মুহা. রুহুল আমিন : সাড়া বিশ্ব নিথর নিস্তব্ধ। সর্বত্রই হাহাকার অনিশ্চয়তা। করোনা (কোভিড-১৯) গোটা বিশ্বকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির চাকা অচল। পৃথিবী নামক গ্রহ আজ লকডাউন। এমন ভয়ংকর দৃশ্য বিশ্ববাসী আগে কখোনো দেখেনি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সুবাদে পৃথিবীর সুপার পাওয়ার সমূহ মানুষ হত্যার মারনাস্ত্র তৈরী করে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রনে নেয়ার যে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়েছিলো, তারা আজ শুধু অসহায়ই নয় বরং স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে আসমানের শক্তি ছাড়া এটাকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়। আল্লাহর জমিনে বাড়াবাড়ির সীমা ছাড়িয়ে গেলে আল্লাহ পাকড়া করেন। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা:
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সুরা রুম-৪১)
বাংলাদেশে বন্ধি জীবন শুরু হয়েছে গত ২১ মার্চ ২০২০ থেকে। সরকার সাধারন ছুটি ঘোষণা করে। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মার্কেট, গনপরিবহন বন্ধ। এই বন্ধি জীবন অনেকটা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কেউ জানে না এ গজব থেকে কবে মুক্তি পবো? এই বন্ধি জীবন কবে শেষ হবে? কবে মুক্ত আকাশের নিচে প্রান ভরে নিশ্বাস নেবো? অস্থির ! আমি ভাবি, আপনারা কি বন্ধি জীবনের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারছেন?
যখন ক্ষমতাধরদের রক্তাক্ত ছোবলে মানবতা ক্ষতবিক্ষত। অশ্লীলতা,নগ্নতা,বেহায়াপনা,খুন, ধর্ষন, নারীর শ্লূীলতাহানী চলে দিদারছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে মানুষ হত্যা, গুম, জুলুম, নীর্যাতন আর কারাগারে পাঠিয়ে ক্ষমতার দাপটে ফেটে পড়ছে। স্বজন হারানোর ব্যথায় অসহায় মানুষ ডুগরে কেঁদে কেঁদে খুজছে তার মালিক কে, তখন মালিকের ঘোষণা:
পৃথিবী,আকাশসমূহ ও সমগ্র জাতির উপর রাজত্ব আল্লাহরই জন্য নির্ধারিত এবং তিনি সব কিছুর উপর শক্তিশালী ( মায়েদাহ-১২০)
এই রাষ্ট্র কোন কিছুরই দায় নেয় না৷ অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য রাষ্ট্রের বরাদ্দ কৃত খাদ্য সামগ্রি প্রতিনিয়তো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে একাত্তরের কোম্বল চোরের উত্তরসুরীরা। অথচ এ দূরদিনে নিজ উদ্যোগে ত্রানসামগ্রী বিতরন করতে যেয়ে গ্রেফতার হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অনেক দায়িত্বশীল। নিজের জমানো টিপিনের টাকা দিয়ে অসহায় মানুষের সহযোগিতা করতে যেয়ে সোনার ছেলেদের হাতে রক্তাক্ত হয়ে কারাগারে ডুগরে কাঁদছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অনেক ভাইরা। আসলে কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না।
যে রাষ্ট্র মহাকাশে ৩০০০ কোটি টাকার স্যাটেলাইট পাঠাতে পারে, সে রাষ্ট্র দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজে দায়িত্বরত চিকিৎসককে সুরক্ষা সরঞ্জাম দিতে পারে না! পারে শুধু গণভবন থেকে সান্ত্বনা আর লাশের বিনিময়ে নগদ কিছু অর্থ সাহায্য ও এতিমের পরিবারের জন্য সমবেদনা জানাতে।
আজতাই বলবো, আসুন মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার প্রদান করি। ক্ষুধা এবং দারিদ্রতামুক্ত পৃথিবী গড়তে সবাই একযোগে কাজ করি ৷ মানুষের দুঃখ লাঘবে মানুষের পাশে দাড়াই ৷ ক্ষুধাত্ব মানুষের চোখের পানি ঝরছে নিরবে। তাদের কাছে আজ যেনো………….
“ ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।”
আজ সরকারের কাছে দাবি করবো, ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে খাবার পৌছে দিন। আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করুন। বিশেষ করে প্রবাসে অবস্থানরত ভাই বোনদের সকল সুবিধাদ নিশ্চিত করুন।
মরনঘাতি এ ভাইরাসে দেশে বিদেশ যারা মারা গেছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। মহামারীতে আক্রান্ত মানুষের জন্য মালিকের কাছে শেফা কামনা করছি। রাসুল (সঃ) এর শিখানো ভাষায় – আল্লাহহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি,ওয়াল জুনুনি, ওয়ালজুযামি, ওয়া মিন সাইয়িল আসক্বাম।
ছোঁয়াচে ভাইরাসটি আজ পৃথিবীর ২১০ টি দেশের মানুষে আক্রমন করছে। বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ মৃত্যু বরন করেছে। আক্রান্ত প্রায় ২১ লাখের মতো। প্রতিদিন বাড়ছে এ সংখ্যা। মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে করোনার ছোবলে ক্ষত বিক্ষত? মহামারী অতীতেও এমনটি হয়েছে। ওমর (রাঃ) এর খেলাফত কালে সিরিয়ায় মহামারীতে সেনাপতি আবু উবাইদা (রাঃ) সহ শত শত সাহাবায়ে কেরাম শহিদ হয়ে ছিলেন। ১৮৫২ সালে প্লেগে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার হাজী মক্কা শরীফে ইন্তেকাল করে ছিলেন। তবে মুসলমানরা পাবে প্রভুর কাছে শহীদের মর্যদা।
দুনিয়ার মানুষ! আজ আমরা মহান আল্লাহ তায়ালা কাছে তাওবাহ ইস্তেগফার করি,ভুলের জন্য মালিকের কাছে ক্ষমা চাই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়মাবলি মেনে চলি, মানুষকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সতর্ক করি।
দেখেন, কোনো একটি গুলি বা বোমার আওয়াজ ছাড়াই পৃথিবীর মানুষ ঘরে বন্দি হয়ে গেছে। মসজিদে মুসল্লীর সংখা সীমিত করা হয়েছে। উপাসনালয়গুলো খালি পড়ে আছে। ডাক্তার রোগী দেখতে অস্বীকার করছে। অসুস্থ প্রিয়জনের শয্যাপাশে প্রিয়জন থাকছেনা। পিতার জানাজায় অংশ গ্রহন করছেনা সন্তান।
২০ সেকেন্ড সাবান পানিতে যে ভাইরাস মারা যায়, তার কাছে পুরো বিশ্ব কত অসহায়।(২)
মুহা. রুহুল আমিন,(লেখক ক্রাইমর্বাতা ডক কম)