সাতক্ষীরায় গাইড ও গ্রামার বই জব্দের ঘটনায় মামলা: আটক দুজন কারাগারে

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ   কোমলমতি শিশু কিশোরদের গাইড ও গ্রামার বই নিয়ে বছরের পর বছর তুঘলকি কারবার করলেও আইনের আওতায় আসেনি এসমস্ত রাঘব বোয়ালরা। এবারই সাতক্ষীরায় প্রথমে জেলা প্রশাসন ও পরে জেলা পুলিশের বিশেষ তৎপরতায় আইনের আওতায় আসতে শুরু করেছে ঘাপটি মেরে থাকা গাইড ও গ্রামার বই বিক্রেতা নামের কথিত ব্যবসায়ীরা। জেলা পুলিশের সাড়াশি অভিযানে বুধবার দিনভর শহরের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে অভিযান চালিয়ে কয়েক ট্রাক গাইড ও গ্রামার বই জব্দ করা হয়। যার মুল্য কয়েক কোটি টাকা। গ্রেপ্তার করা হয় দুজনকে। এঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ধৃতদের বৃহস্পতিবারই কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করবেন ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ হারাণ চন্দ্র। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামীরা হলেন, শহরের মুনজিতপুর গ্রামের ওয়াসেক মোল্যার ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন ও একই এলাকার আব্দুস সোবহানের ছেলে মামুন আহম্মদ। কার্যবিধির ১৯৮০ সালের নোটবুক (নিষিদ্ধ) আইন সরকার অনুমদিত নোট বই (অনুপম, পপি, নিউটন, পাঞ্জেরী, লেকচার, স্কয়ার, গ্লোবাল, এ্যাডভান্স, নবদুত, ফুলকুড়ি প্লাস) নামক প্রকাশনীর নামে প্রকাশ করিয়া অন্যায় ভাবে লাভবানের আশায় নিজেদের হেফাজতে অবৈধভাবে মজুদ করার অপরাধ। উদ্ধারকৃত বিপুল পরিমান গাইড ও গ্রামার বইয়ের মুল্য দেখানো হয়েছে এক কোটি টাকা। এদিকে ধৃত আসামী জাহাঙ্গীর হোসেন ও মামুন আহম্মেদের বাড়ির গোডাউন থেকে এসব বই জব্দ করা হয়েছে। তাদেরকে বৃহস্পতিবার কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোহিদুল ইসলাম জানান, আসামীদের ব্যাপারে আরও অনুসন্ধান চলছে। কোন কোন গোডাউনে বই আছে তা খোঁজ খরব নেয়া হচ্ছে। এদিকে শহরের বলাকা লাইব্রেরীর মিলন আহম্মেদ, বই কানন এর মকবুল হোসেন, সাতক্ষীরা বুক হাউজ এর ছফিউল্যাহ ভুইয়ার সাগর, ন্যাশনাল বুক ডিপো কদমতলা আব্দুল আলিম, শ্যামনগরে রোকন বুক ডিপোর রোকনুদ্দীন বাবু, একই স্থানের ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরীর মালিক শেখ সামিউল ইসলাম সামু, কালিগঞ্জে মর্ডাণ বুক ডিপোর শেখ আনজারুল ইসলাম, আশাশুনির বই ঘরের গাউসুল আযম, কলারোয়ার জাহাঙ্গীর লাইব্রেরীর জহুরুল ইসলাম জহির, একই এলাকার বিদ্যা বিপনীর সাইফুল ইসলাম বাবু, পাটকেলঘাটার জননী লাইব্রেরীর মিহির কুমার বিশ^াস এরা সকলেই বিভিন্ন অবৈধ গাইড ও গ্রামার বই কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে প্রান্তিক পর্যায়ে গাইড ও গ্রামার বই সরবরাহ অব্যহত রেখেছেন। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেষার মানুষসহ শিক্ষকদের বিপুল অংকের আর্থিক সুবিধা দিয়ে ম্যানেজ করেই বাজারে বইয়ের চাহিদা তৈরি করে থাকেন এসব এজেন্ট ও প্রকাশকরা।
একই সাথে সকল উপজেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির নেতাদেরও লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে বই ধরানোর কাজ করেন এজেন্ট ও প্রকাশনী সংস্থা। প্রতিটি উপজেলায় শিক্ষক সমিতির নামের এসমস্ত সংগঠনের ব্যাংক হিসাব তলব করলেই বোঝা যাবে মুল রহস্য এবং বেরিয়ে আসবে বিপুল অংকের অর্থ উপার্জনের কাহিনী। সাতক্ষীরাবাসীর দাবী জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান গোয়েন্দা বিভাগ দিয়ে সার্বিক বিষয়ে ক্ষতিয়ে দেখে ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনবেন এমন প্রত্যাশা সকলের।
এদিকে গত ২০ জানুয়ারি ২০২০ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত একপত্রে সাতক্ষীরাসহ সকল জেলা শিক্ষা অফিসারদের জানান, কতিপয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কারিকুলামের বাইরে শিক্ষার্থীদেরকে অতিরিক্ত বই বা নোট বই পড়াতে-কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। যা বিধি পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমতবস্তায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন তার অঞ্চল জেলা উপজেলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উল্লেখিত বিধিবর্হিভুত কার্যক্রম সমুহ বন্ধের লক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার এই পত্র প্রাপ্তির পরও উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের নিকট তা প্রেরণ করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে অবৈধ এসব গাইড ও গ্রামার বই বিক্রি ও বাজারজাত অব্যাহত আছে।
এবিষয়ে রাতে জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান রাতে জানান, বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয় প্রেসব্রিফিং এর মাধ্যমে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন অর্থাৎ অবৈধ এসব গাইড ও গ্রামার বই বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আমি সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে সে নির্দেশনাকে কাজে লাগিয়ে অভিযান অব্যহত রাখবো। একই সাথে সাতক্ষীরায় অবৈধ গাইড ও গ্রামার বই বিক্রেতা ও সরবরাহকারিদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান। তিনি বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে যারা ব্যবসা করে তাদের ব্যবসা বন্ধ করা হবে।

Please follow and like us:

Check Also

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তান নিয়ে ট্রেনের নিচে নারীর ঝাঁপ: মারা যান মা-ছেলে

হাজীগঞ্জে এক বছরের সন্তান আব্দুর রহমানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন মা তাহমিনা (২৩)। এতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।