চতুর্থ শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্ষণ অন্তঃসত্ত্বা, অতপর:…

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ   ঢাকার ধামরাইয়ে চতুর্থ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। একাধিকবার ধর্ষণের ফলে ওই স্কুলছাত্রী এখন অন্তঃসত্ত্বা। এদিকে ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় মাতব্বররা নির্যাতিতা শিশু ও তার পিতাকে একটি বাড়িতে জিম্মি করে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছে। ধর্ষককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করা জরিমানার ৬০ হাজার টাকা পকেটে ভরে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে মাতব্বরা।

বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানতে পেরে ধামরাই থানা পুলিশ ধর্ষক ও বিচার করা মাতব্বরদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। পুলিশের ভয়ে তারা পালিয়ে গেলেও ধর্ষকের স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। আর ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গতরাতে ধর্ষিতার বাবা বাদি হয়ে ধর্ষক ও সহযোগিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

জানা গেছে, ধামরাইয়ের নিকলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাদের প্রতিবেশি চৌহাট ইউনিয়নের মুন্সীচর গ্রামের মোকছেদ আলীর (৫৫) বাড়িতে টেলিভিশন দেখতে যেতো। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে মোকছেদ আলী ভয়-ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করতো তাকে। এভাবে হুমকির মুখে একাধিকবার ধর্ষণ করায় স্কুলছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।

পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে কয়েকজন মাতব্বরের মাধ্যমে ধর্ষিতার পরিবারের সঙ্গে আপোসের চেষ্টা চালায় চার সন্তানের জনক লম্পট মোকছেদ আলী। মাতব্বররা গত রোববার ও সোমবার ধর্ষিতা ও তার বাবাকে দু’দফা আটক করে রাখে। সোমবার ধামরাইয়ে আমতা ইউনিয়নের নান্দেশ^রী গ্রামের বাসচালক চাঁন মিয়ার বাড়িতে ১২ ঘণ্টা আটকে রেখে ২ লাখ টাকা প্রদানের বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনা আপোস করা হলো মর্মে ধর্ষিতার বাবার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয় মাতব্বররা। পরে তাদের মুক্তি দেয় মাতব্বর চৌহাট ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন, বালিয়াটি ঈশ^র চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আল আমীন, মুন্সিরচর গ্রামের মরন আলী, ধর্ষক ও তার ভাই দরবার আলী, অলক রায়, আবু বক্কর সিদ্দিক।

ওই সময় ৬০ হাজার টাকা ধর্ষকের ভাই দরবার আলী ধর্ষিতার পরিবারকে দেয়ার জন্য চাঁন মিয়ার হাতে তুলে দেন। আর বাকি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বৃহস্পতিবার দেয়ার কথা বলেন। কিন্তু গত শুক্রবার পর্যন্ত কোন টাকা দেয়া হয়নি বলে জানান নির্যাতিতা শিশুর পিতা।

শিশুটির পিতা জানান, তাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছে চাঁন মিয়া, ফারুক মেম্বার, আল আমীন, অলক রায়, আবু বকরসহ কয়েকজন। আমি বিষয়টি মেনে নিতে পারি নাই বিধায় আমার সমাজের মাতব্বর রজ্জব বেপারী, মরণ বেপারী ও সোনা মিয়াকে জানিয়েছি। মাতব্বর মরন বেপারী জানান, তার কাছে শিশুটির পিতা বিষয়টি জানিয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন নির্যাতিতার পিতার কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, চাঁন মিয়ার বাড়িতে মীমাংসা করা হয়েছে। জরিমানার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাবেন ধর্ষণের শিকার শিশুটির পিতা। ধর্ষকের ভাই দরবার আলী ৬০ হাজার টাকা চাঁন মিয়ার কাছে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে সালিশে উপস্থিত বালিয়াটি ঈশ^র চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আল আমীন জানান, জরিমানার ৬০ হাজার টাকা মাতব্বররা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে। বাকি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নির্যাতিতার পরিবারকে দেয়ার কথা।

এ ব্যাপারে সালিশের প্রধান মাতব্বর চাঁন মিয়া বলেন, ধর্ষককে ১ লাখ ৮০ হাজার জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার সমুদয় টাকা না দেয়ায় এখনো মীমাংসা হয়নি। তবে জরিমানার ৬০ হাজার টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, সালিশে উপস্থিত অলক রায় ও আবু বক্কর সিদ্দিককে ২০ টাকা দিয়ে শিশুর পিতার স্বাক্ষর করা ষ্ট্যাম্প আনা হয়েছে।

ধামরাই থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি দীপক চন্দ্র সাহা জানান, এ ঘটনা এলাকায় মীমাংসার অযোগ্য। যারা বিষয়টি মীমাংসা করেছেন তাদের ও ধর্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

Check Also

সাতক্ষীরা পৌর ৪ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর আমীরের শপথ

মাসুদ রানা, সাতক্ষীরা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা শহর শাখার পৌর ৪ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।