খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন — মঈন খান # নির্বাচনের নামে ২৯ ডিসেম্বর রাতে ডাকাতি হয়েছে —মান্না

ক্রাইমবার্তা ডেস্ক  রিপোটঃ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে কাবু করতে হলে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, কারাগারে বন্দী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করতে হবে। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীকে অনুরোধ করবো, আপনারা ধৈয্য ধারণ করুন, আপনারা ঠান্ডা মাথায় থাকুন। আপনারা গণতন্ত্রের পথে থাকুন, আপনারা শান্তির পথে থাকুন। নিশ্চয়ই আমরা বিজয় ছিনিয়ে আনবো। সরকারের বিরুদ্ধে ‘ঠা-া মাথায় বাস্তবধর্মী আন্দোলন’ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির এই নীতি নির্ধারক।

সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ভবনের স্বাধীনতা মিলনায়তনে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের উদ্যোগে ‘৩০ ডিসেম্বর এবং অত:পর’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। ছাড়া বিএনপির মোশাররফ হোসেন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, শাহ নেসারুল হক, শাহরিয়া ইসলাম শায়লা, ফরিদউদ্দিন, শাহজাহান মিয়া সম্রাট, ভিপি ইব্রাহিম, মিয়া মো. আনোয়ার, ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মঈন খান বলেন, আজকে শোষক-শাসক সমাজ বাংলাদেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে সেখানে কারো জীবন নিরাপদ না। কারো জীবনের কোনো স্বাধীনতা নাই, এখানে কথা বলার স্বাধীনতা নাই। কেউ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের (সরকার) মেজাজ খারাপ হয়। হুমকি-ধমকি দেয়। মামলা-হামলার কথা না-ই বা বললাম। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের একটি মাত্র উপায় শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই সরকারকে বিদায় দিতে হবে। এই সরকারকে বিদায় দিতে হলে যে আন্দোলনের কথা এখানে আলোচনা হয়েছে, সেই আন্দোলন আমাদের করতে হবে ঠা-া মাথায়। বাস্তবধর্মী পরিকল্পনার মাধ্যমে।

মঈন খান বলেন, বিগত ১০ বছরে বর্তমান স্বৈরাচারি শাসনামলে কত হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে। কেনো জীবন দিয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে? আজকে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। তার কী অপরাধ? তার একটি মাত্র অপরাধ তিনি এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। আজকের সরকারের সঙ্গে পূর্ববর্তী স্বৈর শাসকদের সঙ্গে গুনগত ব্যবধান আছে। আজকের আন্দোলনের সঙ্গে ’৫২,’৬৯, ’৯০‘র আন্দোলনের সঙ্গে গুনগত ফারাক থাকতে হবে। যদি সেই ফারাক না থাকে তাহলে কিন্তু এই আন্দোলন সফল হবে না। আমি হুট করে রাস্তায় নেমে দুইটা শ্লোগান দিলাম, গুলীতে প্রাণ হারালাম। এই সরকার কিন্তু আপনাকে ছাড়বে না। ওই সরকারকে কাবু করতে হলে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করেছি।

কারাগারে বন্দী খালেদা জিয়াকে মুক্তি করেই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘‘বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীকে অনুরোধ করবো, আপনারা ধৈয্য ধারণ করুন, আপনারা ঠা-া মাথায় থাকুন। আপনারা গণতন্ত্রের পথে থাকুন, আপনারা শান্তির পথে থাকুন। নিশ্চয়ই আমরা বিজয় ছিনিয়ে আনবো।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে লড়াই করতে হবে। তার কোনো বিকল্প নেই। আমরা লড়াই কী করতে পেরেছি, সেই লড়াই কী বেগম জিয়ার মুক্তির লড়াই, সেই লড়াই বাংলাদেশের মুক্তির লড়াই, সেই লড়াই এখন পর্যন্ত হাজার হাজার নেতা-কর্মী যারা জেলে আছেন তাদের মুক্তির লড়াই। আমরা জানি যারা এখন ক্ষমতায় আছেন তারা নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন। খুব স্পষ্ট যে, এই সরকারের কাছে করুণা ভিক্ষা করি না আমরা, এই সরকারের কাছে কোনো সতব্যবহার প্রত্যাশা করি না। আমরা মনে করি, আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি যা পাবো আদায় করে নিতে হবে, করুণা করে কিছু পাওয়া যাবে না। আন্দোলন করতেই হবে।

তিনি বলেন, একাদশ নির্বাচন করেছে পুলিশ। আওয়ামী লীগ নাই। আওয়ামী লীগ নামের একটা সংগঠন এদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, আওয়ামী লীগ নামের একটা সংগঠন এতোগুলো বছর ধরে ৫০ বছর পার করবার পরে সারা দেশে পরপর দুইবার- তিনবার করে ক্ষমতায় থাকতে সেই রাজনৈতিক দলের কোনো অস্তিত্ব আছে এখন। আজকে (বুধবার) একটি পত্রিকায় দুই মন্ত্রীর ছবি দিয়েছে। তারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে তর্কবির্তক করছেন। যেটা চকবাজার অগ্নিকান্ডের ঘটনা নিয়ে। আমির হোসেন আমুকে দোষারোপ করেছেন দিলীপ বড়ুয়া আবার আমির হোসেন আমু দিলীপ বড়ুয়াকে পাল্টা দোষারোপ করেছেন। দুই শিল্পমন্ত্রীর এই দশা এবং বতর্মান শিল্প মন্ত্রী আর কথা বলেননি। কারণ বর্তমান শিল্পমন্ত্রী একবার একটা কথা বলেছেন যেটা (অগ্নিকা-) সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হয়েছে। কেউ প্রমাণ করতে পারেনি, কেউ পক্ষে বলেনি।

মান্না বলেন. ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি অনন্য দিন। নির্বাচনের নামে এই ধরনের ডাকাতি বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর কোথাও হয়নি। এটা ঠিকই ৩০ তারিখ নির্বাচনই হয়নি। নির্বাচনের নামে ২৯ তারিখ রাতে ডাকাতি হয়েছে। এটা কে না জানে একজন শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্য়ন্ত সবাই জানে- এই সরকার নির্বাচিত নয়। এই সরকার যে ক্ষমতায় আছে তার কোনো বৈধ্যতা নাই। তারা যেসব কাজ করছে এগুলোকে কোনো স্বসিদ্ধ, নিয়মসিদ্ধ, আইনসিদ্ধ বলা যায় না। এই সরকারি দলের কোনো সমর্থন নাই। তাই মানুষ আপনাদের(বিরোধী দল) পক্ষেই আছে। আমাদের সেই আন্দোলন করতে হবে যাতে সরকার আমাদের দাবি মানতে বাধ্য হয়।

Please follow and like us:

Check Also

২৮শে এপ্রিল খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারেও ক্লাসের পরিকল্পনা

আগামী ২৮শে এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।