উন্নয়নের রোল মডেল ধরে রাখতে আরেকবার ভোট দিন -শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সম্মান লাভ করেছি, সেটা ধরে রাখতে আরেকবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিন, নৌকায় ভোট দিন। আপনাদের কাছে আমি দোয়া চাই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। যাকেই নৌকা মার্কা দেয়া হবে, তাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।
গতকাল শনিবার বিকালে বরগুনার তালতলী সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে দুপুরে পায়রা বন্দরে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প ও বয়লার টাওয়ার পরিদর্শন করেন। পরে ১৬টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজবি উল কবির জমাদারের সভাপতিত্বে  অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরসহ আরও অনেকে। জনসভা পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুসহ অন্যরা।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই উন্নয়ন করে। আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সেবার সুযোগ দিয়েছেন। এজন্য আমাদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জনগণের প্রতি। নৌকা মানেই উন্নয়ন। এই নৌকায় ভোট দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ কখনো ঠকেনি। যখনই ভোট দিয়েছে উন্নয়ন হয়েছে। নৌকার ফলেই সমগ্র বাংলাদেশে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।
তিনি বলেন, দুই টার্ম আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছি। সারাদেশেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। প্রতিটি এলাকায় মানুষ যেন ভালোভাবে চলতে পারে সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০ হাজার মেগাওয়াটে বৃদ্ধি করেছি। এখানে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে সেখান থেকে ১৩০০ মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদন হবে। শুধু ঘরে বিদ্যুৎ যাবে না, এ বিদ্যুৎ শিল্প-কলকারখানায়ও যাবে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করব, সেখানে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
তিনি  বলেন, আমরা চাই, শুধু রাজধানীর মানুষ সুখে থাকবে তা নয়, প্রত্যেকটা গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত সুবিধা পৌঁছাতে চাই। প্রত্যেকটা গ্রামে আমরা শহরের মতো সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই। ঘরে বসে ইন্টারনেটে কাজ করে পয়সা উপার্জন করে মানুষ যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্ট নিয়েছি। যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার বর্গাচাষিদের বিনাসুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। আমাদের কওমি মাদরাসার ছাত্রদের আগে কোনও স্বীকৃতি ছিল না। আমরা তাদের কারিকুলাম ঠিক করে সনদের ব্যবস্থা করেছি। যে সনদের মাধ্যমে তারা দেশে বিদেশে চাকরির সুযোগ পাবে। তারাও আমাদেরই সন্তান। তাদের জীবনমান উন্নত হোক আমরা সেটাই চাই
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, যাকেই নৌকা মার্কা দিয়ে পাঠাব আপনারা তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। হাত তুলে আপনারা প্রতিজ্ঞা করেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘২১ আগস্ট খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক জিয়া গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে গিয়েছি। আইভী রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মীকে হারিয়েছি এবং এটা একবার নয় কয়েকবার। ওরা কী করেছে, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের দেশ করেছে। পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। বিএনপি এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছিল। দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘তার একটাই কারণ। তারা তো স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। মানুষের উন্নতিতে বিশ্বাস করে না। এতিমের টাকা সেই টাকাও এতিমদের না দিয়ে নিজের নামে রেখে চুরি করেছে। আর সেই এতিমের চুরির দায়ে মামলা হয়েছে। আর সেই মামলায় আজকে খালেদা জিয়া জেলে সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের টাকা চুরি করলে আল্লাহও শাস্তি দেন। আর সেই শাস্তি এখন ভোগ করছে।’
‘তার পুত্র মানি লন্ডারিং করেছে। বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। দশ ট্রাক অস্ত্র পাচার করতে যেয়ে ধরা পড়েছে এবং ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ যত রকমের অপকর্ম করে আজকে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। এরা যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। আমি কমিউিনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। বিনা পয়সায় ৩০ প্রকার ওষুধ পান আপনারা। কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না। প্রত্যেককে আমরা ঘর করে দেব। প্রত্যেক মানুষ যেন বাসস্থান পায়। সুন্দরভাবে বাঁচে এই ব্যবস্থা করে দেব।’
এদিকে পটুয়াখালীতে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আবাসন প্রকল্প ‘স্বপ্নের ঠিকানা’র দলিল ও চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সমগ্র বাংলাদেশে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এর ফলে বাংলাদেশের মানুষ সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারবে। দেশের মানুষ আর কষ্ট করবে না। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই এলাকায় এলএনজি টার্মিনাল করে দেব। যাতে এলএনজি শিল্পখাতসহ অন্যান্য খাতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগও আমরা নেব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নির্দেশ দিয়েছি এখানে মাল্টিপারপাস সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করতে। কাজেই স্বপ্নের ঠিকানা নাম দিয়ে যে বাড়িঘর তৈরি করেছি তারা সেখানে সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারবেন।’
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে এখানকার ছেলে-মেয়েরা চাকরির সুযোগ পাবে। সেই ব্যবস্থা আমরা করতে পারব বলেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর ঘাঁটি ও সেনানিবাস তৈরি করে দিচ্ছি। এ এলাকা একসময় অবহেলিত ছিল, সেটার দিকে আমরা নজর দিচ্ছি। এই অঞ্চল ঘিরে আমরা আমাদের মহাপরিকল্পনা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই এলাকায় আমরা একটা দ্বীপ খুঁজছি। এটির সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই চলছে। আমরা এখানে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে দেব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। ২০২০-২১ কে আমরা মুজিববর্ষ ঘোষণা দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হবে।’

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।