সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে সাত দফা দাবি তুলেছে তা একেবারেই অযৌক্তিক। যা কোনো সরকারের পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এ কারণেই সরকারের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ ব্যর্থ হয়েছে।
শনিবার বিকালে জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার গুঠাইল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে উপজেলা জাতীয় পার্টি আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আরও বলেন, আমরা কোনো তালিকা নিয়ে সংলাপে যাব না। আমরা চাই সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সংলাপে আমরা আসন বণ্টন নিয়েও আলোচনা করব।
তিনি বলেন আমরা আসন বেশি পেলে জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আগামী নির্বাচনই হয়তো আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। বলেন আমরা ক্ষমতায় গেলে মানুষ সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে। কারণ আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। আমরা সরকার পরিচালনা করলে কোনো মানুষ খুন, গুম হবে না। কোনো মায়ের চোখের অশ্রু ঝরবে না। আমরা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করব। একমাত্র লাঙলই দেশের মানুষের সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিএনপির সমালোচনা করেন বলেন, দলটি আমাকে বিনা বিচারে ৬ বছর কারাগারে আটকে রেখেছিল। এখন সেই দলটির প্রধান আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাগারে আছেন। আবার সেই নেত্রীর ছেলেও আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে বিদেশে আছেন, সেও দেশে ফিরতে পারবে না। তাই দেশের রাজনীতির মাঠে এখন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি আছে। আমরা শক্তিশালীভাবে নির্বাচন করলে ক্ষমতায় যেতে পারব।
এ প্রসঙ্গে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে, কেউ যেন ভোট চুরি করতে না পারে। কেউ যেন সিল মারার নির্বাচন করতে না পারে। সে বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে নির্দেশও দেন তিনি।
আগামী একাদশ নির্বাচনে জামালপুর-০২ আসনে মোস্তফা আল মাহমুদকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে, তাকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
এর আগে সমাবেশে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, কল্যাণ ও উন্নয়নের রাজনীতি করছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনিই পারেন জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে।
তিনি বলেন, প্রমাণ হয়েছে জনগণের নিরাপত্তা ও তাদের ভাগ্যের উন্নয়নে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিকল্প নেই।
৯ বছরের শাসনামলে দেশের জনগণ তার প্রমাণ পেয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন লাঙলে ভোট দিলেই জামালপুরের নদীভাঙন রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে, দেশের বেকারত্ব দূর হবে। মানুষ সুখ ও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। জাতীয় পার্টির আমলে নেয়া ইসলামের কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি, মসজিদ-মাদ্রাসার বিদ্যুৎ ও পানির বিল মওকুফ করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
ইসলামপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মোস্তফা আল মাহমুদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ সাত্তার, এসএম ফয়সল চিশতী, আজম খান, মোজর (অব.) খালেদ আখতার, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু।
উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মো. হেলাল উদ্দিন হেলাল, নিগার সুলতানা রানী, কাজী আবুল খায়ের, নজরুল ইসলাম সরদার, ইকবাল আলমগীর, মো. আলী শেখ, জিয়াউর রহমান বিপুল।
স্থানীয় নেতাদের মধ্যে মো. শফিকুল ইসলাম, জাকির হোসেন খান, কর্নেল (অব.) রেজাউল করিম।
এর আগে দুপুর থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেন। তারা মিছিলে মিছিলে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করেন সমাবেশস্থলে।
সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নারীর উপস্থিততি ছিল লক্ষণীয়। এছাড়া ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের লাঙল এবং রং বেরঙের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে নেতাকর্মীদের মিছিল প্রমাণ করে স্থানীয়ভাবে জাতীয় পার্টি বেশ শক্তিশালী। এছাড়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আগমন উপলক্ষে ইসলামপুরের বিভিন্ন সড়কে অসংখ্য তোরণ তৈরি করা হয়।