নিখোঁজ চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা

• সংবাদ সম্মেলনের এক দিন পর নাশকতা মামলায় গ্রেপ্তার
• চার শিক্ষার্থীকে বৃহস্পতিবার তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ
• তুলে নিয়ে যাওয়ার পাঁচ দিন পর আদালতে উপস্থাপন
• কবে কোথা থেকে গ্রেপ্তার, সে তথ্য এড়িয়ে যাচ্ছে পুলিশ
• তাঁতী লীগের নির্বাচনী অফিসে হামলার অভিযোগ
• স্বজনেরা বলছেন, অন্যায়ভাবে ছেলেদের জড়ানো হয়েছে

ক্রাইমর্বাতা রিপোট :   তুলে নিয়ে যাওয়ার পাঁচ দিন পর গতকাল বুধবার বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় আদালতে উপস্থাপন করেছে কাফরুল থানার পুলিশ। শিক্ষার্থীদের পক্ষে করা জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃত ওই চার শিক্ষার্থী আবু খালেদ মো. জাবেদ, বোরহান উদ্দিন, রেজাউল খালেক ও সৈয়দ মমিনুল হাসানকে গত বৃহস্পতিবার ‘ডিবি’ পরচিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। মঙ্গলবার সকালে তাঁদের অভিভাবকেরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে সন্তানদের সন্ধান দাবি করেন। তাঁরা জানান, বৃহস্পতিবার চার বন্ধু আজিজ সুপার মার্কেট থেকে কেনাকাটা সেরে বাসে মিরপুরে ফিরছিলেন। ফার্মগেটে বাস থেকে সাদাপোশাকের পুলিশ তাঁদের নামিয়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাঁদের হেফাজতে রাখার কথা ক্রমাগত অস্বীকার করে আসছিল পুলিশ।

গ্রেপ্তার শিক্ষার্থী সৈয়দ মমিনুল হাসানের বড় ভাই সৈয়দ ইদরাক গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি মামলাসহ ডিবি পুলিশ চারজনকে কাফরুল থানায় দিয়ে যায় মঙ্গলবার রাতে। তারা (রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ থাকা শিক্ষার্থীরা) কাফরুল থানার পুলিশের নম্বর থেকে ফোন করে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারপরই আমরা জানতে পারলাম তারা বেঁচে আছে। তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক (বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ) আইনে মামলা দিয়েছে।’ শিক্ষার্থীদের স্বজনেরা বলছেন, অন্যায়ভাবে তাঁদের ছেলেদের মামলায় জড়ানো হয়েছে।

কাফরুল থানার পুলিশ আদালতে যে কাগজপত্র জমা দিয়েছে, সেখানে এই চার শিক্ষার্থীকে বিএনপি–জামাতের সক্রিয় সদস্য, ‘দেশে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটনকারী’, সন্ত্রাসী ও বোমাবাজ দুষ্কৃতকারী দলের সক্রিয় সদস্য বলে উল্লেখ করেছে। পুলিশ বলেছে, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সহযোগীদের নিয়ে বোমা, ককটেল তৈরি ও এগুলো হেফাজতে রাখতেন। তাঁরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য বিভিন্ন সময় যানবাহনের ওপর পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে জনগণের জানমালের ক্ষতি করে আসছিলেন। গত ১৭ ডিসেম্বর রাত ৯টা ২০ মিনিটে বাইশটেকী, হাজী জব্বারের বাড়ির সামনে তাঁতী লীগের নির্বাচনী অফিসে তাঁরাই হামলা চালান। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল ইউসুফ হাওলাদার, রফিকুল ইসলামদের হত্যা করা। সে জন্য তাঁদের এলোপাতাড়ি মারধর করেন আসামিরা। পরে পেট্রলবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। মামলার ঘটনার বিষয়ে এই আসামিদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আসামিরা যে তথ্য দিয়েছেন, সেগুলো যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে। অমিল পাওয়া গেলে আসামিদের রিমান্ডে পেতে পুলিশ আবেদন করবে।

গ্রেপ্তার চার শিক্ষার্থীর মধ্যে আবু খালেদ মোহাম্মদ জাবেদ (২৫) এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগ, বোরহান উদ্দীন স্ট্যাম্পফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগ, রেজাউল খালেক মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। মমিনুল হাসান সদ্য ইউনানি আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন।

আসামিদের কোথা থেকে কবে গ্রেপ্তার করা হলো এবং নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ কী তথ্য পেল, জানতে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার মো. শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। খুদে বার্তা দিয়ে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। কাফরুল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসলামউদ্দীন বলেন, তিনি এ বিষয়ে জানেন না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানেন। জিল্লুর রহমান ফোনও ধরেননি।প্রথম আলো

Please follow and like us:

Check Also

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বেনজীর আহমেদের সম্পদের তথ্য চাইল দুদক

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।