ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ নয়, বরং মিয়ানমারে কাজ বাড়ানোর জন্য জাতিসঙ্ঘকে পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন। জাতিসঙ্ঘের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের এখানে কাজ নাই, মিয়ানমার যান। বাংলাদেশ থেকে বিদায় হোন।’
জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যান্তনিও ভিতোরিনো এবং জাতিসঙ্ঘের মানবিক ও জরুরি ত্রাণ সমন্বয় বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাত করতে এলে ড. মোমেন এ মন্তব্য করেন। জাতিসঙ্ঘের এই তিন কর্মকর্তা রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সরকারের সাথে আলোচনা এবং উদ্বাস্তুদের অবস্থা সরেজমিন দেখতে গত বুধবার বাংলাদেশে এসেছেন।
জাতিসঙ্ঘ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভাসানচরে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচে রোহিঙ্গাদের থাকার ব্যবস্থা করেছে সরকার। জাতিসঙ্ঘসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তরে বাধা দিচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী বর্ষায় কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারা ভূমিধসসহ অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারালে তার জন্য বাংলাদেশ নয়, জাতিসঙ্ঘসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো দায়ী থাকবে।
তবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জোর করে কাউকে ভাসানচরে নেবো না। যারা স্বেচ্ছায় যাবে তাদের জন্য একটি ভালো ব্যবস্থা থাকবে। আমরা নিজেদের অর্থ ব্যয়ে ভাসানচরকে বসবাস উপযোগী করে তুলেছি। ওখানে গেলে রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় হতে পারবে। মাছ ধরতে পারবে, গরু পালতে পারবে।
সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘের তিন সংস্থার প্রধানকে বাংলাদেশে কাজ কমিয়ে মিয়ানমারে কাজ বাড়ানোর তাগিদ দেন। মন্ত্রীর ভাষায়, ‘আমি বেশ শক্তভাবে বলেছি, আপনাদের এখানে কাজ নাই, মিয়ানমার যান। ওখানে বেশি করে কাজ করেন। এখান থেকে বিদায় হোন। আপনারা মিয়ানমারকে কনভিন্স করেন, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের যায়। ওখানে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করেন।’
রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে ঝামেলা তৈরি করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় জনগণ খুব আপসেট যে এরা দিনে দিনে ঝামেলার সৃষ্টি করছে। আমরা বলেছি রোহিঙ্গারা সংখ্যায় অনেক বেশী। তারা আমাদের বনজঙ্গল সব উজাড় করে দিচ্ছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেন, রোহিঙ্গারা যখন রাখাইনে ছিল তখন তাদের বাচ্চাদের শিক্ষার ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘ বা অন্য দেশগুলো কোনো কথা বলেনি। কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়ার পর রোহিঙ্গা বাচ্চাদের বাংলা শেখার বিষয়ে তারা অনেক আগ্রহ দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি ওখানে অনেক বাচ্চা আছে, তাদের স্কুলে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এসব বাচ্চার উচিত মিয়ানমারের ভাষা শেখা, মিয়ানমারের ইতিহাস জানা। বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যবস্থা নাই। সুতরাং তাদের ফেরত যাওয়া উচিৎ। সেখানে তারা শিক্ষা গ্রহণ করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিন সংস্থার প্রধানকে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশ্ব জনমত গঠনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
বৈঠকে ড. মোমেন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা চালানোর সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের বেশিরভাগ ব্যবসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে। জাপান সেখানে বিনিয়োগ করেই চলেছে। ব্যাংকিং চালায় সিঙ্গাপুর। এ সব জোট ও দেশের ওপর জাতিসঙ্ঘ চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যাতে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, সমস্যার দ্রুত সুরাহা না হলে অনেক রোহিঙ্গা যুবক উগ্রপন্থার দিকে ঝুঁকবে। পরিস্থিতি সেই দিকে মোড় নিলে তা গোটা অঞ্চলের জন্য খারাপ হবে। এটা হলে মিয়ানমারের দুঃখ আছে। অর্থনীতি নিয়ে চীনের উদ্দেশ্যও সফল হবে না।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান চায়। কোনো ধরনের যুদ্ধে জড়িতে চায় না। এই সমস্যা মিয়ানমার তৈরি করেছে, সমাধানও তাদের করতে হবে। ড. মোমেন জানান, শক্তিধর দেশের ক্ষমতাধর ব্যক্তি আমাকে বলেছেন, তোমরা যদি চাও তবে আমরা সেখানে মহড়া করতে পারি, ক্ষমতা দেখাতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশ বিষয়টাকে খুব একটা পাত্তা দেয় নাই। কারণ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চাই। মিয়ানমার এর আগে তাদের লোক নিয়ে গেছে। আমরা আশাবাদী।
মন্ত্রী তিন সংস্থার প্রধানকে রাখাইনে কারা অস্ত্র সরবরাহ করছে সেটি খুঁজে বের করার তাগাদা দেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে। নানা ধরনের তথ্য আমরা পাই। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে কখনো আসে না ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র কোন দেশের তৈরি, কোন কোম্পানির তৈরি বুলেটে লোকটা মারা গেছে। এখন জানার সময় এসেছে কারা এইসব অস্ত্র সরবরাহ করছে। এগুলো জানা গেলে সন্ত্রাস কমে যাবে।