কোলকাতা জেলে পুলিশের গুলিতে নিহত দেবহাটার মামুনের লাশ ফেরৎ পেতে মায়ের আহাজারি

রঘুনাথ খাঁ :করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ভারতের পশ্চিমবাংলার দমদম সেন্ট্রাল জেলে বন্দি ও পুলিশের সংঘর্ষে নিহত মামুন হোসেনের মা মাফুজা খাতুনের আহাজারি থামছেই না। জন্মভূমি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সন্যাসিখোলা গ্রামের মানুষ এই হত্যার বিচার এবং দ্রুত দিনমজুর মায়ের কাছে মামুনের লাশ ফেরত দেয়ার দাবি জানিয়েছে।

ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার বরাত দিয়ে মামুনের পরিবারের সদস্যরা জানায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতার দমদম সেন্ট্রাল জেলে করোনার কারণে বন্দি মুক্তির খবর তালিকা নিয়ে কারা পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদের একপর্যায়ে বুধবার পুলিশের গুলিতে নিহত হয সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সন্যাসিখোলা গ্রামের মামুন হোসেন (২৯)।
সন্যাসিখোলা গ্রামের মৃত কাশেম গাজীর স্ত্রী মাফুজা খাতুন জানান, ১৯৯১ সালে মামুনের জন্মের চার মাসের মাথায় ট্রাক চাপায় মামুনের বাবা নিহত হন। সে ঘটনায় বিচার পাননি তিনি। এরপর লোকের বাড়িতে, রাস্তাঘাটে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালিয়েছেন তিনি। ছেলেকেও বেশিদূর লেখাপড়া করাতে পারেনি। ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন ইটের ভাটাতে কাজ করেছেন। সাত বছর আগে ভারতে ইটের ভাটায় কাজের সন্ধানে যায় মামুন। সেখানে একটি মোবাইল চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে পুলিশ মামুনকে সন্দেহজনকভাবে ধরে নিয়ে যায়। তিন বছর ধরে মামলাটি চলছে। কিন্তু মামলাটি নিষ্পত্তি না হওযায় এবং মামলা চালানোর মতো কেউ না থাকায় এ বছরও বন্দি থাকতে হয়েছিল মামুনকে। জামিনের জন্য অনেকবার ভিসা করে ভারতে গেছেন তিনি।
মাফুজা বলেন, ‘ছেলে মামুন বারবার বলেছে মাগো আমাকে মুক্ত করে নিয়ে যাও। সামান্য মোবাইল চুরির সন্দেহে ভাজন আসামির এতদিন জেল হতে পারে না। ভালো উকিল ধরো।’
তিনি বলেন, ‘মাসজুড়ে দিনমজুরির হাড়ভাঙা পরিশ্রমে যে আয় করেছি সব টাকা বসিরহাটের হান্নান ও পাপ্পু উকিলের হাতে দিয়েছি। শুধু বলতো সামনের মাসে জামিন হবে। কিন্তু জামিন করাতো না।’
এরই মধ্যে বৈশ্বিক মহামারী করোনার আতঙ্কে দমদম সেন্ট্রাল জেলে বন্দি-পুলিশের সংঘর্ষে বুধবার নিহত হয় মামুন।
সন্যাসিখোলা গ্রামের রায়হান মাহমুদ জানান, মামুনর এলাকার সাধারণ মানুষ এই নৃশংস হত্যার বিচার ও মামুনের লাশ দ্রুত দেশে (মায়ের কাছে) ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
মামুনের মামা মকবুল হোসেন বলেন, মামুনের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে পরিবারটি খুব অসহায়। তিনি নিজে ভাঙ্গা পাস্টিক কুড়ানোর কাজ করেন। তাদের এ দুনিয়ায় দেখার মতো কেউ নেই। সরকার যেন তার ভাগ্নের লাশটি দেখার ব্যবস্থা করে দেয় সেজন্য অনুরোধ করেন।
সাতক্ষীরা-৩৩ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম মহিউদ্দীন খন্দকার বলেন, সীমান্তে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে বিজিবি ও বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশ পাওয়া যায়। কিন্তু মামুনের ঘটনাটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিষয়।
তবে সাতক্ষীরার এক অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, মামুন যেহেতু অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিল সেহেতু আইনি জটিলতার কারণে তার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।
মানবাধিকারকর্মী মাধব দত্ত বলেন, কারা অভ্যান্তরে এমন মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। যেখানে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিরাপদ হবে। সেখানে এমন গুলি করে হত্যার ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। সুতরাং ঘটনাটির আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তদন্ত ও বিচার দাবি জানাচ্ছি।

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।