ক্রাইমবার্তাডেক্সঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের আমেজ কাটতে না কাটতেই উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও আগেভাগেই মাঠে নেমে পড়েছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। পাঁচ দফায় ৪৮১ উপজেলায় অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনেও বড় জয় চায় ক্ষমতাসীনরা। শিগগিরই প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হবে বলে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায় সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৪ সালে ৬ দফায় সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনের পরই আইন সংশোধন করার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনই দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে না পারলেও তৃণমূল কমিটিকে চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ তিনজন প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কবে নাগাদ পাঠাতে হবে তা সুনির্দিষ্ট না থাকলেও নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলেই কেন্দ্র থেকে এ ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, ভোটের মাঠে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি বা দলটির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ঐক্যফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবেÑ এমনটা ধরে নিয়েই আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়গুলো সামনে রেখে উপজেলা নির্বাচনেও জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়ার কথা ভাবছে ক্ষমতাসীনরা। তৃণমূল কমিটির সুপারিশের বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে দেখবে কেন্দ্র। নির্বাচন কমিশন উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পরই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। তবে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা তফসিল ঘোষণার আগেই প্রাথমিকভাবে খসড়া করে রাখা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনের আগে দলীয় কোন্দল নিরসনে কঠোর উদ্যোগ নেয়ার চিন্তা করছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের অনেক এলাকায় সংসদ সদস্যদের সাথে বিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে উপজেলা চেয়ারম্যানদের। অতীতের তুলনায় এবার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে বিরোধ ছিল চরমে। অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ মাঠেও গড়ায়। উপজেলা চেয়ারম্যানরা সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন না বলে দলের শীর্ষপর্যায় থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়। তবুও অনেক জেলা ও উপজেলায় বিরোধ এখনো থামেনি। সংসদ সদস্যদের সাথে প্রকাশ্যে বিরোধের কারণে উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে যেন খেসারত দিতে না হয়, সেজন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়পর্যায় থেকে দলীয় কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বৈরিতা কাটানোর জন্য ভোল পাল্টাতে শুরু করেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকেই। তারা দলীয় মনোনয়ন পেতে এমপিদের কাছে ঘেঁষতে শুরু করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ নয়া দিগন্তকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনের জন্য দলীয়ভাবে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তৃণমূলে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। সরকার যেভাবে দেশের উন্নয়ন করে চলেছে তাতে দেশের মানুষ খুশি। উপজেলা নির্বাচনে মানুষ আমাদের প্রার্থীদেরই ভোট দেবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য লে. কর্নেল (অব:) ফারুক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, সব উপজেলায় আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উপজেলা ও জেলা কমিটির সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী দেবে। কোনো উপজেলায় যোগ্য প্রার্থী থাকলে জোটের শরিকদেরও মূল্যায়ন করা হবে।