জাকির হোসেন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা : নীলফামারীর সৈয়দপুরে স্বামী-স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এসময় দুর্বৃত্তের ছরিকাঘাতে আহত হয়েছেন আরও একজন। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের বালাপাড়াস্থ একটি খামার বাড়ি থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। নিহতরা হলেন, শেখ নজরুল ইসলাম (৬৫) ও তার স্ত্রী সালমা বেগম (৪৮)। তাদের বাড়ি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচন্ডী ইউনিয়নের সোনাপুকুর চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামে। অপর দিকে আহত ব্যক্তি আব্দুর রাজ্জাক (৪০) নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বাবুরহাট গ্রামের খয়রাত হোসেনের ছেলে। পুলিশ জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক কর্মচারী শেখ নজরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচন্ডী সোনাপুকুর গ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন থেকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা বেগমকে নিয়ে সৈয়দপুর শহরের বাঙ্গালীপুর নিজপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। শেখ নজরুল ইসলাম দুই বছর আগে খাতামধুপুর ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের আসলাম চৌধুরীর কাছ থেকে ২ একর জমি লিজ নিয়ে গরু-ছাগল ও ভেরার একটি খামার করেন তিনি। গত চারদিন আগে স্ত্রী সালমাকে নিয়ে খামার বাড়ি দেখতে আসেন নজরুল ইসলাম। সেই দিন থেকে খামার বাড়িতেই অবস্থান করছিলন স্বামী-স্ত্রী। সকালে খামার বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর রক্তাক্ত লাশ এবং খামারবাড়ির নৈশপ্রহরী আব্দুর রাজ্জাককে (৪০) গুরুতর আহত দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে। অপর দিকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত খামারের নৈশ্য প্রহরী আব্দুর রাজ্জাককে উদ্ধার করে প্রথমে সৈয়দপুর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর
নিহত শেখ নজরুল ইসলাম ও সালমা বেগমের ছেলে শেখ স্বপন আহমেদ (২২) জানান, ‘চার দিন আগে বাবা ও মা খামার বাড়িতে দেখা শুনার জন্য আসেন। সেই দিন থেকে এখানেই তারা অবস্থান করছিলেন। রোববার সকাল সোয়া সাতটার দিকে আমার মায়ের মোবাইল থেকে এই গ্রামের একজন মানুষ ফোন করে জানায় কে বা কারা তোমার বাবা-মাকে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে আর তোমাদের খামারের নৈশ্য প্রহরী আব্দুর রাজ্জাক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এমন ফোন পেয়ে আমি আমার বড় ভাই খামার বাড়িতে এসে দেখি আমার বাবা-মায়ের লাশ পড়ে আছে। আর আমাদের খামারের নৈশ্য প্রহরী আব্দুর রাজ্জাক রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছে।’
তিনি আরো জানান, ‘দুই বছর আগে খাতামধুপুর ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের আসলাম চৌধুরীর কাছ থেকে ২ একর জমি পাঁচ বছরের চুক্তিতে নিয়ে একটি খামার তৈরি করেন আমার বাবা শেখ নজরুল ইসলাম। কিছু দিন আগে আসলাম চৌধুরীর ছেলেরা তাদের জমি ফেরত নেওয়ার আমাদের চাপ প্রয়োগ করে। আমরা রাজি না হওয়ায় তারা আমাদের হুমকি দিয়ে আসছিল।’
তিনি আরো বলেন,‘এঘটনার সাথে কে বা কারা জড়িত তা আমি জানিনা। তবে আমাদের খামারের নৈশ্য প্রহরী আহত হয়ে হাসপাতালে আছে সে বিষটি বলতে পারবে, কারণ রাজ্জাককে যখন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল সে বলেছে আমাকে বাঁচান আমি সব বলতে পারবো।’
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহজাহান জানান,‘ হত্যাকান্ডটি রোববার গভীর রাতে ঘটতে পারে। দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা মগে পাঠানো হয়েছে। অপর দিকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে গুরুত্বর আহত খামারের নৈশ্য প্রহরী আব্দুর রাজ্জাককে উদ্ধার করে প্রথমে সৈয়দপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে।
এঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জমির মালিক আসলাম চৌধুরী (৬০), তার দুই ছেলে সজল ও লাবু , গোয়ালা আব্দুর রশিদ, আব্দুল আজিজ এবং কাজের মহিলা রহিমা বেগম নামের এক নারীকে আটক করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
নীলফামারী পুলিশ সুপার আশরাফ আলী জানান, এই হত্যাকান্ড মর্মান্তিক। তদন্ত অব্যহত রয়েছে, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।
এদিকে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জয়নুল বারী, জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন, পুলিশ সুপার আশরাফ আলী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন বলে জানান ওসি শাহজাহান পাশা।