হারিয়ে যেতে বসেছে বিএনপি র্নিমিত সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিল

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ  জাহিদা জাহান মৌ: সুন্দরবনের নাম অনুসারে নামকরণ করা হয় সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসের নাম। ১৯৮০ সালে সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সে সময়ে বস্ত্র মন্ত্রী ছিলেন সাতক্ষীরার সন্তান মুনসুর আলী এবং মহা ব্যবস্থাপক ছিলেন গাজী রহমত উল্লাহ (দাদু) বীর প্রতীক। সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসটি ১৯৮৩ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। বেশ ভালই চলছিল মিলটি। হাজার হাজার শ্রমিক খুঁজে পেয়েছিলেন কর্মের ঠিকানা। দীর্ঘদিন যাবৎ মিলটির প্রাণ ছিল উৎপাদনে এবং বেশ লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অল্পদিনে খ্যাতি অর্জন করেছিল।
সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস’র কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল ১৫০০ শ্রমিক এবং ১৫০ জন কর্মচারী ও ৪০ জন কর্মকর্তা, ৬০ জন নিরাপত্তা প্রহরী নিয়ে। দু’টি বিভাগে প্রথম কাজ শুরু হয়েছিল। উইভিং যাকে বয়ন বিভাগ বলা হয় এবং স্পিনিং যেখানে সুতা তৈরী হতো। মিল থেকে উৎপাদিত সুতা দিয়ে কাপড় তৈরি হতো বয়ন বিভাগে। সাইজিং ব্রয়লার, উইভিং মিলের উৎপাদিত সুতা দ্বারা কাপড় তৈরী হতো আরো কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে। এসব সুতা ও কাপড় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে রপ্তানি করা হতো।
কয়েক বছর মিলটি ভালোভাবে চলার পর নেমে আসে চরম বিপর্যয়। ভাটা শুরু হয় উৎপাদনে এবং ক্রমাগত লোকসানের কারণে সরকার এক সময় বন্ধ করে দেয় মিলটি। কিছুদিন ব্যক্তি মালিকানায় চললেও বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। নানাবিধ সমস্যার কারণে উৎপাদনের চাকা বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে বেকার হয়ে পড়ে হাজার হাজার শ্রমিক।
মিলটি বন্ধ হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে প্রধান ছিল পুরাতন মেশিন। পুরাতন মেশিন চেঞ্জ না করার কারণে মিলের উৎপাদন ব্যাহত হয়। সেই মেশিনগুলো আজ শুধুই স্মৃতি হয়ে আছে।
কেয়ার টেকার কর্তৃপক্ষ জানায়, মিলটি চালু করার জন্য প্রয়োজন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, পর্যাপ্ত বিদুৎ সরবরাহ, বিদ্যুৎ রেট কমানো, বাজারজাতের জন্য পর্যাপ্ত মাধ্যম এবং কাচাঁমালের ঘাটতি কমানো।
সূত্র আরও জানায়, যে কারণে বন্ধ হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো, ব্যক্তি মালিকানায় অন্য মিলগুলো চলায় এবং তাদের পণ্যের গুণগত মান ভালো অন্যদিকে সরকারি মিলের উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান ভালো না। এ কারণে বাজারে চাহিদা কম এবং দামও কম। তাই সরকার ক্রমাগত লোকসান গুনতে থাকে।
তবে কর্তৃপক্ষ আশার কথা শুনিয়ে বলেছেন, পি.পি.পি’র আন্ডারে মেশিনগুলোর চালু করা এবং উদ্যোক্তা গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে জানায় সূত্র ।
সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসটি বাংলাদেশের দক্ষিণ বঙ্গের জনপদের মানুষের জন্য এক বড় কর্মসংস্থানের জায়গা এবং বেকারদের জন্য কর্মের স্থান। সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলকে ঘিরে আসে পাশে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিছু খেটে খাওয়া মানুষের আয়ের মাধ্যম গড়ে উঠেছে মিলকে ঘিরে। আশেপাশের প্রায় দশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়ে এ মিলের কারণে। সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসকে কেন্দ্র করে এবং মিলের নামে নামকরণ করা হয়েছে ‘মিল বাজার’ যার পূর্ব নাম ছিল শুলকোর বাজার।

Please follow and like us:

Check Also

২৮শে এপ্রিল খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারেও ক্লাসের পরিকল্পনা

আগামী ২৮শে এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।