ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট জলবায়ু সংকট ও উষ্ণায়ন মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে তিন লাখ কোটি গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে গাছ লাগানো কর্মসূচি সবচেয়ে ভালো ও কম ব্যয়বহুল উপায় বলে মনে করছেন তারা।
গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে কার্বন নিঃসরণ দুই-তৃতীয়াংশ কমানো যাবে। চাষাবাদের জমি ও নগর এলাকাগুলোকে বাদ দিয়ে এ হিসাব করেছেন তারা।তবে পশুচারণ ক্ষেত্রগুলোকে এর আওতায় রাখা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এসব এলাকায় লাগানো কিছুসংখ্যক গাছও ভেড়া ও গবাদিপশুর জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে। খবর টাইম ম্যাগাজিনের।
মুনাফাবাজ শিল্পোন্নত দুনিয়ার কার্বনের ফলে পৃথিবী দিনকে দিন এগিয়ে যাচ্ছে মহাবিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। তবু থামছে না মুনাফার আকাক্সক্ষা। লোভের বিষাক্ত কার্বন ছড়িয়ে পড়ছে বায়ুমণ্ডলের ওজন স্তরে।
ফল হিসেবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে। ত্বরান্বিত হচ্ছে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কাও। মেরু অঞ্চলের বিপন্ন পরিস্থিতি, জাতিসংঘের আন্তঃরাষ্ট্রীয় জলবায়ু প্যানেলের ধারাবাহিক সতর্কতা, বিজ্ঞানীদের হুমকি কোনো কিছুই থামাতে পারছে না শিল্পোন্নত বিশ্বকে। প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের বিপন্নতার প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ-২১ নামের একটি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা।
২০১৬ সালের এপ্রিলে ১৭৫টি দেশ ওই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তির আওতায় বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে এবং ক্রমান্বয়ে তা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
চুক্তির লক্ষ্যমাত্রায় আরও রয়েছে- গাছ, মাটি ও সমুদ্র প্রাকৃতিকভাবে যতটা শোষণ করতে পারে, ২০৫০ সাল থেকে ২১০০ সালের মধ্যে কৃত্রিমভাবে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনা।
তবে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় রোধে বিশ্বজুড়ে বিপুলসংখ্যক গাছ লাগানোটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে ১৭০ কোটি হেক্টর জমি বৃক্ষহীন অবস্থায় আছে। এর পরিমাণ বিশ্বের মোট ভূমির ১১ শতাংশ।এসব জমিতে স্থানীয় গাছ লাগানো হলে তা প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠবে। নতুন গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন সুইস ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টম ক্রাউথার। তিনি বলেন, নতুন এ সংখ্যাগত মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে দেখা গেছে এটি শুধু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট সমাধানের একটি উপায়ই নয়, বরং এটি সর্বোৎকৃষ্ট পথ।
ক্রাউথার আরও বলেন, আমি ভেবেছিলাম নতুন করে বনায়নের বিষয়টি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমাধানের সেরা দশটি উপায়ের একটি হবে। তবে সব সমাধান প্রস্তাবের মধ্যে এটি সর্বসম্মতিক্রমে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে বিবেচিত হয়েছে। ক্রাউথার মনে করেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো ও বন ধ্বংস করা জনিত কারণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হওয়ার বর্তমান যে ধারা চলছে, তা পাল্টাতে ও শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে গাছ লাগানো জরুরি।