আবু সাঈদ বিশ্বাস, ক্রাইমর্বাতা র্রিপোট: (সাতক্ষীরা): সময়ের আগেই স্বর্ণালি মুকুলে ভরে গেছে সাতক্ষীরার আম বাগান। গাছে গাছে ঝুলছে আমের মুকুল। পৌষের আমন্ত্রণে আসা আগাম মুকুল মাঘকে স্বাগত জানিয়ে আম চাষীদের মনে আশার আলো সঞ্চালন করেছে। তবে আগাম মুকুল দেখে আম চাষিরা অনেকে খুশি হলেও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, শীত বিদায় নেওয়ার আগেই আমের মুকুল আসা ভালো নয়। এখন ঘন কুয়াশা পড়লে বা বৃষ্টি হলে গাছে আগে ভাগে আসা মুকুল চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা ফলনেও প্রভাব ফেলবে।
আমের মুকুলে তাই এখন মৌমাছির গুঞ্জন। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ যেন জাদুর মতো কাছে টানছে তাদের। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় তাই চলছে ভ্রমরের সুর ব্যঞ্জনা। শীতে স্নিগ্ধতার মধ্যেই শোভা ছড়াচ্ছে স্বার্ণালি মুকুল। বছর ঘুরে আবারও তাই ব্যাকুল হয়ে উঠেছে আমপ্রেমীদের মন।
তবে জেলার মাঠে-ঘাটে পথে-প্রান্তরে চোখ মেলে সদ্য মুকুল ফোটার এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য সকলেরই মণ কাড়ছে।
এ জেলার আমের স্বাদের প্রশংসা বিদেশেও। এবার বাম্পার ফলন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রচুর আম রফতানির আশা চাষিদের। সেই লক্ষ্যে সনাতন পদ্ধতির বদলে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত আম চাষিরা।
জেলার অলি-গলি, আনাচে-কানাচে, খেতে-খামারে, আগানে-বাগানে সবখানে যেন আমের মুকুলে শোভা ছড়াচ্ছে। আর কিছু দিন পরেই সাতক্ষীরার বাজারে গুটি আম উঠতে শুরু করবে। এখন মৌসুমি আম ক্ষেত কোনা বেচা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষী, মালিক ও ব্যবসায়ীরা। ক্ষেত ইজারা নিয়ে আম চাষ করছে অনেকে। চলতি মৌসুমে এ জেলার প্রায় লক্ষাধীক নারী –পুরুষ আম চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে।
আগাম মুকুল আসায় জেলা কৃষি বিভাগ এখনো আম চাষের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারিনি। তারা বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই চলতি বছরে আম উৎপাদনের টার্গেট নির্ধারণ করা হবে। তবে গত বছর এ জেলাতে আমের চাষ হয়েছিল ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর রেকর্ড পরিমান আমের চাষ হবে আশা সংশ্লিষ্টদের।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সাতক্ষীরার চাহিদা মিটিয়ে এ বছর প্রচুর আম দেশ-বিদেশে রফতানি হবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,গত মৌসুমে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১১৯৫ হেক্টর জমিতে, কলারোয়া উপজেলায় ৬০২ হেক্টর, তালা উপজেলায় ৭০৫ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ৩৬৮ হেক্টর কালিগঞ্জ উপজেলায় ৮০৫ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১২৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায়ং ১৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়ে ছিল।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে আমের বাগন ছিল ১৫৩০টি, কলারোয়ায় ১৩১০টি, তালায় ১৪৫০টি, দেবহাটায় ৪৭৫টি, কালিগঞ্জে ১৪২টি, আশাশুনিতে ১৯০টি ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৫০টি ।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের তুলনায় একটু আগেই বাজারে আসে সাতক্ষীরার আম। মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে এ জেলার আমের স্বাদও আলাদা। হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোবিন্দভোগ, আ¤্রপালি, মল্টিকা, সিঁদুর রাঙা, ফজলির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও।
অন্যান্য জেলার থেকে সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। এ জেলার মাটি আম চাষের উপযোগী। গত ৫ বছর ধরে এ জেলার আম ইউরোপে রফতানি হচ্ছে। এবারও বাগান পরিচর্যা করা হচ্ছে বিদেশে আম পাঠানোর জন্য। বিশেষ করে হিমসাগর ও ন্যাংড়া। আম চাষিদের দাবির প্রেক্ষিতে চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আম যাতে বিদেশে যেতে কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ,জানালেন কৃষি কর্মকতা।
জেলার তালা উপজেলার খষিখালি এলাকার এলাকার আম ব্যবসায়ী রকিব শেখ বলেন, মাঘের শেষে ফেব্র্রুুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে আমের মুকুল আসার কথা থাকলেও এবার প্যায় এক মাস আগে মধ্য জানুয়ারিতেই গাছে মুকুল এসেছে। তার প্রায় শতাধীক আম গাছে মুকুল এসেছে।
সাতক্ষীরা ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘এবার শীত কম। তাপমাত্রা বেশি। একারণেই আগাম মুকুল এসেছে। ঘন কুয়াশা বা শৈত্য প্রবাহনামলে আগাম মুকুল ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এখন তাপমাত্রা স্বাভাবিক আছে। আবহাওয়া শেষ পর্যন্তএ রকম থাকলে আমের ফলনে কোনো সমস্যা হবে হবে না বলে আশা করা হচ্ছে।’
কলারোয়া এলাকার আম চাষী বাহাদুর রহমান বলেন, আগাম মুকুল দেখা পাওয়ায় মনটা ভালোই লাগছে। তবে এ মুকুল টিকে থাকলে এবার বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে। তবে ঘন কুয়াশা দেখা দিলে আমের মুকুল পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে আবার ক্ষতির আশঙ্কায় রয়ে যায়। তবে আমের আগাম মুকুলে কৃষকদের মনে আশার প্রদীপ জ্বলছে বলে দাবি করেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, মাঘে আম গাছে মুকুল আসার সাথে সাথে চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মুকুল ধরার পর বালাই নাশক ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আমের ঝাজরা পোকার দমনে চাষীদের করণীয় সম্পর্কে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, সাতক্ষীরার আম সারা দেশে সুখ্যাতি রয়েছে। এবছরও জেলার আম চাষীদের প্রয়োগজীয় সহযোগীতা করা হবে। বিদেশে আমা পাঠানোর ব্যাপারেও সাতক্ষীরা প্রশাসন যা যা করণীয় তাই করবে।