ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোঃ সরকার ও দলের ভারসাম্য রক্ষায় নতুনভাবে চিন্তা করছে আওয়ামী লীগ। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের রয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। তেমনিভাবে তৃণমূলের কোন্দল মিটিয়ে দেশব্যাপী সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আরো গতি আনতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতাদের কাজে লাগানোর কথা ভাবছে দলটি। এ জন্য আগামী সম্মেলনের আগেভাগেই সরকারের বাইরে থাকা দলীয় নেতাদের মূল্যায়নের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে বলে নীতিনির্ধারণী পর্যায় সূত্রে জানা গেছে।
শীর্ষ নেতারা মনে করেন, দল ও সরকার সমান্তরালভাবে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা কাজ করবেন। তবে মন্ত্রী-এমপিরা চাইলেই যখন তখন খুব সহজেই সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তৃণমূলে পৌঁছতে সক্ষম হন না; কিন্তু দলের নেতাকর্মীরা চাইলেই যেকোনো সময়ে সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পৌঁছে দিতে সক্ষম। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন এখনো পর্যন্ত তৃণমূলে সেভাবে প্রচার হচ্ছে না। তাই বিশেষ দায়িত্ব হিসেবে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য দলীয়ভাবে ভিন্ন ও নতুন পরিকল্পনা নিয়ে সামনের দিকে এগোতে চায় আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি সরকারের সুযোগ-সুবিধা তৃণমূলের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য দলীয়ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা মনে করেন, দলকে সরকার থেকে যতটুকু সম্ভব আলাদাভাবে পরিচালনার জন্য নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আরো গতিশীল করতে এবং সরকার ও দলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকারের বাইরে থাকা নেতাদের বিষয়টি আওয়ামী লীগ প্রধানের বিবেচনার মধ্যে রয়েছে। যদিও দলীয় সরকারের আমলে দল ভিন্নভাবে পরিচালনা করা কঠিন কাজ।
সূত্র জানায়, টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক এলাকায় উপদলীয় কোন্দল ও রেষারেষিতে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দল সরকারের সাথে মিশে গেছে। ফলে সেসব এলাকায় দিবসভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে সাংগঠনিক তৎপরতা কম। ওই সব এলাকা শক্তিশালী করতেও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর দলটির তিন বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। ফলে চলতি বছরের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর চিন্তা করা হচ্ছে। সরকার থেকে দলের ‘আলাদা সত্তা’ বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি বলেও সম্প্রতি যুক্তি তুলে ধরেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আগামী অক্টোবর মাসেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হবে। এর আগে কাউন্সিল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগামী ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে আওয়ামী লীগ সরকার। এর আগেই দলকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দলকে নতুন সরকার থেকে যতটুকু সম্ভব আলাদা করার পরিকল্পনা আছে দলটির। তবে দল ও সরকার সমান্তরালভাবে সাম্যঞ্জস্য রেখে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে আওয়ামী লীগ। শুধু তৃণমূলকে সুসংগঠিত করে গত নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় ছয় নেতাকে আগামী সম্মেলনে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হবে। তারা হলেনÑ জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এর বাইরেও আরো কিছু এমপি ও নেতা আছেন যাদের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে ছোট-বড় দায়িত্ব দিয়ে তুলে আনার চিন্তা করা হচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভা গত ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতিবিষয়ক উপদেষ্ট এইচ টি ইমাম ওই ছয় নেতার গত নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই নেতাদের আগামীতে মূল্যায়ন করার কথা জানান।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ নয়া দিগন্তকে বলেন, দল ও সরকার সমান্তরাল গতিতে চলবে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য দলের যারা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকেন, তারাও পরিচালনা করতে পারেন। কিছুটা বিঘœ ঘটতে পারে। তবে তেমন বড় কোনো সমস্যা হয় না।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, দল ও সরকার আলাদাভাবে পরিচালনা করা খুবই কঠিন। দলের নেতাকর্মীরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করবেনÑ এটাই স্বাভাবিক। দল ও সরকার আলাদাভাবে পরিচালনা করার ব্যাপারে এখনো কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তৃণমূলকে শক্তিশালী করার জন্য কিছু পরিকল্পনা দলের সব সময় থাকে। তা ছাড়া গত নির্বাচনে কেন্দ্রের যেসব নেতা এমপি নির্বাচন না করে দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ওই নেতাদের বিশেষভাবে মূল্যায়ন করার কথা বলেছেন।