করোনায় আম নিয়ে উৎকণ্ঠায় সাতক্ষীরার ১৩ হাজার চাষি

ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট, সাতক্ষীরা:করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আম বাজারজাত করা নিয়ে শঙ্কা আর উৎকণ্ঠা ভর করছে সাতক্ষীরার প্রায় ১৩ হাজার আম চাষির মধ্যে। সারা দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি অধিকাংশ বড় বড় বাজার বন্ধ। এমন অবস্থায় অন্য জেলায় আম বাজারজাতের ব্যবস্থা করা না গেলে চাষিরা বিপুল লোকসানের মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরার আম বাগান। ছবিটি সাতক্ষীরা শহরের৫নং ওর্য়াডের মিয়াসাহেবের ডাংগা থেকে তোলা। ছবি: ক্রাইমর্বাতা

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলায় চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ২৯৯টি আম বাগান আছে। ১৩ হাজার ৯৯ জন চাষী আম উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। চলতি মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আম পাড়া শুরু হবে। তার আগেই আম পাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, সাতক্ষীরা জেলা থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩১ দশমিক ৮৩ মেট্রিক টন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৭ মেট্রিক টন নিরাপদ ও বালাইমুক্ত আম ইতালি, ডেনমার্ক, সুইডেন ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের আম চাষি ও বিদেশে আম রপ্তানিকারক শেখ আব্দুল আলিম বলেন, ১৫টি বাগানে তাঁর ২০ বিঘা জমিতে ২৫০-৩০০টি আম গাছ আছে। এসব আম বাগানের ইজারা ও পরিচর্যা করতে ঋণ নিয়ে খরচ করেছেন প্রায় তিন লাখ টাকা। এখন পরিচর্যা করছেন। আশা করেছিলেন সাড়ে ছয় লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এক প্রকার বন্ধ। বিদেশে আম রপ্তানি করতে পারবেন না। স্থানীয়ভাবে যা বিক্রি হবে তাতে এক লাখ টাকার বেশি উঠবে বলে তিনি মনে করছেন না।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর এলাকার আম চাষি নূরুল আমিন বলেন, জেলার বাইরে ও বিদেশে আমের বাজার ধরতে না পারলে সবাই লোকসানে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি একটি ১৭ বিঘার আম বাগান তিন লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। দুই সপ্তাহ পর থেকে আম উঠলে আর বাজার স্বাভাবিক থাকলে খুব সহজে তা ছয় লাখ টাকা বিক্রি করা যাবে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মথুরেশপুর গ্রামের লিয়াকত হোসেনের ২২ বিঘার আম বাগান আছে। বিদেশে পাঠানোর জন্য তিনি বাগানের যত্ন করছেন। খরচও হয়েছে অনেক। করোনা পরিস্থিতির কারণে আম বাজারজাত করা যাবে না বলে মনে করছেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে তাঁকে লোকসান গুনতে হবে।

সাতক্ষীরার আম বাগান। ছবিটি সাতক্ষীরা শহরের৫নং ওর্য়াডের মিয়াসাহেবের ডাংগা থেকে তোলা। ছবি: ক্রাইমর্বাতা

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের আমের চেয়ে সাতক্ষীরার আম কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে পাকে। এ জেলার আম স্বাদে, মানে ও গুণে বেশ ভালো। সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও ক্ষিরসরাইসহ বিভিন্ন জাতের আম বিদেশে রপ্তানি হয়। দেশের বাজারেও ভালো কদর। বর্তমান পরিস্থিতিতে চাষিরা যাতে অনলাইনে আম বিক্রি করতে পারেন, সেই চিন্তা করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে এবার বিদেশে আম রপ্তানি করার সুযোগ নেই। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দেশের অন্য জেলায় বাজারজাত করা সম্ভব হবে না হয়তো। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে সাতক্ষীরার উৎপাদিত আম ১৪০-১৫০ কোটি টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে চাষিরা বিপুল টাকার লোকসানে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Please follow and like us:

Check Also

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বেনজীর আহমেদের সম্পদের তথ্য চাইল দুদক

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।