সাতক্ষীরার জননন্দিত এম পি জামায়াত নেতা এম রিয়াছাত আলীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মাওলানা রিয়াছাত আলীর অজানা কথা
মাওলানা রিয়াছাত আলী দেশের অনুপ্রেরণা :
মাওলানা রিয়াছাত আলীর জীবনীর মধ্যে আদর্শ মানুষের সুচিগাথা
মাওলানা রিয়াছাত আলীর রেখে যাওয়া পথ হতে পারে রাজনৈতিক ঐক্য৷ দুনিয়ার জীবনকে যারা আখেরাতের বিনিময়ে বিক্রয় করে দেন তারা জান্নাতি। যাদের চোখের পানিতে রাতের জায়নামাজের বিছানা ভিজে যায় আর দিনের বেলা কাটে ইসলামের খেদমতে। যাদের ঘুমের মধ্যে কোরআন তেলওয়াত শোনা যেত নিশ্চয় তারা কামিয়াবী। এমন এক জন মানব দরদী ছিলেন দক্ষিণ বঙ্গের শ্রেষ্ঠ আলেম বার বার নির্বাচিত এমপি মাওলানা রিয়াছাত আলী। ২০১৬ সালের ১০ মার্চ সবাইকে কাঁদিয়ে তিনি পরলোক গমন করেন।লেখা হচ্ছে তাকে নিয়ে স্মরনিকা৷ তাকে হারিয়ে গোটা সাতক্ষীরার ইসলামী আন্দোলন যেন পথ হারা প্রতীকের মত। স্তব্ধ সাতক্ষীরা। শ্রোদ্ধা ভরে এখনো তাঁকে সরণ করছে সাতক্ষীরার ২০ লক্ষ মানুষ। বিপদে-আপদে সবাই তার কাছে যেতেন। অসুখ-বিশুখ হলে তাঁর কাছে যেতেন দোয়া নিতে। এমনকি হিন্দু সম্পদায়ের লোকেরাও হুজুরের কাছে পানি পড়া নিতে যেতেন। তিনি নিজেকে বড় কিছু মনে না করলে দক্ষিঞ্চালের মানুষ তাকে পীর হিসেবে চিহ্ন। তাঁকে সরণ করতে চাই যেন গোটা দেশ। তাই এবার তাঁকে সরণী করে রাখতে স্মরনীকা বের করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
দক্ষিণ বাংলার অন্যতম
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সাবেক সংসদ সদস্য ও বিখ্যাত আলেমে দ্বীন, প্রবীণ রাজনীতিবিদ, কেন্দ্রী জামায়াতে ইসলামীর শূরা সদস্য ছিলেন মাওলানা এ এম রিয়াছাত আলী বিশ্বাস । ২০১৬ সালের ১০ মার্চ বৃহস্পতিবার বেলা ১০টা ৫৮ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে হৃদরাগে আক্রান্ত হয়ে আশাশুনি উপজেলার কুড়িকাউনিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি ইন্তিকাল করেন। ৮৪ বছর বয়সে তিনি ৩ ছেলে ৫ মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান।
মাওলানা এম রিয়াছাত আলী বিশ্বাস ১৯৩2 সালে ২৮ ডিসেম্বর আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া গ্রামের এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মৃত জনাব আলী বিশ্বস ও মাতা মৃত রাহিলা খাতুন।
ছাত্র জীবন : মাওলানা এ এম রিয়াছাত আলী বিশ্বাস ১৯৪৬ সালে শ্যামনগর উপজেলার পাতাখালী মাদরাসা থেকে ৮ম শ্রেণী ও ১৯৪৮ সালে একই মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেন। ১৯50 সালে বাগেরহাট জেলার সোনাতুনিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে আলিম ও1952 ফাজিল পাস করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে বরিশাল শরশিনা কামিল মাদরাসা থেকে হাদিসের ওপর কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজনৈতিক জীবন : মাওলানা এ এম রিয়াছাত আলী বিশ্বস ১৯৫৮ ও ১৯৬৩ সালে প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বর্ণ পদক লাভ করেন। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়নে সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি) আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য ও ২০০১ সালে চার দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে একই আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ সরকারে অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বাচাইকৃত ৪ সদস্য বিশিষ্ট্য কমিটির চেয়ারম্যান থাকাকালীন বাংলাদেশে র‍্যব গঠনের অন্যতম প্রস্তাবক ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে তৎকালীন সরকারের বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৫৮-হতে -১৯৬৪ পর্যন্ত প্রতাপনগর মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল, ১৯৬৫-১৯৬৮ ঘুগরাকিিট ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ১৯৬৮-১৯৭১ পর্যন্ত প্রতাপনগর হাইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষক ১৯৭৩-১৯৭৭ ঘুগরাকটি ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ১৯৭৭-১৯৯৩ পর্যন্ত আবার প্রতাপনগর ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি সংসদ থাকা কালিন আশাশুনি উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। প্রায় ৫৭ কটি টাকার রাস্তা ঘাট করেন। প্রতিটি ইউনিয়নের সংযোগ রাস্তা সহ উপজেলার সকল গুরুত্ব পূর্ন রাস্তা তার আমলে নির্মিত। আশাশুনি ব্রিজ, তেতুলিয়া ব্রিজ, মানিকখালী ব্রিজ কাজ শুরু তার আবদান।
উপজেলা পরষিদ ভবন, হাসপাতাল ভবন, বিভাগীয় এতিম কমপ্লেক্স এসবই তার অবদান। সাতক্ষীবা জেলায় পল্লি বিদুৎ এর ১৩২ কেভি সাবগ্রীট ও আশাশুনি উপজেলায় সাব-ষ্টেশন ও তার অবদান।এছাড়া উপজেলায় ১৫০ কিঃ মিঃ উপরে বিন্দুতের নুতন সংযোগ দেন। আশাশুনি উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার উন্নয়নের ছোয়া আছে।তিনি সরকারী ভাবে ২বার লন্ডন ও পাকিস্থান সফর করেন।
তার মেজ সন্তান নূরুল আবছার বলেন
 আব্বা যেখানে যেতে আমাকে প্রায় সাথে করে নিয়ে যেতেন। তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে শুরু করে মাহফিলে ষ্টেজ পর্যন্ত। প্রিন্সিপাল থাকা অবস্থা প্রতি বছর কিছু জমিজমা বানিয়েছেন। কিন্তু জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার পর, আর কোন সম্পদ বানাতে পারেননি। তিনি ছিলেন এমন একজন জন প্রতিনিধি যে,চেয়াম্যান থাকা কালিন প্রজেক্টের চাল বেচে গেলে তা সম্পূর্ন সরকারের কোষাগারে জমা দিতেন। যদিও এই জমা দেওয়াটা ছিল জটিল কাজ। তাই চেয়ারম্যান থাকা কালীন তখনকার প্রেসিডেন্ট তাকে ডেকে নিয়ে পুরুস্কৃত করেন এবং প্রেসিডেন্ট নিজ হাতে ডাব কেটে খাওয়ায়ে বলেন আপনার মতো চেয়ারম্যানরা এ জাতীর জন্য গর্ব। তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার পরও তার বসত বাড়ি থেকে গেল গোলের ছাউনি। বিলাসিতা দুরে থাক, তার বেতন ভাতার অধিকাংশ খরচ করতেন এলাকার উন্নয়নের পিছনে ছোটা-ছুটিতে, গরিব দুঃখির মাঝে ও ইসলামী আন্দোলনের পিছনে। প্রজেক্টের কমিশন দুরে থাক, সমান্যতম অবৈধ অর্থ বা সম্পদ তাকে কোন দিন স্পর্শ করতে পারেনি।
তিনি ছিলে একজন সৎ, যোগ্য, খোদাভিরু ইসলামী আন্দেলনের নেতা । তিনি সারা দিন জনগনের সেবা করে যখন রাতে বিশ্রামে যাতেন, তখন বোঝা যেত তিনি কেমন আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দা ছিল। রাতে প্রায় তার মাথা নুয়ে যেতো আল্লাহর দরবারে। তার সন্তান হিসাবে আমরা জানি তিনি যখন ঘুমেয়ে থাকতেন অধিকাংশ রাত ঘুমের মধ্যে সুললিত কন্ঠে কোরআন তেলায়াত করতেন। মাঝে মাঝে ঘুমের ভিতর নামাজ পড়তে যা বাস্তব নামাজের ন্যায়, যার ভিতর থাকতো রুকু, সেজদা, তাজবিহ সব কিছু । যেনে বুঝে কোন প্রকার অন্যায় মিথ্যার আশ্রয় তিনি কোন দিন নিতেন না। কাওকে উপকার করতে না পারলেও যেন তার দ্ধারা কারোর কোন ক্ষতি হোক এটা কোন দিন তিনি চাননি।
তিনি ছিলেন হিন্দুদের কাছে দেবতার মতো। এলাকার অধিকাংশ হিন্দু তাকে ভোট দিত। কারন ১৯৭১ সালে হিন্দুদের জন্য অনেক কিছু করেছিল। আমাদের বাড়ি ছিল তাদের আশ্রয়ের জায়গা। অনেকে যখন বাধ্য হয়ে ভারতে চলে যান ,তখন তারা  আব্বার কাছে তাদের সম্পদ গচ্ছিত রেখে যায়। পরবর্তিতে ফিরে এসে তারা আব্বা ছাড়া কারোর হতে তারা তাদের সেই আমানাত সঠিক ভাবে বুঝে পাই নাই। আমি দেখেছি আব্বার প্রতি মানুষের ভালবাসা- আমি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার সময়, আমাকে সঠিক ভাবে প্রশাসন কাজ করতে দেয় নাই। আমার জন্য যারা কাজ করেছে তাদেরকে ভোটের আগে হয় এলাকা ছাড়তে হয়েছে অথবা জেলে যেতে হয়েছে। এর পরও মাওঃ রিয়াছাত আলী সাহে্ের সন্তান এই পরিচয়ে জনগন আমাকে অন্ধের মত ব্যাপক ভোট দিয়ে বিজয় করেছিল। কিন্তু ফলাফল সরকার উলটায় দেয়। আব্বার ভাল বাসার প্রমান দেখেছি আব্বার জানাযায় লাক্ষ্য মানুষের ঢল। প্রসাশনের বাধা জনতার শ্রতে ভেষে যায়। হাজার হাজার হিন্দুকেও দেখেছি আব্বাকে শেষ বারের মতো একবার দেখতে। সাংবাদিক সহ বিশিষ্ট জনদের মন্ত^ব্য ছিল, কোন বিভাগিও শহরে এতো বড় জানাযা এই প্রথম। তা আবার একটি প্রত্যান্ত এলাকার গ্রামে। ৫০ হাজার লোকের মাঠ ছাপিয়ে এক কি: মি: বেশি এলাকার রাস্তা ঘাট, খেত খামার সব ছিল লোকে লোকারন্ন। আনুমানিক ১৫০০০০ লোকের সমাগম হয়েছিল। মাঠে কাতার দুরে থাক সবইকে বুকে বুক মিলায়ে যতদুর সম্ভব কাতার করে দাড়াতে বলা হয়েছিল। আমি দেখেছি মৃত্যুর ৩দিন পূর্বে যখন আমাকে জানানো হয় আব্বার মুমুর্ষ অবস্থার কথা, জেল খানার সবাই শোনার পর সকল বন্দিদের দোয়া ও চোখের পানি।
কিন্তু আমার জন্য দূর্ভাগ্য মৃত্যুর সময় আমি তার পাশে থাকতে পারি নাই। শেষ বার অসুস্থ্য হলে ঢাকা হতে ডাক্তার দেখায়ে এনে আমি আমার সাতক্ষীরার বাসায় রাখি। এ অবস্থায় সরকারের পুলিশ বাহিনী আসর নামাজ পড়ে মসজিদ হতে বের হলেই আমাকে গ্রেফতার করে। তবে এ বিচার আমি আল্লাহর আদালাতে দিয়ে রেখেছি, বলেছি আল্লাহ যাদের কারনে আমি আব্বার সেবার শেষ সুযোগটা পাই নাই , দুনিয়ার কোন রাজা বাদশা কারোর কাছে আমি বিচার চাইনা, এ অভিযোগ তোমার আদালতে দিয়ে রাখলাম।
আব্বা বড় ইচ্ছা ছিল আমি যেন তার জানাযা পড়তে পারি। আল্লাহ সেইচ্ছা পুরোন করলেন অলৌকিক ভাবে। ১০ মাচ/২০১৬ বৃহস্পতি বার ১২ টায় জেল খানায় বসে জানতে পারলাম যে, বেলা ১১টায় আব্বা দুনিয়া ছেড়ে চির বিদায় নিয়েছে। মুহুর্তে মধ্যে যেন জেল খানার সবকিছু থেমে গেল । শুধু দেখলাম বন্দিদের চোখের পানি । জেল কতৃপক্ষের এক জন দায়িত্বশীল ব্যাক্তি জনতার মাঝে এসে বল আপনারা সবাই ভেংগে পড়লে এম পি সাহেবের ছেলেকে কে সান্তনা দেবে। আমি বলরাম আমি ঠিক আছি আমাকে একটু একা থাকতে দেন। আমি আব্বার ইচ্ছা পুরনের অপেক্ষায় আছি। আমি আমার মন ভুরো শুধু আল্লাকে ডেকে বলেছিলাম তুমি আব্বার শেষ ইচ্ছাটা পুরুন করো। কিভাবে করবে আল্লাহ তা আমার জানা নাই। ১টার দিকে জানলাম আমার পারেলে মুক্তি হয়েছে কিন্তু শহরের বাইরে যাওয়া যাবে না। আব্বার কপিন শহরে এনে এখানে একটা জানাযার চন্তিা করছে। আমি বলে দিয়ে ছিলাম আব্বার কপিন যেনো বাড়ি হতে না আনা হয়। আল্লাহ হয় আব্বার ইচ্ছা পুরন করে আমাকে বাড়ী যাওয়ার ব্যবস্থা করবে ,নতুবা আমি সব কষ্ট মেনে নেব জেলে বসে। বিকাল ৪টায় খবর পেলাম আমার ৩দিনের জামিন হয়েছে। কতৃপক্ষ দ্রুত আমার বের করার সকল ব্যবস্থা নিয়ে মাগরিবের পূর্বে জেল হতে বের করে দিলেন।
জেল হতে বের হয়ে জানতে পারলাম এলাকা হতে আদালাতে আসা মানুষের আহাজারি এক জজ্ব সাহেবের চোখে পড়ে। সে আমার উকিলকে ডেকে জিঙ্গাসা করে কি হয়েছে, এত লোক কেন আপনার পিছনে কান্নাকাটি ছোটা-ছুটি করছে। উকিল সব ঘটনা বলার পর আল্লাহ জজ্ব সাহেবের বিবেক জাগিয়ে দেয়। এবং দ্রুত গতিতে আমার জামিন ও বের করার সকল ব্যবস্থা করেন। আমি দোয়া করি আল্লাহ এই জজ্ব সাহেব যেন এর সঠিক যাযা দেন। আমিন।

 

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।