দুই বছরে ২৮৮ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট বাতিল কোটায় পাওয়া চাকরির ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন

ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোটঃ  গত ২ বছরে ২৮৮ জনের নামে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট বাতিল করা হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন বলে সংশ্লিষ্ট কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় পৃথক গেজেটের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এর মধ্যে গত ৭ মাসেই বাতিল করা হয় ১৯৫ জনের সনদ ও গেজেট। এর ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বন্ধ করা হলেও গভীর সংকট তৈরি হয়েছে এ সনদের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পাওয়া চাকরি নিয়ে।

এ সুবিধা ভোগ করে যাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিরা চাকরি পেয়েছেন তাদের বিষয়টি এখন সামনে চলে এসেছে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধা সনদের বৈধতা না থাকলে স্বাভাবিকভাবে এ ধরনের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পাওয়া চাকরির বৈধতাও থাকে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বুধবার নিজ দফতরে  বলেন, ‘মিথ্যা তথ্য দেয়ার কারণে কারও গেজেট বাতিল হলে সেখানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির দায়িত্ব সরকার নেবে কেন। আইন অনুযায়ী যা হওয়ার তাই হবে।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এসএম আরিফ-উর-রহমান  বলেন, ‘এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। তবে দেখুন, আমরা তো বাতিলের গেজেট প্রকাশ করছি। সেটি জানার পর কোনো মন্ত্রণালয় কিংবা সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর যদি আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কারও বিষয়ে মতামত জানতে চায় তাহলে আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরব। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের কাছে এ ধরনের চিঠিপত্র দেয়নি।’

সূত্র জানায়, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের চলতি মাস পর্যন্ত ২৮৮ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ৫, মার্চে ২, এপ্রিলে ৪, মে-তে ৬৫, জুলাইয়ে ৬৯ এবং আগস্টে (২৬ আগস্ট পর্যন্ত) ৫০ জন। জামুকার ৬৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বশেষ সোমবার মন্ত্রণালয় থেকে ১৪ জনের নাম-পরিচয় উল্লেখ করে বাতিলকৃত বেসামরিক গেজেট ও সনদ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়।

বাতিলের ক্ষেত্রে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন-২০০২-এর ৭(ঝ) ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। এখানে বলা আছে, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন, সনদপত্র ও প্রত্যয়নপত্র প্রদানে এবং জাল ও ভুয়া সনদপত্র ও প্রত্যয়নপত্র বাতিলের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ প্রেরণ।’

কেউ প্রকৃত তথ্য গোপন করে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং যাচাই-বাছাইয়ের সব ধাপ পার হয়ে জামুকার সুপারিশের ভিত্তিতে সনদ পেয়ে গেলেও সেটি পরে প্রমাণিত হলে এ ধারা বলে তার সনদ ও গেজেট বাতিল হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলমান যাচাই-বাছাই শেষে আরও কিছু সনদ ও গেজেট বাতিলের আশঙ্কা আছে। ইতিমধ্যে যাদের সনদ ও গেজেট বাতিল হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকে এটি অর্জন করেছেন ৭-৮ বছর কিংবা তারও আগে।

সঙ্গত কারণে এসব সনদ ও গেজেটের ভিত্তিতে সম্মানী ভাতা ছাড়াও রাষ্ট্রীয় অনেক সুযোগ সুবিধা তারা ভোগ করে আসছেন। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজের চাকরির বিশেষ সুবিধা ভোগ ছাড়াও তার সন্তান কিংবা সন্তানদের সন্তানরা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়েছেন।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, যার ওপর ভিত্তি করে চাকরি হয়েছে সেটি বাতিল হয়ে গেলে ওই চাকরি না থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা, যে কোনো চাকরির নিয়োগপত্রে উল্লেখ থাকে, কোনো অসত্য তথ্য দিলে বা কোনো তথ্য গোপন করলে নিয়োগ বাতিল হবে।

তবে এ বিষয়ে যথাযথভাবে প্রশ্ন উঠলে সরকারের তরফ থেকে নিশ্চয় একটি অফিশিয়াল ব্যাখ্যাও দেয়া হবে। যদিও অনেকে এ বাতিলের বিরুদ্ধে আদালতে যাচ্ছেন। এটিও একটি আইনগত ধাপ।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘জামুকা একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি। তার সময়েও সেখানে দেশের খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধারা ওই কমিটির সদস্য ছিলেন। তাই জামুকার সুপারিশের ভিত্তিতে যাদের সনদ দেয়া হয়েছে তা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তা সত্ত্বেও যদি কেউ তথ্য গোপন করে সনদ নিয়ে থাকেন সেটি প্রমাণিত হলে অবশ্যই বাতিল হবে।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মিজানুর রহমান  বলেন, ‘অবশ্যই এটি একটি জটিল ও কঠিন প্রশ্ন। তবে গেজেট বাতিলের ভিত্তিতে ওই কোটায় চাকরি পাওয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আগে যারা সনদ দিয়েছেন তাদের দায়-দায়িত্বও নির্ধারণ হওয়া প্রয়োজন।’

২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪৪৬ জন। এর মধ্যে বেসামরিক গেজেটে আছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪৪৩ জন।

মুক্তিযোদ্ধা সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার ভারতের তালিকা ও লাল মুক্তিবার্তার তালিকাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ১ লাখ ৮৪ হাজার ১২০ জন মাসিক সম্মানী ভাতা নিয়ে থাকেন। যার পরিমাণ সর্বনিম্ন ১২ হাজার থেকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী তদূর্ধ্ব পর্যায়ে  যুগান্তর

Check Also

সাতক্ষীরা পৌর ৩ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও সেক্রেটারি নির্বাচন

মাসুদ রানা, সাতক্ষীরা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা শহর শাখার পৌর ৩ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।