ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট:সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাবে হাসপাতালের বাইরেই ভ্যানের উপরেই গৃহবধুর সন্তান প্রসবের ঘটনায় পর সকলের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে চিকিৎসা সেবার নামে কী হচ্ছে জেলায়। চিকিৎসকের অভাবে হাসপাতালের বাইরেই ভ্যানের উপরেই গৃহবধুর সন্তান প্রসবের ঘটনা নিয়ে ভিডিওসহ প্রতিবেদন প্রকাশের পর জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জেলার স্বাস্থ্যবিভাগের কার্যক্রম নিয়ে। তদন্ত কমিটি গঠিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন হুসাইন শাফায়েত।
পরিবারের দাবী শহরের দুটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলেও করোনার ভয়ে সেখানে ভর্তি না নিয়ে সদর হাসপাতালে যাওয়ার পরার্শ দেওয়া হয়। সরকারি হাসপাতালে গিয়েও কোন চিকিৎসা না পেয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভ্যানের উপর সন্তান প্রসব করাতে বাধ্য হয়েছেন।
জানা যায়, গত শুক্রবার (১ মে) সকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়নের ছনকা গ্রামের গৃহবধু শিমুলী রাণী প্রসব বেদনা নিয়ে সদর হাসপাতালে যায়। চিকিৎসকের অভাবে সদর হাসপাতালে ও করোনার ভয়ে তাকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। চিকিৎসকদের না পেয়ে সঙ্গে থাকা লোকজন ভ্যানের উপরেই কাপড় ঘিরে ডেলিভারি করান। অবশেষে হাসপাতালের বাইরেই ডেলিভারি হওয়ার পর আর হাসপাতালে ভর্তি না করেই সদর উপজেলার মাছখোলার ঝুটিতলা এলাকায় বাবার বাড়ি চলে আসেন। বর্তমানে তিনি বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে বাইরেই এই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি দাড়িয়ে দেখেও হাসপাতালের কেউ এগিয়ে আসেননি বলে গৃহবধুর পরিবার থেকে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জানার পর নড়ে চড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
শিমুলী রাণী সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়নের ছনকা এলাকার বিধান কুমার দাসের স্ত্রী।
গৃহবধুর মা অষ্টমী রাণী দাশ বলেন, আমার মেয়ে শিমুলী রাণীর গত বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) রাতে প্রসব বেদনা উঠে। পহেলা মে সকালে মেয়েকে ডক্টরস ল্যাব এন্ড হসপিটালে নিয়ে গেলে তারাও ভর্তি নেয়নি। পরে বেসরকারি বড় হাসপাতাল চায়না-বাংলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে তারা ভর্তি নেয়নি। দুটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা ভর্তি না নিয়ে সদর হাসপাতালে যেতে বলে। সদর হাসপাতালে যাওয়ার পর জরুরী বিভাগে যারা ছিলেন তাদের একাধিকবার ডাকার পর করোনার ভয়ে তারা এগিয়ে আসেননি। সে সময় আমার মেয়ের প্রসব বেদনা আরো বাড়তে থাকে। জরুরী বিভাগে বাইরেই ভ্যানের উপর কাপড় দিয়ে ঘিরে ধাত্রীর মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সন্তান প্রসব করানো হয়। এতে মা এবং বাচ্চার প্রচন্ড কষ্ট হয়েছে। কষ্ট পাওয়া কারণে মা ও বাচ্চা কিছুটা অসুস্থ।
গৃহবধু শিমুলী রাণী বলেন, সেদিন প্রসব বেদনায় কাতরেছিলাম। কিন্তু হাসপাতালের কেউ এগিয়ে আসেননি। বেশি সময় যন্তনা পাওয়ার কারণে বাচ্চা একটু অসুস্থ। বাচ্চাকে স্থানীয় ডাক্তারকে দেখানো হচ্ছে।
শিমুলী রাণীর প্রতিবেশী কাকা ফরিদ উদ্দীন বাপ্পী বলেন, সদর উপজেলার ঝুটিতলা গ্রামের শ্রমিক পরেশ দাসের বড় মেয়ে শিমুলি রানী দাসের সাথে বছর দেড়েক আগে ছোনকা গ্রামের সেলুন ব্যবসায়ী নরসুন্দর বিধান দাসের সাথে বিয়ে দেন। প্রথা অনুযায়ী মেয়ের প্রথম বাচ্চা প্রসবের জন্য বাপের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ৩০ এপ্রিল রাতে প্রসব বেদনা শুরু হলে সকালে তাদের সাথে শহরের দুটি বড় বড় হাসপাতালে গেলেও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে পরে সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। চিকিৎসকরা সকল রোগীর সাথে এই রকম অবহেলা করছে। ওই দিনের ঘটনায় তদন্ত করি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।
এসময় হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. অসীম সরকার বলেন, সেদিন আমি আমার রুমের মধ্যে ছিলাম কেউ আমাকে কিছু জানাইনি। বিষয়টি পরে অন্য স্টাফদের কাছ থেকে পরে জেনেছি। জরুরী বিভাগে ঢুকানোর আগেই ওই গৃহবধুর সন্তান প্রসাব হয়ে যায়। সে কারণে তাকে আর জরুরী বিভাগে উঠানো হয়নি। সাধারণত রোগীকে জরুরী বিভাগে ঢুকানোর পর চিকিৎসকে ডাকা হয়। সে কারণে তারা আমাকে ডাকেনি। স্টাফরা কেন আমাকে ডাকলো না সেটা আমি জানিনা। তাদের উচিত ছিলো আমাকে জানানো। আমার ডিউটি শেষ হওয়ার পর থেকে আমি ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে আছি।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিছুর রহিম বলেন, জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা পরিস্থিতির প্রথম থেকে ফিটসেরে জায়গায় পিছিয়ে। করোনার পরে স্বাস্থ্যসেবা অচল হয়ে আছে। ডাক্তারদের ভীতি জনিত কারণ অথবা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশাসনিক অযোগ্যতার কারণে হচ্ছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। সাধারণভাবে রোগীরা হাসপাতালে গিলে ডাক্তার না পেয়ে ফিরে আসার ঘটনায় প্রায় ঘটছে। সে কারণে সাধারণ রোগীরা হাসপাতালে যেতে অপরগতা প্রকাশ করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রাম ডাক্তার এবং ফার্মেসীর মতামতেই তারা ওষুধ ক্রয় এবং সেবন করছে। চিকিৎসাসেবা না পেয়ে অনেক রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হুসাইন সাফায়েত বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি এবং ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আজই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ভিডিও ফুটেজ এবং সিসি ক্যামের ফুটেজ দেখে দোষী হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সেদিন শুক্রবার থাকায় জরুরী বিভাগের জনবল থাকলেও অন্যান্য স্টাফরা ছিলেন না। এসময় হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. অসীম সরকার ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কারণে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
——-0——————–
ক্রাইমর্বাতা ডেস্ক রিপোট: সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাবে হাসপাতালের বাইরেই ভ্যানের উপরেই সন্তান প্রসব হল এক গৃহবধুর। গত পহেলা মে সকালে সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের বাইরেই এই ঘটনা ঘটে। এসময় অনেকেই দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করলেও বিয়ষটি নিয়ে কেউ কথা বলেননি।
চিকিৎসকদের না পেয়ে সঙ্গে থাকা লোকজন ভ্যানের উপরেই কাপড় ঘিরে ডেলিভারি করায় ওই বধূর। সদর উপজেলার মাছখোলা ঝুটিতলা ঋষিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ওই গৃহবধূ। অবশেষে হাসপাতালের বাইরেই ডেলিভারি হওয়ার পর আর হাসপাতালে ভর্তি না করেই বাড়িতেই চলে গেলেন তারা।
এসময় হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. অসীম সরকারের সাথে গত দুইদিন তার ব্যক্তিগত সেলফোনে কল করে রিসিভ না হওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি বা কেন হাসপাতালের বাইরে সন্তান প্রসব হল তা জানা যায়নি।
তবে রোববার রাতে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হুসাইন সাফায়েত ঘটনা শুনে হতবাক হয়ে বলেন, আপনার কাছে ফুটেজ থাকলে আমাকে দেন। ওই ফুটেজ দেখে এবং সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে তারপর কী করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।