শার্শায় গাছিরা খেজুর গাছ চাঁছাছোলায় ব্যস্ত সময় পার করছে

মসিয়াররহমান কাজল (বেনাপোল) থেকে : যশোরের যশ খেজুরের রস’। এটি শুধু কথায় নয়, কাজেও। শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। তাই প্রতি বছরের ন্যায় এবারো যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার জনপদের গাছিরা খেজুরের রস আহরণের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে।  সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য প্রাথমকি প্রস্তুতি শুরু করেছেন। শুরু করেছেন খেজেুর গাছের প্রাথমিক পরির্চযাও।যাকে বলা হয় ‘গাছ তোলা’। এক সপ্তাহ পরই আবার গাছে চাছ দিয়ে নলি ও গুজা লাগানো হবে।  খেজুর গাছ থেকে রস বের করতে তিনটি স্তর পেরিয়ে ১৫-২০দিন পরেই রস আহরণ শুরু হয়।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিশেষত রাস্তার পাশে এখন চোখে পড়ছে খেজুর গাছ তোলা ও চাছার দৃশ্য। গাছিরা এখন মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। গতকাল সোমবার উপজলোর শার্শা উপজেলার ডিহি ফুলসারা ও বেনাপোল পোট থানার সাদিপুর, বড়আচড়া, গাতিপাড়া, খড়িডাঙ্গা, রাজাপুর সহ বভিন্নি গ্রাম ও কাঁচা সড়করে পাশে খজেুর গাছ কাটার (পরির্চযা) এমন অসংখ্য দৃশ্য চোখে পড়েছে। আর কিছুদিন পরই মধু বৃক্ষ থেকে সুমধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে গুড়, পাটালি তৈরীর উৎসব।
বেনাপোল সহ শার্শা উপজেলার এর আশেপাশের গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা, পায়েস, মুড়ি মুড়কী ও নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরীর করার ধুম পড়বে। আর রসে ভেজা কাচি পোড়া পিঠার (চিতই পিঠা) স্বাদই আলাদা। নলনে গুড়, ঝোলা গুড় ও দানা গুড়ের সুমিষ্ট গন্ধেই যেন র্অধ ভোজন। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। নলনে গুড় পাটালির মধ্যে নারিকেল কোরা, তিল ভাজা মিশালে আরো সুস্বাদু লাগে। আমাদের ঐতহ্যিবাহী গুড়-পাটালির ইতিহাস অনেক প্রাচীন। শার্শার জিরেনগাছার গুড় বিখ্যাত এ গুড়-পাটালি ভারত, জাপান আমরেকিা, মালশেয়িাসহ বিভিন্ন দেশে যায়। খেজুর গাছ আন্যন্য গাছের মত বপন করে বা সার মাটি দিয়ে তৈরী করা লাগে না। প্রাকৃতিক নিয়মেই মাঠে পড়ে থাকা খেজুরের আঁটি (বীজ) থেকে চারা জন্মায়। সৃষ্টি হয় খেজুরের বাগান। সাধারণত বিলের মাঝের আইলের উপর, কাঁচা রাস্তার পাশে বা উন্মুক্ত জমিতে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়ে ওঠে খেজুর গাছ।
তবে খেজুর গাছ ইট ভাটার জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ায় রস, গুড় ও পাটালির উৎপাদন বহুলাংশে কমে যাচ্ছে  বেনাপোল ও শার্শা আশেপাশের এলাকায়। এখন আর আগের মত মাঠ ভরা খেজুর বাগান দেখা যায় না, নেই মাঠে মাঠে রস জ্বালানো বান (চুলো)। যা আছে তা নিতান্তই কম। নলেন গুড়, পাটালি পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে গাছিরা গাছ পরিস্কার বা তোলা চাচা করার জন্য গাছি দা, দড়ি তৈরী সহ ভাড় (মাটির ঠিলা) ক্রয় ও রস জ্বালানো জায়গা ঠিক করা সহ বিভিন্ন কাজে রয়েছে ব্যতিব্যস্ত। তবে সংশ্লষ্টিরা জানান গাছ কাটা, রস জ্বালানো ও গুড়-পাটালি তৈরীর উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় গুড়-পাটালির দাম বেশি হবে।

Please follow and like us:

Check Also

তালায় বৃষ্টির জন্য এস্তেষ্কার নামাজ আদায়

কামরুজ্জামান মিঠু, তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরার তালায় বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ আদায় করেছেন এলাকার মুসল্লীবৃন্দ। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।