সাতক্ষীরায় ৬৪ ভাগ পরিবার সরকারের দেয়া সহায়তা পাচ্ছেন!

ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা: সরকারি হিসাব মতে সাতক্ষীরা জেলার ৬৪ ভাগ পরিবারই ত্রাণ ও সরকারী সহায়তা পাচ্ছেন। তবে বেসরকারী হিসাবে এর সংখ্যা অনেক কম। করোনাভাইরাস জনিত সরকারী ছুটির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ এবং সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অন্তভুক্ত পরিবারের সদস্যরা এই সহায়তা পাচ্ছেন। নাবেল করোনা ভাইরাসের কারণে সাতক্ষীরার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে কয়েক লক্ষ মানুষ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলাটিতে মোট জনসংখ্যা ২৩ লক্ষ ১৭ হাজার ১৫৮ জন। নিয়মানুযায়ী দেশে প্রতি বছরে জনসংখ্যা ৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়। সেই হিসাব মতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সাতক্ষীরাতে লোক সংখ্যা দাড়াবে ২৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ১৫ জন।
বেশির ভাগ পরিসংখ্যান সূত্রনাযায়ী একটি পরিবারে ৪ জনকরে সদস্য ধরলে জেলাতে পরিবার সংখ্যা দাঁড়াবে ৬ লক্ষ ০৮ হাজার ২৫৩টি। জনসংখ্য(সুত্র:পকেট বুক-২০১৬)।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায় জেলায় করোনায় কর্মহীন ১,১৩,৮০০ টি পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাইল বিতরণ করা হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত মোট বিতরণের পরিমাণ ১১৩৮ মে:টন চাইল ও ৫১ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে সদরে ২০৭ মে:টন চাইল ও ৮ লক্ষ ৩ হাজার ৫শ টাকা, কলারোয়াতে ১২৯ মে:টন চাইল ও ৫ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা,তালাতে ১৪৬ মে:টন চাইল ও ৬ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা, আশাশুনিতে ১৩৫ মে:টন চাইল ও ৬লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা,দেবহাটাতে ১৩৫ মে:টন চাইল ও ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, কালিগঞ্জে ১৩৭ মে:টন চাইল ও৬ লক্ষ ৪৪ হাজার ৫শ টাকা,শ্যামনগরে ১৫৩ মে:টন চাইল ও ৭ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা,সাতক্ষীরা পৌরসভাতে ১০০ মে:টন চাইল ও ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা এবং কলারোয়াতে ৪৫ মে:টন চাইল ও ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। যেখানে দৈনিক চাউলের প্রয়োজন ১২৩৬ মে:টন।
খাদ্য পরিস্থিতি ২০১৮-১৯ অনুযায়ী জেলাতে ১৭ লক্ষ ৯২ হাজার ৭৫৩ বন লোক সংখ্যা কৃষক পরিবারের সাথে জড়িত। তাদের পরিবার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫৫০টি। মৎস,চাকুরী,শ্রমিকসহ অন্যান্য পেষায জড়িত রয়েছে ৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৪০৫জন। যাদের পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ায় এক লক্ষ ৪ হাজার ৮৮১ জন। সর্বমোট সাতক্ষীরা জেলাতে ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার ৪৩১টি পরিবার রয়েছে। তবে একটি পরিবারে ৪ জন সদস্য থাকলে পরিবার সংখ্যা হবে ৫ লক্ষ ৭৯ হাজার ২৮৯ টি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতাভোগীর সংখ্যা ২,৩১০ জন, বয়স্ক ভাতা ৬৮,৭২৬ জন, বিধবাভাতা ৩১,৬৬৪ জন, প্রতিবন্ধী ভাতা ২৭,৫৭৪ জন, অনগ্রসর ভাতা ৭৭২ জন, হিজরা ভাতা ৩৪ জন, ওমমএস ৬০০০ পরিবার, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি ১,২৮,৮৩১ পরিবার এবং ভিজিডি কর্মসূচির সুবিধাভোগী পরিবার ২০,৯৩৩ পরিবার তালিকাভুক্ত রয়েছেন। তারা নিয়মিত সরকারী সহায়তা পেয়ে থাকেন। এতে ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৮১২টি পরিবার সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অন্তভুক্ত পরিবারের সদস্যরা এই সহায়তা পাচ্ছেন। ফলে জেলার ১৫ লক্ষ ১৯ হাজার ২৪৮ জন ব্যক্তি সরকারের সহয়াতা পাচ্ছে বলে জেলা প্রশাসনের দাবী।
জেলা কৃষি বিভাগের হিসাব মতে জেলাতে ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমি আছে। এসব জমিতে ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫৫০টি পরিবার কৃষি কাজ করে থাকে। এর মধ্যে ভুমিহীন চাষী রয়েছে ৬৭ হাজার ২৩০টি,প্রান্তিক চাষী রয়েছে এক লক্ষ ৩১ হাজার ৩৭টি,ক্ষুদ্র চাষী রয়েছে এক লক্ষ ৯৫৭টি,মাঝারি চাষী রয়েছে ৪৪ হাজার ৮৪২টি এবং বড় চাষী রয়েছে ১৪ হাজার ৪৮৪টি। খাদ্য বিভাগের হিসাব মতে একজন ব্যক্তির দৈনিক ৪৪২ গ্রাম চাউল (দানা শস্য) প্রয়োজন। সেই হিসাবে দৈনিক জেলাতে চাইলের প্রয়োজন ১২৩৫.৪২ মে:টন। যা মাসের হিসাবে দাড়ায় ৩৭৭৪.৩৪ মে:টন। বছর হিসেবে দাঁড়ায় ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮৯২ মে:টন। সেই হিসাবে জেলা প্রশাসন রবিবার পর্যন্ত যে খাদ্য বিতরণ করেছে তার পরিমাণ হলো ৮৫০ মে:টন। যা জেলা বাসির এক দিনের খাদ্যের পরিমান। জেলা বাসির এক বেলা খানার পরিমাণ হলো ৪১১.৪০ মে:টন।
তবে এসব তথ্যকে খাতা কলমের ম্যারপ্যাচ বলে অবিহীত করেছেন ভুক্ত ভোগীরা। সাতক্ষীরা পৌরসভা ও কয়েকটি গ্রামে মানুষের সাথে খোজ নিয়ে জানা গেল বেশির ভাগ মানুষই সরকারের সহায়তা পাচ্ছেনা। ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে একটি ইউনিয়নে ৬হাজার পরিবার । সরকারের সব সহায়তা মিলে ইউনিয়নটিতে উপকার ভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৩শ এর মত। আরো কয়েকটি ইউনিয়নে ও একই চিত্র। ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পরিবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সরকারের সহায়তা পেয়ে থাকে। এখানকার যাবতীয় তথ্য একটি পরিবারের মাঝে এক বার সরকারের সহায়তা বিতরণের চিত্র মাত্র।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান,সরকারের দেয়া ত্রাণ সামগ্রী ভুক্তভোগীদের মাঝে পৌছানোর কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা-২ আসনের মাননীয় জাতীয় সংসদ বীর মোস্তাক আহম্মদ রবি জানান,জনসংখ্যা ও দারিদ্র্যের আনুপাতিক হারে ত্রাণ ও সাহায্য কার্ডেওর পরিমান অপ্রতুল।
আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা ৩/৫/২০২০

 

Please follow and like us:

Check Also

২৮শে এপ্রিল খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারেও ক্লাসের পরিকল্পনা

আগামী ২৮শে এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।