ক্রাইমবার্তা রিপোর্টঃ
দুর্নীতি মামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজ দল বিএনপি সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করতেও পিছপা হননি, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতিও কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছেন। উদ্দেশ্য একটাই সেটা হলো দুর্নীতির মামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করা। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের প্রিয়ভাজন হওয়া। সে পথেই হাটছিলেন সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সব রকম প্রস্তুতি ও শেষ করেছেন। মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছেন আওয়ামীলীগ থেকে। কিন্তু এসব তোড়জোড়ের মধ্যেই আদালতের রায় মুশকিলে ফেলেছে নাজমুল হুদাকে।
খালেদা জিয়ার সরকারের দুই বারের মন্ত্রী নাজমুল হুদা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যও ছিলেন। পরে বিএনপি থেকে বেরিয়ে তিনি প্রথমে বিএনএফ গঠন করেন, ওই দলের কর্তৃত্ব হারানোর পর তিনি গঠন করেন তৃণমূল বিএনপি। এখন ওই দল নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিয়ে ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী হতে চাইছেন।
এনপি থেকে বহিস্ককৃত হয়েছেন। তারপর গোটা তিনেক দল তৈরীর করেও নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না নাজমুল হুদা। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ফেঁসে গেলেন তিনি। ফলে এমপি হওয়ার খায়েশ মনে হয় পূরণ হচ্ছে না। আর যে উদ্দেশ্যে দল পাল্টালেন, নতুন দল গঠন করলেন, তথাকথিত জোট করলেন সবেই যেন ভেস্তে যাচ্ছে। তবে নিজের মেয়ে অন্তরা হুদা অবশ্য বিএনপি থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
আইনজীবীদের মতে, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদার আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে এমন পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করা হলে তা জাতীয় স্বার্থ, অর্থনীতি ও দেশের ভাবমূর্তির জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ওই আপিল করেছিলেন নাজমুল। আপিল খারিজ করে তাকে ৪৫ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রোববার ৬৭ পৃষ্ঠার রায়টি প্রকাশ পায়। গেল বছরের ৮ নভেম্বর বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ হুদা দম্পতির আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন। এরপর আজ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
রায়ে বলা হয়, দুর্নীতি একটি অভিশাপ। সমাজের সবক্ষেত্রে দুর্নীতি দেখা যায়। দুর্নীতির সমাজের নৈতিক অবস্থা নষ্ট করে এবং সরকারি কর্মচারীর দুর্নীতি কেবল নৈতিক অবস্থাই নষ্ট করে না বরং এটি জাতীয় অর্থনীতি ও জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করা হলে তা জাতীয় স্বার্থ, অর্থনীতি ও দেশের ভাবমূর্তির জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ঘটনা ও তথ্যাদি পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, আপিলের কোনো সারবত্তা পাওয়া যায়নি। আপিল খারিজ করা হলো। বাকি সাজা ভোগ করতে বিচারিক আদালতের রায়ের কপি গ্রহণের ৪৫ দিনের মধ্যে আপিলকারী (নাজমুল হুদা) বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। এতে ব্যর্থ হলে বিচারিক আদালত তাঁর গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে নাজমুল হুদার সাত বছর এবং তার স্ত্রী সিগমা হুদার তিন বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা হয়। এর বিরুদ্ধে আপিল করেন তাঁরা। বিচারিক আদালতের রায়ে নাজমুল হুদাকে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট নাজমুল হুদার সাজা সাত বছর থেকে কমিয়ে চার বছরের কারাদণ্ড এবং তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে যে সময়টুকু সিগমা হুদা কারাগারে ছিলেন, তা সাজাভোগ হিসেবে গণ্য হবে বলা হয়েছে।
নাজমুল হুদার আইনজীবী আশানুর রহমান বলেন, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি এখনো বিচারিক আদালতে পৌঁছায়নি। এই রায় বিচারিক আদালতের গ্রহণ করার ৪৫ দিনের মধ্যে নাজমুল হুদাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। এ হিসেবে ৪৫ দিন সময় আছে। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করা হবে।
আইনজীবী সূত্র বলেছে, ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২১ মার্চ ধানমন্ডি থানায় মামলাটি করে দুদক। এই মামলায় ২০০৭ সালের ২৭ আগস্ট বিচারিক আদালতের রায়ে নাজমুল হুদার সাত বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড এবং তার স্ত্রী সিগমা হুদাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২০ মার্চ হাইকোর্ট আপিল মঞ্জুর করে সাজার রায় বাতিল ঘোষণা করেন। এতে করে ওই মামলায় খালাস পান নাজমুল হুদা দম্পতি। এর বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। এর শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের খালাসের রায় বাতিল ঘোষণা করে পুনরায় হাইকোর্ট আপিল শুনানি করতে নির্দেশ দেন। এরপর ওই আপিলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই রায় দেন।