ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগে গুরুতর অনিয়ম সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন প্রভাবিত করার শঙ্কা * সিনিয়র কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ

ক্রাইমবার্তা রিপোট:  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসনে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা) নিয়োগে গুরুতর কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। এ আসনের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগে দক্ষ ও অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে সরকারি দলের প্রার্থীর অনুগতদের নিয়োগ দেয়ার সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে।

বিগত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন অনেক কর্মকর্তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অন্য প্রার্থীরা প্রশাসনের এমন ন্যক্কারজনক অপতৎপরতায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া নবাবগঞ্জ ও দোহারের সচেতন ভোটারদের অনেকে জানান, দলীয়ভাবে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করে প্রশাসন ইতিমধ্যে তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে।

তাদের শঙ্কা, দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা ভোট কারচুপিতে ভূমিকা রাখতে পারেন। যদিও সাধারণ ভোটারদের অনেকে ঐক্যবদ্ধ। তারা যে কোনো মূল্যে কেন্দ্রে শক্ত পাহারা বসানো ছাড়াও ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার নজরদারির মধ্যে রাখতে সব রকম প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রশাসনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। তা না হলে ভোটাররা তাদের প্রতিরোধ করতে পিছ পা হবে না।

এদিকে দলীয় বিবেচনায় ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা-১ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন  বলেন, ‘প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব প্রদানের জন্য নামের তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল।

যাদের মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সব সরকারি কর্মকর্তা এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা ছিলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা সেখান থেকে বাছাই করে ১০৩ জনকে দায়িত্ব প্রদান করেছেন। এটি সম্পূর্ণ রিটার্নিং কর্মকর্তার এখতিয়ার। এখানে আমার কিছুই করার নেই।’

সূত্র জানায়, স্থানীয় প্রশাসনের এমন বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং পুলিশ ও জনপ্রশাসন যৌথভাবে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রস্তাবিত তালিকার প্রত্যেকের বিষয়ে গোপনে বায়োডাটা সংগ্রহ করে। যেখানে প্রত্যেকের রাজনৈতিক পরিচয় অনুসন্ধান করা হয়। সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার পরিচয় না থাকলে তিনি কোন মনোভাবাপন্ন সেটি উল্লেখ করে গোপনীয় প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।

ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যারা সরকারি দল সমর্থক বলে পরিচিত বেছে বেছে তাদের মধ্য থেকে প্রথম সারির কর্মকর্তাদের প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। এ কারণে অতীতে যেসব সিনিয়র শিক্ষক ও ব্যাংক কর্মকর্তা কয়েকটি নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে অনেককে এবার বাদ দেয়া হয়েছে। এমনকি অভিযোগ উঠেছে, যারা শতভাগ নিরপেক্ষ তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই সাধারণ ভোটারদের কাছে এমন দলভিত্তিক ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না।

ইসির সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নীতিমালা অনুযায়ী কর্মদক্ষ, নিরপেক্ষ ও সৎ কর্মকর্তা এবং শিক্ষকদের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সরাসরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের দক্ষতা, সততা, সাহস ও নিরপেক্ষতার দিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

তাদের দক্ষতা, সততা, সাহস ও নিরপেক্ষতার ওপরই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান অনেকাংশে নির্ভরশীল। এসব কর্মকর্তার নিয়োগের প্যানেল প্রস্তুতের সময়ে যথাসম্ভব তাদের পদমর্যাদা, জ্যেষ্ঠতা, বেতন স্কেল ও মূল বেতন বিবেচনা করতে হবে। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার নামের প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। পরে কিছু কর্মকর্তার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়। তবে পুরো বিষয়টি রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কার্যত কিছুই করার নেই।

জানা গেছে, দোহার উপজেলায় ৭৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৩৪৩ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৬৮৬ জন পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য বাছাই চূড়ান্ত করা হয়েছে। অপরদিকে নবাববগঞ্জ উপজেলার জন্য ১০৩ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৪৮৭ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৯৭৪ জন পোলিং কর্মকর্তা বাছাই চূড়ান্ত করা হয়েছে। দুই উপজেলার ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় ভোটারদের অভিযোগ, আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের ফল সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রশাসনকে ব্যবহার করে দলবাজ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে যেসব কেন্দ্রে তারা বেশি মাত্রায় ভোট কারচুপি করতে চান সেখানে একেবারে দলের পরীক্ষিত কর্মকর্তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। এ অবস্থায় গুরুতর এ অনিয়মের দায় সংশ্লিষ্ট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা এড়াতে পারবেন না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলার ডিসি আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। এখানে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। তিনি জানান, ইতিমধ্যে আমরা তাদের প্রশিক্ষণ কাজও শেষ করেছি।’ দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়ার প্রশ্নে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে ডিসি বলেন, ‘আমরা নিয়মের বাইরে কিছু করেনি’

প্রসঙ্গত, নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসন। এ আসনে রয়েছে ১৭৮টি ভোট কেন্দ্র ও ৮৩০টি ভোটকক্ষ। এতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪০ হাজার ২৮৭ জন। এর মধ্যে দোহার উপজেলায় ৭৫টি কেন্দ্র ও ৩৪৩টি ভোটকক্ষ এবং ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৩৪৩ জন। অপরদিকে নবাবগঞ্জ উপজেলায় ১০৩টি ভোট কেন্দ্র ও ৪৮৭টি ভোটকক্ষ এবং ভোটার আছেন ২ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৪ জন।যুগান্তর

Check Also

তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : তাবলীগ জামাতে সাদপন্থীদের বর্বোরিচত হামলার প্রতিবাদ ও সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।