“আমি আর বাঁচবো না, আমার জন্য দোয়া করিও বাবা, তোমার খেয়াল রাখিও”

নীলফামারী সংবাদদাতা : “বাবা আমি আর বাঁচবো না, আমার জন্য দোয়া করিও, তোমার নিজের ও ভাইদের খেয়াল রাখিও।” তার পরেই বন্ধ হয়ে যায় রুমকীর ফোনটি।
বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার বনানীর এফ. আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ড চলাকালে বাবা আশরাফ আলীকে ফোন করে এসব কথা বলছিলেন নীলফামারীর রুমকী আক্তার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীর এফ. আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের সময় মারা যান রুমকী আক্তার ও তার স্বামী মাকসুদুর রহমান জেমী।
রুমকী নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের চেংমারী বিন্যাকুড়ি গ্রামের আশরাফ আলীর মেয়ে। তার স্বামী মাকসুদুর রহমান জেমি রাজধানী ঢাকা গেন্ডারিয়া এলাকার মৃত. মিজানুর রহমানের ছেলে।
গত ছয় বছর থেকে হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করছিলেন রুমকী ও মাকসুদ। চাকরির সুবাদেই গত তিন বছর আগে উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করেন রুমকী ও মাকসুদুর রহমান জেমি। রুমকী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে জানিয়েছে তার বড় চাচা জলঢাকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী।
হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রুমকী আক্তার ঐ প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগে এবং মাকসুদুর ট্যুর প্যাকেজ বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
শুক্রবার বেলা পনে ১১টার দিকে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের চেংমারী বিন্যাকুড়ি গ্রামস্থ রুমকীর বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির সামনের উঠোনে শোকাহত শত শত মানুষ বসে রয়েছেন। আর বাড়ির ভিতরে চলছে স্বজনদের আহাজারি।
দুপুর সোয়া বারোটায় একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে রুমকীর লাশ তার গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছলে শুরু হয় স্বজনদের আহাজারী। পরিবারের সদস্যদের সাথে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এলাকার হাজারো মানুষ।
এসময় কথা হয় রুমকীর বাবা আশরাফ আলী সাথে তিনি জানান,‘ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে আমার মোবাইলে ফোন কল করে মেয়ে  রুমকী। রুমকী জানায়,‘ তার অফিসে আগুন লেগেছে। গোটা অফিসে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। বাবা জানিনা বাঁচবো কিনা, দোয়া করিও, তোমার জামাইকে পাচ্ছিনা, জানিনা তোমাদের সাথে আমাদের দেখা হবে কিনা? বাবা তুমি নিজের প্রতি এবং ভাইয়াদের প্রতি খেয়াল রাখিও। ’ এমন ভাবে ১২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত আমার সাথে কথা হয় মেয়ের। এর পর থেকেই মেয়ের সাথে যোগযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মেয়ে ও তার স্বামীর কোন খোঁজ খবর না পাওয়ায় বিকালেই ঢাকার উদ্যেশে রওনা হই।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে রুমকীর এক দেবর (খালা শাশুরির ছেলে) ইমতিয়াজ আহমেদ ফোন করে জানায়,‘ রুমকী ও তাঁর স্বামী মাকসুদুর মারা গেছে।’ রুমকীর লাশ ঢাকা মেডিকেল আর মাকসুদুরের লাশ ইউনাইটেড হাসপাতালে। খবর পেয়ে প্রথমে মেয়ের লাশ ও পরে জামাইয়ের লাশ সনাক্ত করি।’
রুমকীর বড় ভাই রফিকুল ইসলাম রিকো জানান,‘ আমার দুই ভাই ও এক এক বোন। রুমকী আমাদের ছোটে বোন। বিন্যাকুড়ি এস.সি সরকার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, জলঢাকা রাবেয়া মহাবিদ্যালয় থেকে এইচ.এসসি, কারমাইকেল কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে অর্নাস এবং ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে মাস্টাস পাশ করে। পড়ালেখা শেষে র্দীঘ ছয় বছর থেকে ঢাকায় হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস ট্রাভেল এজেন্সিতে হিসাব বিভাগে কাজ করছে। তিন বছর আগে তার বিয়ে হয় মাকসুদুর রহমান জেমির সাথে। জেমিও ওই প্রতিষ্ঠানেই কাজ করে। ঢাকাতেই তারা থাকতো।’
রুমকীর মেজো ভাই রওশন আলী রনী জানান, গত বৃহষ্পতিবার দুপুরে অগ্নিকান্ডের সময় আমার বাবার ফোনে কল দেয় রুমকী। ছোট বোন রুমকীর ফোন পেয়ে বিকালেই বিমানে চরে ঢাকার উদ্যেশে যাত্রা করেন আমাদের বাবা। সন্ধ্যা পৌনে সাটতাটর দিকে রুমকীর এক দেবর আমাকে ফোন করে জানায়, ছোট বোন রুমকী এবং তাঁর স্বামী জেমি আর বেঁচে নেই।’
তিনি আরো জানান,‘ ছোট বোন রুমকী গত ১৫ মার্চ ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে। তিন দিন বাড়িতে থেকে ১৮ মার্চ ঢাকায় চলে যায় রুমকি। ঢাকা যাওয়ার সময় সে বলেছিল; ভাই ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসবো, এক সাথে সব ভাই বোন ঈদ করবো, দোয়া করিস  আমি যেন ভালো ভাবে ঢাকায় পৌঁছি। বোনের সেই সাধ আর পূর্ণ হলোনা। বোন বাড়িতে আসলো ঠিকই কিন্তু লাশ হয়ে।’
রুমকীর চাচাতো ভাই এম. শরীফুল ইসলাম জানান,‘ শুক্রবার বাদজুমা বাড়ীর সংলগ্ন মাঠে রুমকীর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশেই রুমকীকে দাফন করা হয়।
অপর দিকে একই সময় ঢাকার গেন্ডারিয়ায় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা রুমকীর স্বামী মাকসুদুর রহমান জেমিকে।’

Please follow and like us:

Check Also

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সম্মত ইইউ

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সোমবার ইউরোপীয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।