সাতক্ষীর সংবাদদাতা: সাতক্ষীরা জেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি ও সদর শিবিরের সভাপতিকে অস্ত্রসহ আটকের দাবী করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার জেলা গোয়েন্দা পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করে। পুলিশের দাবী ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় তৈরি অস্ত্র, গুলি,হাতবোমা ও জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) শাহরিয়ার হাসান জানান, নাশকতার পরিকল্পনা করার সময় কলারোয়ায় শিবিরের নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠক করছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে চারজনকে আটক করা হয় ও বাকিরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে দেশিয় তৈরি অস্ত্র, গুলি, হাতবোমা ও জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে।
এসময় সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ চারজনকে আটক করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশিয় ওয়ান শুটার গান, এক রাউন্ড গুলি, ছয়টি হাত বোমা ও জিহাদী বই উদ্ধার করা দাবী করে পুলিশ। সোমবার গভীর রাতে কলারোয়া উপজেলার সলিমপুর গ্রামের জনৈক লিয়াকাতের বাড়িতে গোপন বৈঠককালে তাদের আটক করা হয় বলে পুলিশ জানায়।
পুলিশের তথ্য মতে আটক চারজন হলেন- কলারোয়া উপজেলার খলিষাবুনিয়া গ্রামের এনছার আলীর ছেলে ও জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি রুহুল আমিন মামুন (৩০), শ্যামনগর উপজেলার চাঁদনীমুখা গ্রামের জামাত আলীর ছেলে ও জেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি নুরুল আমিন (২৭), শিবির কর্মী কলারোয়া উপজেলার সলিমপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে বাকী বিল্লাহ (৩২) ও একই গ্রামের জিয়াদ আলীর ছেলে সাগর হোসেন (২৩)।
প্রকৃত ঘটনা হল গত রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে খুলনারোড মোড়ে অবস্থিত একটি হোটেলে খেতে যাই সাতক্ষীরা জেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন ও দর শিবিরের সভাপতি মাওলনা নুরুল আমিন। সেখান থেকে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশ তাদেরকে তুলে নিয়ে যায়। রুহুল আমিন বর্তমানে সাতক্ষীরা শহর জামায়াতের একজন সদস্য।
রুহুল আমিনের ভাই মেহেদী হাসান জানান,গত রবিবার রাতে তার ভাইকে খুলনারোড মোড়ে একটি হোটেলে খেতে যাই। সেখান থেকে ডিবি পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়। একদিন পরে পুলিশের মোবাইল থেকে তার ভাই দুই লক্ষ টাকা চায়। টাকা না দিলে পুলিশ তাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করবে বলে জানায়। দফায় দফায় ডিুিব অফিস থেকে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে থাকে। দুই লক্ষ টাকা না দিলে তাকে হত্যা করা হবে বলে ভয় দেখানো হয়। পরে ৬৫ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি চুক্তি করা হয়। সোমবার রাতে রুহুল আমিনের ভাই মেহেদী সাতক্ষীরা ডিবি অফিসে যেয়ে নিজহাতে ডিবি পুলিশকে ৬৫ হাজার টাকা দেয়। মামলা নর্মল দেয়া হবে বলে রুহুল আমিনের পরিবারকে জানিয়ে দেয়া হয়। পরে মিডিয়ার মাধ্যমে রুহুল আমিনের পরিবার জানতে পারে তাকে অস্ত্র,গুলি, হাতবোমা ও জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের এমন নাটকে তারা হতবাক।
এঘটনায় সাতক্ষীরা জামায়াতের পক্ষ থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এক প্রতিবাদ বার্তায় সাতক্ষীরা জামায়াতের আমীর হাফেজ রবিউল বাশার জানান, রুহুল আমিন সাতক্ষীরা শহরের জামায়াতের একজন কর্মী। গত দুই দিন আগে পুলিশ তাকে আটক করে। পরে গুলি, হাতবোমা ও জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ যে নাটক মন্তস্থ করেছে তাতে সuমস্ত জেলা বাসী হতবাক। এমন মিথ্যা কর্মকান্ড থেকে পুলিশকে সরে আসার অাহবান জানান তিনি
সাতক্ষীরায় অন্যায় ভাবে সাবেক শিবির নেতাকে গ্রেপ্তার ও মিথ্যা অস্ত্র মামলায় জড়ানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
সাতক্ষীরা থেকে অন্যায় ভাবে ছাত্রশিবির সাতক্ষীরা শহর শাখার সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন ও পৌর পশ্চিম থানা সভাপতি নুরুল আমিনকে অন্যায় ভাবে গ্রেপ্তার পর বেআইনি ভাবে আদালতে হাজির না করে দুই দিন যাবত নির্যাতন ও উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবে অস্ত্র মামলায় জড়ানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত ও সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন বলেন, সরকার অর্থবহ নির্বাচনের কথা বলে সংলাপ করছে এবং বলেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপরে হয়রানী মামলা হবে না। কিন্তু বাস্তবে তা উল্টো চিত্র দেখছে জনগণ। তারা বিরোধী মতের উপর মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, অস্ত্র নাটক ও বিভিন্ন অফিসে অভিযান চালিয়ে ভাংচুর অব্যাহত রেখেছে। মূলত ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদী সরকারের ভোটার বিহীন একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে পুলিশ প্রশাসন। তারই অংশ হিসেবে সাতক্ষিরায় নিরপরাধ নেতাদের অন্যায় ভাবে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন ও মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিয়েছে পুলিশ। যা পুলিশের দায়িত্বহীনতার আরেকটি ঘৃন্য নজির। গত ৪ নভেম্বর সন্ধা সাড়ে ৭টায় সাতক্ষীরা শহরের খুলনাবদ নামক স্থানে আরিফুলের চায়ের দোকান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে সাদা পোষাকধারী পুলিশ। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির না করে তাদের উপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়। গ্রেপ্তারের কথাও অস্বীকার করা হয়। আজকে ৬ নভেম্বর তাদেরকে মিথ্যা অস্ত্র মামলা জড়িয়ে আদালতে হাজির করে। এসময় তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ৯৫ হাজার টাকাও আদায় করে পুলিশ। তারা নিরপরাধ ও অস্ত্র নাটকের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু পুলিশ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য তাদেরকে অস্ত্র মামলায় জড়িয়েছে। পুলিশের এই দায়িত্বহীন কর্মকান্ড রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। রাজনৈতিক ভাবে ছাত্রশিবিরের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে সরকারের ইশারায় ঘৃন্য ষড়যন্ত্র করেছে পুলিশ। এর আগেও সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সারাদেশে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীকে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ের সাথে জড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে কিছু দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে শিবির কর্মীদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগই মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশের প্রতি জনগণের কোন আস্থা নেই। মানুষ এসব সাজানো নাটক বিশ্বাস করে না। আমরা পুলিশের এই জঘন্য অপকর্মের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে পুলিশের এসব নাটক বরাবরই মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে এবং মিথ্যাচারের জন্য পুলিশ জনগণের ধিক্কার কুড়িয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখনো অস্ত্র উদ্ধার নাটক মঞ্চায়নের অনৈতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। আমরা অবিলম্বে এই সাজানো মামলা প্রত্যাহার করে গ্রেপ্তারকৃত শিবির নেতৃবৃন্দের নি:শর্ত মুক্তি দাবী করছি। একই সাথে এমন ঘৃন্য কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।