শোভন-রাব্বানীর জন্য সুপারিশ করতে গণভবন থেকে ফিরে এলেন আ’লীগের ৩ নেতা

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিয়ে নাখোশ খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন। এরপর ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর গণভবনে প্রবেশের স্থায়ী পাস স্থগিত করা হয়েছে।

গণভবন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে শনিবার গণভবনে যাওয়ার চেষ্টা করেন শোভন-রাব্বানী। সোমবার রাতেও গণভবণে প্রবেশ করতে পারেননি শোভন-রাব্বানী। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় চার নেতা জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম এবং বিএম মোজাম্মেলের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।

বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেখভাল করায় এ নিয়ে কোনো সুরাহা টানতে পারেননি নেতারা।

এদিকে শোভন-রাব্বানরি পক্ষে সুপারিশ করতে গণভবনে গিয়ে ব্যর্থ মনোরথে ফিরে এসেছেন আওয়ামী লীগের তিন নেতা। আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিকালে ছাত্রলীগের চলমান বিষয়টি জানতে ও শোভন-রাব্বানীর জন্য সুপারিশ করতে গণভবনে যান আওয়ামী লীগের তিন শীর্ষ নেতা।

তারা হলেন- দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা বলার সাহস করেননি।

উপরন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজেই উপস্থিত নেতাদের ছাত্রলীগ বিষয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে বলেন। একই সঙ্গে বিষয়টি তিনি নিজেই দেখছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রলীগের জন্য সুপারিশ করতে গিয়ে তাদেরও খালি হাতে ফিরে আসতে হয় গণভবন থেকে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ছাত্রলীগের কমিটি করা হয়।

কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ ১ বছর না পেরোতেই তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা ওঠে আসে।

এর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা, অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতা, নেতাকর্মীদের প্রত্যাশিত মূল্যায়ন না করা অন্যতম। এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপেক্ষা, ফোন রিসিভ না করার অভিযোগও আছে।

এর বাইরে রাতজাগা ও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা, কর্মসূচিতে বিলম্বে যাওয়া, প্রধান অতিথিদের বসিয়ে রাখা, জেলা সম্মেলন করতে না পারা, বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ও এ তালিকায় রয়েছে।

এসব দেখে এবং শুনে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিতে বলেন। সেদিন দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তারা বলেন, শেখ হাসিনা ভীষণ ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের ওপর। ‘আমি ছাত্রলীগের এমন নেতা চাই না, যাদের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে’- এমন ক্ষুব্ধ মনোভাবও সেদিন প্রকাশ করেন দলীয় সভাপতি।

ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ মনোভাব জানার পর সংগঠনটির পরবর্তী নেতৃত্বে কারা আসছেন সেই আলোচনা এখন সর্বত্র। বর্তমান কমিটির মেয়াদ যেহেতু আরও ১০ মাস রয়েছে- তাই আগাম সম্মেলন হবে, নাকি সম্মেলন ছাড়াই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে সেই আলোচনাও চলছে।

তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা যুগান্তরকে জানান, আপাতত সম্মেলনে না গিয়ে নতুন নেতৃত্বের কথাই ভাবা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত করা হতে পারে। দলের হাইকমান্ড তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন।

এক্ষেত্রে পারিবারিক ঐতিহ্যের পাশাপাশি সংগঠন পরিচালনায় দক্ষতাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া হবে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সংগঠন পরিচালনার দক্ষতাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। বঞ্চিত নেতাদের জীবন বৃত্তান্তও নতুন করে পর্যালোচনা করা হবে।

Check Also

ডিসেম্বরের ২১ দিনে রেমিট্যান্স এল ২ বিলিয়ন ডলার

চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ২১ দিনে দেশে বৈধ পথে ২০০ কোটি  মার্কিন (২ বিলিয়ন) ডলারের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।