সামাজিক দূরত্ব না মানায় ২০ টি মামলায় ২০ জনকে জরিমানা: ধান কাটতে জেলার বাইরে যেতে চাইলে কৃষকরা যেতে পারবে

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:গত ৬ এপ্রিল,২০২০ তারিখে ভারত থেকে থেকে আসা ১৩ জনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে। তাদেরকে জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

কোয়ারিন্টাইন ও ত্রান বিতরন মনিটরিং এ ব্যস্ত সময় পার করেছেন জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলায় ” করোনা প্রাদুর্ভাবে ত্রাণ, সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক” মতবিনিময় সভা করেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ, সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় করোনা প্রতিরোধে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভা শেষে দুস্থ পরিবারের মাঝে সরকারি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
সাতক্ষীরার ২০০ ট্রাক শ্রমিকের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আজ সকালে এ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। এছাড়া, ট্রাক শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও,সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৬০০ জন পরিবহন শ্রমিকের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সংকটকালীন সময়ে কর্মহীন বন্দর শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, সেলুন শ্রমিক, ভ্যানচালক, মোটরবাইক চালক, ইজিবাইক চালকসহ বিভিন্ন শ্রেণির অসহায় মানুষের মাঝেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল হতে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা থেকে যে সকল কৃষক ধান কাটতে অন্য জেলায় যেতে চান তাদের জন্য প্রতিটি উপজেলায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষকদের যাতে কষ্ট করে উপজেলা পরিষদে আসতে না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যনে আবেদন সংগ্রহ করা হচ্ছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের অন্য জেলায় যাওয়ার অনুমতি প্রদান করা হবে। সেইসাথে সাতক্ষীরা জেলাতে ধান কাটতে যেন কোন সমস্যা না হয় তার জন্য কৃষকের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রস্তুত করা হচ্ছে।
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সংকটকালীন এই সময়ে বাজারে জনসমাগম কমাতে জেলা প্রশাসন সাতক্ষীরার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়  সকাল ৮ টা থেকে চালু হয়েছে দুইটি ভ্রাম্যমাণ বাজার।যার একটি শহরের সিটি কলেজ মোড় হয়ে খুলনা মোড়, চায়না বাংলা শপিং মল, সংগীতার মোড় ও ইটাগাছা মোড়ে অবস্থান করবে অপরটি নারকেলতলা হয়ে, পোস্ট অফিস মোড়, শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক, সদর উপজেলা পরিষদ ও কলেজ মোড়ে একঘন্টা করে অবস্থান করে।জেলা প্রশাসনের এই ভ্রাম্যমাণ বাজারে চাল, ডাল, আলু পিয়াজ, তেল মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের সব্জি পাওয়া যাচ্ছে। নো প্রফিট নো লস এই ধারনাকে নিয়ে জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য জনসমাগম কমানো ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।সকল উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদে ভ্রাম্যমাণ বাজার কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। আগামীকাল থেকে ৪ টি ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ বাজার পরিচালিত হবে।
সাতক্ষীরা জেলার ঘরে থাকা স্কুল, কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রুপ ভিত্তিক রচনা, গল্প, কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীর নাম, শ্রেণি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মোবাইল নাম্বারসহ তাদের লেখা আগামী ৩০ এপ্রিল তারিখের মধ্যে dcsatkhira1984@gmail.com  এইমেইল ঠিকানায় পাঠাতে পারবেন।লেখার বিষয় ছাত্র ছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আজ সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটি উপজেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক  অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সহকারী কমিশনারদের নেতৃত্বে  সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং আনসারের সমন্বয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে  এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরন ও অভি্যান চলমান রয়েছে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা ও সরকারি আদেশ অমান্য করে ৬ টার পর দোকান খোলা রাখা এবং বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করার অপরাধে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযানে সর্বশেষ তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ২১ টি অভিযানে ২০ টি মামলায় ২০ জনকে ৮৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে তালা উপজেলায় ১ টি মামলায় ৩00 টাকা, শ্যামনগর উপজেলায় ১০ টি মামলায় ৩২০০ টাকা, আশাশুনি ৫ টি মামলায় ১৮০০ টাকা, কলারোয়া উপজেলায় ১ মামলার ২০০ টাকা এবং জেলা প্রশাসনের ৩ মামলায় ৩০০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধে মোট ১৯৮৬ টি মামলায় ২০ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলার সকল উপজেলায় বেসরকারি ত্রাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে।  উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের একদিনের বেতন সমপরিমাণ অর্থ, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ তাদের  বেতন এবং প্রবাসী ও ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ীগণ তাদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য প্রদান করছেন। কালিগঞ্জে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা বেসরকারি ত্রাণ তহবিলে সহায়তা পাওয়া গিয়েছে যার দ্বারা ৪০০০ মানুষকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে ও পর্যায়ক্রমে আরও সাহায্য করা হবে। তালায় প্রায় ৪.৫ লক্ষ টাকা বেসরকারি ত্রাণ তহবিলে সহায়তা পাওয়া গেছে। দেবহাটায় ২.৬৫ লক্ষ টাকা বেসরকারি ত্রাণ তহবিলে জমা হয়েছে যার দ্বারা ৫ টন চাল ক্রয় করা হয়েছে। আশাশুনিতে ৫ লক্ষ টাকা বেসরকারি ত্রাণ তহবিলে জমা হয়েছে। অন্যান্য উপজেলাতেও বেসরকারি ত্রাণ তহবিলে সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষ সাহায্য প্রদান করছেন।
তথ্য অধিদপ্তরের একটি সহ মোট ৩টি সচেতনতামূলক মাইকিং অব্যাহত আছে। সাতক্ষীরা শহরে এবং প্রতিটি উপজেলায় রাস্তায় রাস্তায় জীবাণু নাশক স্প্রে করা হচ্ছে। মেশিনের মাধ্যমে রাস্তায় পানি ছিটানো অব্যাহত আছে। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ১০০০ লিটারের ২টি পানির ট্যাংকের মাধ্যমে জীবানু নাশক স্প্রে করা হচ্ছে।  উপজেলায় বিতরণের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকার মাস্ক ক্রয় করা হয়েছে।  ইতোমধ্যে 3১৭০০ মাস্ক মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।  জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলায় ৬০০ হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সকল কার্যক্রম ফেসফুকে নিয়মিত পোস্ট করা হয়। প্রতিদিন রাত ৮ টায় ফেসবুক লাইভ এবং লোকাল ক্যাবল টিভির মাধ্যমে জেলার সামগ্রিক কার্যক্রম জেলা প্রশাসক তুলে ধরেন।
গত 4/5 দিনে নারায়নগঞ্জ, মাদারিপুর এবং শরিয়তপুর থেকে সেখানে ঘোষিত লক ডাউনের মধ্যেও 1২ হাজারের মত মানুষ সাতক্ষীরা জেলাতে এসেছে। এদের মধ্যে 2977 জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে এবং ৮983 জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২৫ জন, শ্যামনগর উপজেলায় ১০৮ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৬৩৩ জন এবং আশশুনি উপজেলায় ২৫ জন, দেবহাটা উপজেলায় ৩৩৩ জন, তালা উপজেলায় ১০00 জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
সাতক্ষীরা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এ পর্যন্ত ২১২ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। ২৮ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আশার কথা হলো সবাই করোনা নেগেটিভ।
সাতক্ষীরা জেলায় বরাদ্দ কৃত ত্রাণ সহায়তা উপজেলা ও পৌরসভাওয়ারী বন্টন করে দেয়া হয়েছে। সাতক্ষিরা সদর উপজেলায় 159 মেট্রিক টন চাল ও নগদ 6,38,৫76/- টাকা, কলারোয়া উপজেলায় 90 মেট্রিক টন চাল ও নগদ 4,49,908/- টাকা, তালা উপজেলায় 105 মেট্রিক টন চাল ও নগদ 4,93,908/- টাকা, আশাশুনি উপজেলায় 72 মেট্রিক টন চাল ও নগদ 504145/- টাকা, দেবহাটা উপজেলায় 59 মেট্রিক টন চাল ও নগদ 3,51,931/- টাকা, কালিগঞ্জ উপজেলায় 9৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৪,80,408/- টাকা, শ্যামনগর উপজেলায় 104 মেট্রিক টন চাল ও নগদ 5,70,০76/- টাকা, সাতক্ষীরা পৌরসভা 93 মেট্রিক টন চাল ও নগদ 5,21,885/- টাকা এবং কলারোয়া পৌরসভা 31 মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১,37,154/- টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সরকারি ত্রাণের তালিকা এবং বিতরণে অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ও দূর্ণীতি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করা হবে। ঘরে থাকুন, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন, নিরাপদে থাকুন। আপনি ঘরে থাকলে ভালো থাকবে আপনার পরিবার, ভালো থাকবে জাতি, ভালো থাকবে দেশ।

জনস্বার্থে সকল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

প্রেস নোট 20/৪/২০২০
এস এম মোস্তফা কামাল
      জেলা প্রশাসক
        সাতক্ষীরা
Please follow and like us:

Check Also

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তান নিয়ে ট্রেনের নিচে নারীর ঝাঁপ: মারা যান মা-ছেলে

হাজীগঞ্জে এক বছরের সন্তান আব্দুর রহমানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন মা তাহমিনা (২৩)। এতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।