মনিরুল ইসলাম মনি :: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রাথী হিসেবে নির্বাচন করতে কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মেহেদী গত ২৬ ফেব্র“য়ারি উপজেলা নির্বাচন কমিশনারের কাছে দায়েরকৃত হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার বাজারগ্রাম রহিমপুরের জনৈক মেহেদী হোসেন মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশানরের কাছে এ অভিযোগ করে তার শপথ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
মেহেদী হোসেনের অভিযোগ থেকে জানা যায়, কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মৌতলা ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন।
নির্বাচন সংক্রান্ত হলফনামায় তথ্য প্রদানে তার বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় সাংসদ এসএম জগলুল হায়দারের দায়েরকৃত ২০০৬ সালের তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলাটি (জিআর-১১৬/১৭) বিচারাধীন রয়েছে বলে উল্লে¬খ করেছেন।
এ ছাড়া চাঁদাবাজি ও মারপিটের পৃথক দু’টি মামলায় চুড়ান্ত প্রতিবেদনসহ মারপিটের একটি মামলায় ২০০৪ সালের ২০ ডিসেম্বর খালাস পেয়েছেন বলে উলেল্লখ করেছেন।
অভিযোগ, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ২০১২ সালের ১০ ফেব্র“য়ারী বিকেলে আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে এনে কালীগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর নিজের চিংড়ি ঘেরে রাতভর ধর্ষণ করে সাঈদ মেহেদী।
বিষয়টি জানতে পেরে ওই স্কুল ছাত্রীর মা সাঈদ মেহেদীর কাছে গেলে তিনি কয়েক দিন পর বিয়ে করবেন বলে জানিয়ে দিয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন। কয়েকদিন যাবৎ ওই স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ না রাখায় বাড়িতে গেলে সাঈদ মেহেদীর পরিবারের লোকজন মা ও মেয়েকে মারপিট করে।
একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে বিয়েতে আপত্তি করায় বিষয়টি জাতীয় মহিলা সংস্থার সাতক্ষীরা শাখার সভাপতি রিফাত আমিনকে অবহিত করা হয়। ২২ ফেব্র“য়ারী রিফাত আমিনের অফিসে এসে সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত ওই স্কুল ছাত্রীকে শহরে রেখে পড়াশুনাসহ সকল খরচ বহন করা ও পরে বিয়ের করার শর্তে নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে স্বাক্ষর করে সাঈদ মেহেদী।
মামলার বিবরণে আরো জানা যায়, গত ২৮ মার্চ সকাল ১০টায় মোবাইল ফোনে পুরাতন সাতক্ষীরায় ডেকে এনে সাঈদ মেহেদী একটি মটর সাইকেল যোগে ওই স্কুল ছাত্রীকে শহরের সম্রাটপ্লাজা আবাসিক হোটেলে ডেকে নিয়ে আসে।
সেখানে ধর্ষণের চেষ্টা করলে স্কুল ছাত্রীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে সাঈদ মেহেদী রাস্তায় নেমে এসে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় জনতা তাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা আইনজীবী অ্যাড. মোজাহার হোসেন কান্টুসহ কয়েকজনের মুচলেকায় সদর থানার পুলিশ তাকে আটকের ১৫ ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়।
৪ এপ্রিল ওই স্কুল ছাত্রী বাদি হয়ে আদালতের মাধ্যমে সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ৭/৯(১)(৪) ধারায় মামলা(জিআর-২২৪/১২) দায়ের করে। এ মামলায় পুলিশ আদালতে দু’বার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
চুড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদির নারাজির আবেদন করলে আদালত তা গ্রহণ করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ারা জারি করেন।
একপর্যায়ে ২০১৩ সালের ১৯ আগষ্ট সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ ফখরুদ্দীন আসামী সাঈদ মেহেদীকে(নাঃ শিশু মামলা নং- ২৩৬/১২) খালাস দেয়।
বাদি ঢাকা আইন ও শালিস কেন্দ্রের সহায়তায় এ রায়ের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল আপিল করলে( ক্রিঃ আপিল নং-৬২৬০/২০১৩) ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি বিচারপতি রেজাউল হক ও গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নিম্ন আদালতে মুল নথি তলব করে আসামীকে মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়।
নির্দেশ পেয়ে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল সাতক্ষীরার মুখ্য ব্চিারিক হাকিমের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক মোঃ শহীদুল ইসলাম তার জামিন মঞ্জুর করেন। বর্তমানে ক্রিমিনাল আপিল মামলটি শুনানীর জন্য মহামান্য হাইকোর্টে চুড়ান্ত শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে।
হলফনামায় এ মামলার তথ্য গোপন রেখে সাঈদ মেহেদী উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে জয়লাভ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার রাত সাতটা নয় মিনিটে ও রাত সাতটা ৩৯ মিনিটে সাঈদ মেহেদীর ০১৭১৩-৪১১৪০০ নং মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
জেলা নির্বাচন কমিশনার মোঃ নাজমুল কবীর জানান, সদর থানার অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা সংক্রান্ত(জিআর-২২৪/১২) মামলার তথ্য সাঈদ মেহেদীর হলফ নামায় উলে¬খ নেই।
ঢাকা আইন ও শালিস কেন্দ্রের তদন্তকারি সেলের সদস্য ফয়জুল কবীর ফরিদ( ক্রিঃ আপিল নং-৬২৬০/২০১৩) মামলাটি সাঈদ মেহেদীর বিপক্ষে তারা পরিচালনা করছেন বলে সাংবাদিকদের অবহিত করেছেন।