ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরা সায়র খাল খননের নামে ‘খালকে ড্রেনে পরিণত করার চক্রান্তের’ অভিযোগ তুলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা বেতনা ও অন্যান্য নদী এবং বন-পরিবেশ রক্ষা কমিটি নেতৃবৃন্দ। সোমবার সরেজমিনে প্রাণ সায়র খাল খনন কাজ পরিদর্শন শেষে নেতৃবৃন্দ এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এদিকে মঙ্গলবার সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের নেতৃবৃন্দও সরেজমিনে প্রাণ সায়র খালের খনন এলাকা পরিদর্শন করেন।
অপরদিকে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল আগামী ৩০ নভেম্বর বেলা ১২টায় প্রাণ সায়র খাল পুন:খনন সংক্রান্ত বিষয়ে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদ কর্মীদের সাথে প্রেস কনফারেন্সে মিলিত হবেন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উক্ত প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে বলে জেলা তথ্য অফিসের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রাণ সায়রের খনন এলাকা পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জাসদ সাতক্ষীরা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম হেলাল, সাতক্ষীরা বেতনা ও অন্যান্য নদী এবং বন-পরিবেশ রক্ষা কমিটির আহবায়ক আবুল হোসেন খোকন, সদস্য সচিব মফিজুর রহমান, যুগ্ম আহবায়ক ও লাবসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান সজল, শেখ শওকত আলী, সদস্য রহমত আলী, জেলা ভূমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সাতক্ষীরা প্রাণ সায়র খালের পূর্বে মাপ ছিলো ৮০ থেকে ১৩০ ফুটের মতো। অথচ স্ক্যাভেটর মেশিন দিয়ে মাত্র ৪০/৪৫ ফুট কাটা হচ্ছে। সেখানে খাল না কেটে উল্টো পাশ থেকে মাটি কেটে খালের মধ্যে দিয়ে খালকে ড্রেনে পরিণত করা হচ্ছে। খালের দীর্ঘ করা হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ ফুট। আর খালের তলা করা হচ্ছে মাত্র ১০ ফুট। যা একটি ছোট ড্রেন ছাড়া আর কিছুই না। বর্তমানে খাল যে অবস্থায় রয়েছে এই অবস্থাতেই সাতক্ষীরা শহরের সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। আর যদি এভাবে খাল ভরাট করে ছোট ড্রেনে পরিণত করা হয় তাহলে সাতক্ষীরা আগামী বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যাবে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে এই খাল কাটার নামে খাল ভরাট দেওয়া বন্ধ করে ১৯৬২ সালের ম্যাপ ১৯৯২ সালের মাপ জরিপ অনুযায়ী খাল খননের দাবি জানান। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খুলনা রোড মোড়ে প্রতিবাদ সভা করেন তারা। প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহবায়ক আবুল হোসেন খোকন। বক্তব্য রাখেন লাবসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. মোস্তাফিজুর রহমান শাহনেওয়াজ, সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান সজল, জেএসডি’র শুধাংশু শেখর সরকার, বাংলাদেশ জাসদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, সদরের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম হেলাল, বেতনা ও অন্যান্য নদী এবং পরিবেশ রক্ষা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুস সামাদ, শেখ শওকত আলী, এস এম রবিউল ইসলাম, জাসদ নেতা আশরাফ সরদার প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব মফিজুর রহমান।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো. আনিসুর রহিমও প্রাণ সায়র খাল ভরাট করতে ড্রেন খনন করার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবারই পুন:খননের নামে নদী খালগুলো সংকীর্ণ করা হয়। তিনি আরো বলেন, এককালের লঞ্চ চলাচলের এই প্রাণসায়র নদী থেকে খাল এবং এবার খাল কেটে ড্রেন বানানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়া বন্ধ করে ডিএস ম্যাপ অনুযায়ী খাল খননের দাবী জানান তিনি।
সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি ও জেলা ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক এড. ফাহিমুল হক কিসলু ও সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুমের নেতৃত্বে একটি টিম প্রাণ সায়রের খনন এলাকা পরিদর্শন করেন।
সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরাসহ সচেতন নাগরিক সমাজ ও স্থানীয়দের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে বেতনা নদীর সাথে সংযোগ স্থলে প্রাণ সায়র খাল খনন পরিদর্শনে গেলে এলাকাবাসী খাল খননে অনিয়ম এবং খালটিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ তুলে বলেন, প্রাণ সায়র খালটি সাতক্ষীরা শহরের জন্য আশীর্বাদ। খালটির যথাযথ পরিচর্যা করতে পারলে সাতক্ষীরা শহরকে একটি পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত শহরে পরিণত করা যেতো। অথচ খালটি খননের নামে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে।
পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরার সভাপতি এড. ফাহিমুল হক কিসলু, সহ-সভাপতি নিত্যানন্দ সরকার, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম, দপ্তর সম্পাদক এম. বেলাল হোসাইন প্রমুখ।
লাবসা ইউনিয়নের খেজুরডাঙ্গী গ্রামের সাবেক মেম্বর মনিরুজ্জামান, নজরুল ইসলাম, আব্দুল আহাদ ও তাছলিমা খাতুন বলেন, ১৯৬২ সালের ম্যাপ অনুযায়ী সায়র খালের প্রস্থ (বেড়) ছিলো ৮০ থেকে ১৩০ ফুটের মত। অথচ স্ক্যাভেটর মেশিন দিয়ে খাল না কেটে উল্টো নরম মাটি (নেলকাদা) কেটে আবার তা খালের পাড়ে ফেলে খালকে ড্রেনে পরিণত করা হচ্ছে।
এবিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আ. বারী বলেন, খালকে ড্রেনে পরিণত করার বিষয়টি সঠিক নয়। সিডিউল অনুযায়ী খালটি খনন করা হচ্ছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, খাল খনন করতে গিয়ে রাস্তা নষ্টের বিষয়টি অফিসকে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সমাধান হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এসএম সাঈদুজ্জামান বলেন, সিডিউল অনুযায়ী খালটি খনন করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ভিত্তিহীন।