল খাশোগি গত ২ অক্টোবর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে তুরস্কের ইস্তামবুল শহরের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর আর বের হননি। সৌদি আরব অবশ্য বলছে, খাশোগি কনস্যুলেট ভবন থেকে বের হয়ে গেছেন। তবে তুরস্কের পক্ষ থেকে এর প্রমাণ চাওয়া হলে তা সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে রিয়াদ। তুরস্কের দাবি, তাদের তদন্তকারীদের হাতে নিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। ২ অক্টোবর তুরস্কে আসা ১৫ সদস্যের একটি সৌদি দল এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ আঙ্কারার।
শুরু থেকেই খাশোগিকে হত্যার একটি অডিও প্রমাণ হাতে থাকার দাবি করে আসছে তুরস্ক। ওই অডিও রেকর্ডিং পুরোপুরি শুনেছেন এমন এক তুর্কী সূত্র মিডলইস্ট আইয়ের কাছে দাবি করেন, ২ অক্টোবর মাত্র সাত মিনিটে পুরো হত্যাকাণ্ড সম্পাদিত হয়েছে। ওই সূত্র দাবি করেছে, খাশোগিকে হত্যার উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের জেনারেল সিকিউরিটি বিভাগের ফরেনসিক প্রমাণ সংক্রান্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সালাহ মোহাম্মদ আল তুবাইগিসহ ১৫ জনের একটি দল প্রাইভেট জেটে করে ওইদিন সকালে আঙ্কারা পৌঁছান। দূতাবাসের কনসাল জেনারেলের অফিস থেকে খাশোগিকে টেনহিঁচড়ে কনসাল জেনারেলের পড়ার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় উপরে প্রচণ্ড চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সেখানে নিচতলায় উপস্থিত থাকা এক ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর তার চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, তাকে চেতনানাশক কিছু দেওয়া হয়েছিল।
দাবি করেছে, খাশোগিকে জিজ্ঞাসাবাদের কোনও আলামত দেখা যায়নি। তাকে হত্যা করতেই স্কোয়াডটি এসেছিল। স্টাডি রুমের টেবিলে ওপর শুইয়ে খাশোগিকে জীবিত অবস্থায় কেটে টুকরো টুকরো করেন তুবাইগি। পুরো হত্যাকা-টি ঘটাতে সময় লেগেছে মাত্র সাত মিনিট।
তুবাইগি যখন খাশোগিকে কাটতে শুরু করেন তখন তিনি ইয়ারফোনে উচ্চস্বরে গান শুনছিলেন। এছাড়া এ সময় তিনি তার সহকর্মীদেরও গান শুনতে উৎসাহ দেন। ওই রেকর্ডে তুবাইগিকে বলতে শোনা গেছে, ‘যখন আমি এ কাজ করি তখন গান শুনি। আপনাদেরও এটা করা উচিত।’ তিন মিনিটের একটি অডিও রেকর্ড তুর্কি সংবাদমাধ্যম সাবাহকে দেয়া হয়েছে। তবে তারা সেটি এখনো প্রকাশ করেনি বলে জানিয়েছে মিডলইস্ট আই। একটি তুর্কি সূত্র নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছে, সেই সময় তুবাইগি প্রস্তুত হয়ে এসেছিলেন। তার পোশাকও সেরকম ছিল। তুবাইগি সৌদি ফরেনসিক প্যাথোলজি ফেলোশিপের সভাপতি এবং সৌদি ফরেনসিক প্যাথোলজি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।
একটি ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের ব্যাপারে ২০১৪ সালে তুবাইগির সাক্ষাৎকার নিয়েছিল লন্ডনভিত্তিক সৌদি পত্রিকা আশরাক আল আওসাত। নিহত হাজীদের মৃত্যুর কারণ জানতে ওই ক্লিনিকে সাত মিনিটে পরীক্ষা সম্পন্নের সক্ষমতার কথা জানা গিয়েছিল। আশরাক আর আওসাত-এর সেই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, এই ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকটি তুবাইগির ডিজাইন করা। এটির মাধ্যমে ঘটনাস্থলেই কারো ময়নাতদন্ত করা সম্ভব। ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাসে খাশোগি হত্যার এটিই প্রথম বিস্তারিত বিবরণ বলে দাবি করেছে ।
ট্রাম্প এই টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, সৌদি যুবরাজ তাকে ফোন করে কথা বলেছেন। তিনি তাদের তুর্কি কনস্যুলেটে কী ঘটেছে তা জানার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি আমাকে বলেছেন, ইতোমধ্যে এই ঘটনার একটি পরিপূর্ণ তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন ও এটা দ্রুত শেষ করা হবে। সব প্রশ্নের উত্তর শিগগিরই সামনে আসবে।’
সৌদি যুবরাজের ফোনালাপ ছাড়াও মিত্র দেশটির সংকটময় সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে সেখানে পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। সোমবার সৌদি আরবকে দোষারোপ করা বাদ দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘দুর্বৃত্ত হত্যাকারীরা’ খাশোগির নিখোঁজের ঘটনায় দায়ী হতে পারে বলে সন্দেহ করেন ট্রাম্প।
তারপরও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তর থেকে নিন্দা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্কের সমর্থনকারী শীর্ষ রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামও এই ঘটনায় সৌদি যুবরাজের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি মোহাম্মদ বিন সালমানকে ‘রেকিং বল’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘লোকটি গোল্লায় গেছে।’ তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সৌদি আরব জামাল খাশোগির নিহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করতে যাচ্ছে। সূত্রকে উদ্ধৃত করে আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, ’খাশোগি নিহতের’ ঘটনায় সৌদি আরব ব্যাখ্যা সাজিয়েছে। সৌদি আরবের নতুন ভাষ্য হবে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান খাশোগিকে জিজ্ঞাসাবাদ বা আটক করে দেশে নিয়ে আসার বিষয়টি অনুমোদন করেছিলেন। কিন্তু গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তা করতে ব্যর্থ হন। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ভুলবশত তাকে হত্যা করেন। পরে ওই কর্মকর্তা নিজেকে বাঁচানোর জন্য বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।