যশোর ব্যুরো রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনে পুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন যশোরের মেয়ে শেখ জারিন তাসমিম বৃষ্টি (২৬)। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বামী কাজী সাদ নূরের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়।
এ সময় বৃষ্টি বলেন, আগুন আর ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
উত্তরে কাজী নূর বলেন, দৌড়ে উপরের দিকে চলে যাও।
১৮ তলায় অবস্থানকালে বৃষ্টি জানায়, ধোঁয়ার কারণে আর উপরে যেতে পারছি না। এ সময় পাশ থেকে এক সহকর্মী তাকে সান্ত্বনা দেন। তবে এরপর আর বৃষ্টির সাড়া পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার যশোরে এ কথাগুলো বলেন ঢাকার রিজেন্সি হোটেলের সহকারী ব্যবস্থাপক নূর।
অগ্নিকাণ্ডের সময় এফআর টাওয়ারের ১২ তলায় ইইউআর সার্ভিস বিডির অফিসে কর্মরত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ কর্মকর্তা বৃষ্টি।
শুক্রবার বেলা ২টা ১০ মিনিটে শহরের বেজপাড়া মেইন রোডের বাড়িতে বৃষ্টির লাশ পৌঁছে। এ সময় মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
দুপুরে শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড মসজিদে প্রথম এবং বাদআসর বেজপাড়া মসজিদে জানাজা শেষে কারবালা কবরস্থানে বৃষ্টির লাশ দাফন করা হয়।
শেখ মোজাহিদুল ইসলাম ও আছিয়া ইসলাম দম্পতির দুই মেয়ের মধ্যে ছোট ছিলেন বৃষ্টি।
বৃষ্টির বাবা মটরপার্টস ব্যবসায়ী শেখ মুজাহিদুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে তিনি বৃহস্পতিবার ঢাকায় যান। তিনদিন আগে তার মা গিয়েছিলেন ঢাকায়।
তিনি বলেন, বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ, এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। আমার মেয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।
বৃষ্টির বড় বোন সানজিদা ইসলাম ববি বলেন, আমার বোন খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল। শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০০৬ সালে এসএসসি ও ২০০৮ সালে এইচএসসি পাস করেন বৃষ্টি। এরপর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবসম্পদ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে প্রায় দুই বছর আগে ইইউআর সার্ভিস বিডি লিমিটেডের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগে তিনি যোগ দেন।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ২৬ মার্চ সহপাঠী যশোরের পুরনো কসবা এলাকার কাজী সাদ নূরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। চাকরির সুবাদে তারা ঢাকার খিলক্ষেতে বসবাস করত।
ববি আরও জানান, মাত্র দুদিন আগে তৃতীয় বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করেছিলেন বৃষ্টি-নূর দম্পতি। স্বামীর সঙ্গে তোলা ছবি ফেসবুকে দিয়ে বৃষ্টি হ্যাশট্যাগে লিখেছিলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, একসাথে ১০৯৫ দিন, শুভ বিবাহবার্ষিকী, ২৬ মার্চ মি ও মিসেস নূর।’