খুলনা বিভাগের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা করোনা মুক্ত: ডা. নাসিমা সুলতানা: জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মন্তব্য

ক্রাইমর্বাতা ডেস্ক রিপোর্ট:   সোমবার দুপুর ২.৩০ মিনিটে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন অধিদফতরটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। জানান, ২৭ এপ্রিল র্পযন্ত খুলনা বিভাগের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলাতে এখনো কোন করোনা রোগী সংক্রামিত হয়নি। তিনি আরো জানান সাতক্ষীরা জেলা এখনো করুনা মুক্ত। তাকে যশোর জেলার মধ্যে গননা করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল   রোববার যশোরের শার্শা উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত মাহমুদুর রহমান সমুন (৩২) নামের একজন স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। সুমন সাতক্ষীরা জেলা শহরের উত্তর কাটিয়া এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। স্ত্রী, ৮ বছর বয়েসের একটি ছেলে, বাবা, মাকে নিয়ে ওই ভাড়া বাড়িতেই তার বসবাস।

সারাদেশে সরকারি ছুটি। বহু এলাকা লকডাউন। এক জেলা থেকে আর এক জেলার প্রবেশ পথ, এমনকি এক উপজেলা থেকে আর এক উপজেলার প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গেলে তার বাড়ি লকডাউন করা হচ্ছে। তাকে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এমনকি অনেককে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনেও রাখা হচ্ছে।
এই যখন অবস্থা তখন যশোরের শার্শা উপজেলায় কর্মরত একজন স্বাস্থ্য কর্মী কিভাবে যশোর জেলার সীমানা পেরিয়ে সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ করলেন এ প্রশ্ন এখন সাতক্ষীরাবাসীর। বিশেষ করে ঐ স্বাস্থ্যকর্মী বেনাপোল আন্তর্জাতিক চোকপোস্টের ইমিগ্রেশনে ভারত থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিলেন বলে জানা গেছে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্য কোন লক্ষণ দেখা দেওয়ায় ২৫ এপ্রিল তার নমুনা সংগ্রহ করে যশোরের স্বাস্থ্য বিভাগ। সেই ব্যক্তি কীভাবে যশোরের সীমানা পেরিয়ে সাতক্ষীরায় আসলেন? এ প্রশ্ন সচেতন মহলের।
এই ঘটনার পর সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের ফেসবুক পেইজে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে ‘যারা সাতক্ষীরার বাহিরে থেকে কিংবা সাতক্ষীরা থেকে বাহিরের জেলায় গিয়ে সরকারি /বেসরকারি চাকুরি করেন, তাদের যাতায়াত বন্ধ। কর্মস্থলে থাকতে হবে। অন্যথায় কোন চেকপোস্ট/পুলিশি টহলে পড়লে আটক হবেন। পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া পর্যন্ত সবাইকে স্ব স্ব কর্মস্থলে থেকে দায়িত্ব পালন করতে অনুরোধ করা হলো। বাসায় থাকুন নিরাপদে থাকুন।’
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসকও ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:
‘সম্মানিত জেলাবাসী,
আপনারা হয়তো জেনেছেন সাতক্ষীরা জেলার সদরে একজন করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। তিনি করোনা আক্রান্ত যশোরের শার্শা উপজেলা হাসপাতালে চাকরি করতেন এবং সাতক্ষীরা থেকে যাতায়াত করতেন। রবিবার (২৬ এপ্রিল) যশোরে পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে সাতক্ষীরা চলে আসেন। আজ (রবিবার) সকালে তার করোনা পজিটিভ হয়েছে মর্মে সিভিল সার্জন আমাকে জানিয়েছেন। আমি আক্রান্তের সাথে কথা বলেছি। সে যেন মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকে দুশ্চিন্তা না করে বা নিজেকে দোষারোপ না করে সে পরামর্শ দিয়েছি। বলেছি তোমার পাশে আছি।
তুমি দ্রুত আরোগ্য লাভ করবা। ইতোমধ্যে ঐ বাড়িসহ তার সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের চিহ্নিত করে লকডাউন করা হয়েছে। যেহেতু তিনি একটি আক্রান্ত জেলায় হাসপাতালে চাকরি করতেন সে কারণে তার আক্রান্ত হওয়া খুব স্বাভাবিক। তদুপরি আমি সিভিল সার্জনকে অনুরোধ করেছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা বা খুলনায় তার পুনরায় পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে।
প্রিয় জেলাবাসী এ সংবাদে আতঙ্কিত না হয়ে অধিক সতর্ক হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। মনে রাখতে হবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ আজ আক্রান্ত বাংলাদেশের প্রায় সব জেলা আক্রান্ত হয়েছে। তবে এটা ঠিক আমরা সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা নেওয়ার পরও অসচেতনতার জন্য আজ আমরা এমন সংবাদের মুখোমুখি। আমাদেরকে আরো সমন্বিতভাবে কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে করোনা মোকাবিলা করতে হবে। আমি সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।
আইডিসিআর কি বলে এবং কিভাবে চিহ্নিত করে তা দেখে আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আপনাদের অবহিত করবো। সকলে ঘরে থাকুন। বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাবেন না।
জেলা প্রশাসক।’
মাননীয় জেলা প্রশাসকও জানেন ঐ ব্যক্তি যশোর থেকে এসেছেন। আমাদের প্রশ্ন বর্তমান পরিস্থিতিতে এভাবে আসার সুযোগ আছে কি না? না থাকলে তিনি এলেন কিভাবে?
এই ঘটনা উল্লেখ না করলেও সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ প্রশাসনের পোস্টে নতুন করে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। চাকুরীজীবীদের স্ব স্ব কর্মস্থলে থেকে দায়িত্ব পালন করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে একটানা সরকারী ছুটি চলছে। প্রতিদিনই সাতক্ষীরা শহরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ বিভিন্ন দপ্তরের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে সতর্ক করে মাইক প্রচার করা হচ্ছে। তারপরও স্বয়ং একজন সরকারী কর্মচারীর এভাবে এক জেলার সীমানা পেরিয়ে আর এক জেলায় আসাটা কোন ক্রমেই যুক্তিসংগত হতে পারে না। রক্তের নমুনা নেওয়ার পর যার কোয়ারেন্টিনে অথবা আইসোলেশনে থাকার কথা এমন একজন ব্যক্তিকে যশোরের স্বাস্থ্য বিভাগ কিভাবে বাড়ি আসার সুযোগ দিলেন, নাকি তিনি কাউকে না জানিয়েই এলেন-তা খতিয়ে দেখা দরকার।
যিনি অপরের স্বাস্থ্য সেবা দিতে যেয়ে নিজে আক্রান্ত হয়েছেন তার প্রতি সমবেদনা জানানোর কোন ঘাটতি নেই আমাদের। জেলা প্রশাসকের মতো আমরাও তাকে সাহস দিতে চাই। তার দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করি। একই সাথে যার যা দায়িত্ব সে সেটা পালন করছেন কীনা সেটা নিশ্চিত করতে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদেরকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার আহবান জানাই। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় সাতক্ষীরা অনেক দিন করোনামুক্ত জেলা ছিল। এখন করোনা সাতক্ষীরাতেও থাবা বসিয়েছে। এই থাবা যেন সম্প্রসারিত হতে না পারে সে জন্য আসুন-আমরা সবাই সরকারী নিদের্শনা মেনে চলি। ঘরে থাকি-নিরাপদে থাকি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন. ‘পরিকল্পিতভাবে করোনামুক্ত সাতক্ষীরা জেলাকে করোনা সংক্রমিত একটি জেলা বানানো হলো। বিষয়টি নিয়ে আমি যশোর জেলা প্রশাসক এবং যশোর সিভিল সার্জনের সাথে ইতোমধ্যে কথা বলেছি। সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। যেহেতু মাহমুদুর রহমান যশোর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত এবং তার কর্মস্থল থেকেই তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বিধায় তার চিকিৎসা যশোর জেলাতেই হওয়া উচিত। তিনি কীভাবে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত একটি জেলা থেকে করোনামুক্ত সাতক্ষীরাতে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন সেই জিজ্ঞাসা আমারও। এ ব্যাপারে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমি করোনা আক্রান্ত মাহমুদুর রহমানের খোঁজ-খবর রাখছি। যাতে মনোবল না হারায় সেজন্য তাকে সাহস যুগিয়েছি। বর্তমানে তিনি ভালো আছেন’।

সাতক্ষীরার সচেতন মহলের জিজ্ঞাসা ‘তাহলে কি পরিকল্পিতভাবে করোনামুক্ত সাতক্ষীরা জেলাকে করোনা সংক্রমিত জেলা বানানো হলো ? যশোর স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেনো তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি সেটি খতিয়ে দেখা জরুরী

 

সোমবার দুপুর ২.৩০ মিনিটে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন অধিদফতরটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা  সাতক্ষীরাকে আজ ২৭ এপ্রিল র্পযন্ত করোনা মুক্ত জেলা ঘোষণা করেন।  ।

 

 

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।