ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ বুড়িগোয়ালিনী (শ্যামনগর): প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের ক্ষত চিহ্ন বুকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে এখনো শতশত পরিবার। নদীর ধারে কিম্বা উঁচু স্থানই এখন তাদের ঠিকানা। কাঁচা মাটির দেয়াল এখন দুর্গতদের কাছে শুধুই স্মৃতি। ১০ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে তছনছ হয়ে গেছে উপকূলের গরীব অসহায় মানুষের ঘরবাড়ি। ঝড়ের আগে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছিলেন তারা। ঝড় শেষে বাড়ি ফিরে দেখেন বুলবুলের আঘাতে উড়ে গেছে চাল। ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে গেছে তাদের বাড়িঘর। একই সাথে নষ্ট হয়েছে আদিগন্ত মাঠভরা ফসলের ক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই যেনো ধ্বংসস্তুপ। সেই দিনের পর থেকে অনেকেই অবস্থান করছেন বেড়িবাঁধের উপর। পলিথিনের টোং বানিয়ে খোলা আকাশের নিচে স্বজনদের নিয়ে বসবাস করতে দেখা গেছে অনেক অসহায় পরিবারকে। সুপেয় পানির কষ্ট, স্যানিটেশন সমস্যা, থাকার কষ্ট, খাওয়ার কষ্ট নিয়েই তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। দিনে সূর্যের তাপ আর রাতে শীতের কামড় এসব অসহায় মানুষগুলোকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে বলে জানান তারা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে চলছে জরিপ। প্রাথমিকভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে শুরু হয়েছে পুনর্বাসনের কাজ। ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন ঘূর্ণিদুর্গত মানুষ।
এদিকে, শ্যামনগর উপজেলার ১২নং গাবুরা ইউনিয়নে ব্রতী নামে একটি বেসরকারী সেবা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাবুরার বেশিরভাগ মানুষ দুস্থ ও গরীব। তাদের অধিকাংশ পরিবারের বাসগৃহ ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ভেঙে গেছে। সংসারে ব্যবহার উপযোগী উপকরণের ক্ষতি হয়েছে। আসবাবপত্র ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। ১৪ নভেম্বর সকাল থেকে ব্রতী শিশু সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ১২নং গাবুরা ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বুড়িগোয়ালিনী শিশু সুরক্ষা প্রকল্প অফিসের কর্মকর্তা সাইফুর রহমান জানান, ব্রতীর অধীনে বর্তমান ২০০ শিশু পিতা-মাতা হারা। প্রতিবন্ধি পরিবারের ২২টি শিশুর বাসগৃহ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। আংশিক ভেঙে উপকরণের ক্ষয়ক্ষতি হয় ২৮টি পরিবারের। তাদের অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন। অনেকে ভাঙাবেড়া কাত করে দিয়ে তার ভিতরে ঝুপড়ি মেরে রান্নাবান্না করছেন। আবার অনেকেই অন্যের বারান্দায় রাত কাটাচ্ছেন। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঝড়ের রাতে তারা বাসায় ছিলেন না।
সূত্র জানায়, গাবুরার ১৫টি গ্রাম পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গ্রামবাসির মধ্যে দরিদ্র শ্রেণির মানুষের বাসঘর ভেঙে গেছে। গাবুরার ডুমুরিয়া বাজারের একটি ঘরও দাঁড়িয়ে নেই। ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে সব ঘরের চাল। সুপেয় পানির পুকুরগুলো ঝড়ের আঘাতে নষ্ট হয়ে গেছে। খলসেবুনিয়া এলাকায় ভেঙেছে ঘরের পর ঘর। এভাবে গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনি, রমজাননগর, কৈখালি, ঈশ্বরীপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামের পর গ্রাম কাঁচা আধাপাকা বাড়িঘর, ফসল ও মাছের ঘেরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ ও সোলার প্যানেলের ক্ষতি হয়েছে। গাছের পর গাছ পড়ে ল-ভ- হয়েছে গোটা উপকূল।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …