ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: বরগুনায় রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় জড়িতরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে বিষয়ে দেশের সব থানায় অ্যালার্ট জারি করতে বলেছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত।
এর আগে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনলে হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে বরগুনার কলেজ রোড এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এ হত্যাকাণ্ডের রিপোর্ট আজ সকালে হাইকোর্টের নজরে আনেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। পরে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
পত্রিকার প্রতিবেদন তুলে ধরে সকালে আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস আদালতে বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, এখনও মামলা হয়নি। এমন অপরাধের ঘটনার বিচার যদি কোনো কারণে বিলম্ব হয় ও বিচারহীন হয়, তা হলে আরও এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। তবে বিচার হবে আশা করছি।’
আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রকাশ্য রাস্তায় মানুষটাকে মারল। একজন ছাড়া কেউ এগিয়ে এলো না। জনগণকে আপনি কী করবেন? বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন ছিল না। ভিডিও করল, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসল না। এটি জনগণের ব্যর্থতা। তাই এই সামাজিক সচেতনতা তৈরি করবে কে? দাঁড়িয়ে দেখেছে, কেউ প্রতিবাদ করল না। পাঁচজন মানুষ অন্তত এগিয়ে আসলে হয়তো তারা সাহস পেত না। হয়তো তারা (দুর্বৃত্তরা) ক্ষমতাবান, হয়তো মানুষ ভয়ে এগিয়ে আসেনি।’
এ সময় আদালত জানতে চান, মামলা হয়েছে কিনা? উপস্থিত এক আইনজীবী বলেন, নিহত রিফাতের বাবা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। এর পর আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাসারকে ওই তথ্য বেলা ২টায় আদালতকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, এ ঘটনায় পুলিশ যথাযথ দায়িত্ব পালন করে নি।
নিহত রিফাত শরীফ (২৩) বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের দুলাল শরীফের ছেলে। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত। বিয়ে করেছিলেন মাত্র দুই মাস আগে। হামলার পর গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিওতে যে দুই যুবককে দেখা যায় তাদের একজনের নাম নয়ন বন্ড এবং আরেকজন রিফাত ফরাজী। তারা ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িত। এসব ঘটনায় তারা একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।
উল্লেখ্য, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাকে বাঁচাতে পারেননি। একাধারে রিফাতকে কুপিয়ে বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে খুনিরা। তারা চেহারা লুকানোরও কোনো চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় শতচেষ্টা করেও তার রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যায়নি। বিকালে হাসপাতালেই তার মৃত্যু হয়।
রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি জানান, বরগুনা পৌরসভার ধানসিঁড়ি সড়কের আবুবকর সিদ্দিকের ছেলে নয়ন বন্ড ও তার প্রতিবেশী দুলাল ফরাজীর দুই ছেলে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী এবং রাব্বি আকন তার স্বামীর ওপর হামলা করে। তিনি বলেন, আমার সামনে ওই সন্ত্রাসীরা রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে। আমি শতচেষ্টা করেও আমার স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আয়শা আক্তার মিন্নির সঙ্গে দুই মাস আগে রিফাত শরীফের বিয়ে হয়। বুধবার রিফাত ও তার স্ত্রী মিন্নি সকাল ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা রাম দা নিয়ে রিফাতের ওপর চড়াও হয়। রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ অভিযোগ করেছেন, পরিকল্পিতভাবে তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার একমাত্র ছেলেকে যারা দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই। এ ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে আমি মামলা করেছি। পুলিশ যেন তাদের সবাইকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনে।