হারিয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরার আঞ্চলিক প্রবাদ প্রবচন

এ্যাড: ইব্রাহিম খলিল মুহিম:   একসময়ে গ্রামবাংলায় অহরহ প্রচলিত ছিলো অনেক দামী ও অর্থবহ হাজারো প্রবাদ প্রবচন অথবা খনার বচন। এখনো মুরুব্বীদের বলতে শোনা যায় এমন খনার বচন। মুরুব্বীজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে সাতক্ষীরার কিছু প্রচালিত আঞ্চলিক প্রবাদ লেখার চেষ্টা করেছি। তবে সময়ের পরিক্রমায় এগুলো অনেকটা বিলুপ্ত প্রায় বা হারিয়ে গেছে কিন্তু গ্রামের লোকজনকে ক্ষেত্রবিষেশ মাঝে মাঝে এই খনার বচনগুলো ব্যবহার করতে শুনা যায়।
কিছু আছে বেশ অশ্লীল , নিজ দ্বায়িত্বে পড়বেন।

নিচে সাতক্ষীরার আঞ্চলিক প্রচালিত প্রবাদবাক্য গুলো উপস্থাপন করা হলোঃ

১ । হাড়ির খবর রাখে না ডাল ডাল করে = আসল খবর না জেনে উল্টা পাল্টা কথা বলা।
২। বিদেশের নাউয়ের কাটা পায়ে ফোটে । = ( বিদেশে অনেক সাবধানে না চললে বিপদে পড়তে হয়)
৩। #বোঝে_না_ধোনও, #কুতা_কয়_ঘনও।
৪ । মোটে পায় না চোয় দেকতি, নাম রাকি নজরদ্দি। = ( কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন )
৫ । মা ভাল যার, ছা ভাল তার , ঘন ফেলে পা , বারে বেটা বা … ( যে মেয়ের মা ভাল সে ভাল হয় , সে গরু ঘন পা ফেলে সে গরু ভালো হয় )
৬। #ভাতারের_বুন_আধ_ভাতারি = ( স্বামীর বোনের পন্ডিতি শোনাই লাগে )
৭। নাচো গোচো বউ আমার হাতের আন্দাজ আছে । = ( যতই খুশি হও আগের মতই সবকিছু চলবে)
৮। তাল তলায় বিয়িলো গাই,
সেই সম্পর্কে খালাতো ভাই।
৯। #পরের_টাকায়_পোদ্দারি,
#ম্যাভাই_আমার_সদ্দারি।
১০। টাকা নেই থলিতে
লাফ দে পড়ে গলিতে।
১১। নাবে ন বয়, বিনা নাবে কেউ তুলোও বয় না। = লাভের আশায় সবাই লোহা ও বইতে রাজি কিন্তু বিনা লাভে খড়কুটো ও বইতে রাজি নয় কেউ)
১২। পারে না বাল ছিড়তি
উঠে আসে নাত থাকতি।
১৩। অতরা গুড় আচ্ছের না = ( অতটুকু গুড় আধা সের নয় = পরিমানে বেশি আছে বুঝাতে )
১৪। মার পোড়ে না মাসির পোড়ে
খালা মাগির ধাউড়া ওড়ে। = ( স্বার্থের জন্য ভালবাসা প্রদর্শন )
১৫। দুরির পতে কুটোকান ভার । = ( দূরের পথে খড়কুটো ও অনেক ভারী মনে হয় )।
১৬ । এ বু তোর পেটে বাচ্চা কেন ? অথবা এ বু তোরর পেট বাধি,,
-কারো কথা ফেলতে পারি না
১৭। পেটে নেই ভাত, নাঙের উৎপাত = ( নাঙ মানে প্রেমিক )
১৮। কল্লি দোস নেই, বল্লি দোস।
১৯। দুরির জামাই কান্দে ছাতি
কাছের জামাই মুকি নাতি।
২০। যদি থাকে কাজ
সকাল কুরে সাজ।
সকাল কুরে হাটলি অনেকদূর যাওয়া যায় ।
২১। ভাত দেবার মুরোদ নাই
কিল মারার গোসায়।
২২। সামনের গরু যেম্মায় যায়, পিছনের টাও সেম্মায় যায়।
২৩। নিজের ধনে ধন্য পুরুষ
বাপে-ধনে আধা,
শ্বশুর বাড়ী যে বাস করে তার
চৌদ্দ পুরুষ গাধা।
২৪। উল্টো কচু গাল লাইগেচ।
২৫। ছুচো মাচায় উঠলি,দিনিমানে তারা দেখে।
২৬। নিখতি জানেনা মুছার জম বা, মাছ মারার গুননি খারা ধোরার জম।
২৭। যে যেমন ঢেমনি,
জগত দেখে তেমনি।।
২৮। যার নেই উত্তর পুব তার মনে সদাই সুখ।
২৯। জনেরে একটা কলা দেবা যাবে না,
তুই অর্ধেক দে আর আমি অর্ধেক দেই।
৩০। হাগি ছুচতে জানেনা, পাদি গোলা পানতি।
৩১। গ্রাম নষ্ট করে কানা, আর পুকুর নষ্ট করে পানা = ( পানা = কচুরিপানা )
৩২। মাইর কি সাত্তার ভাই,হাত দিও না গফ্ফার ভাই /
আরে লাথি জব্বার , এ বু তুই চুপ কর । = ( বেদম পিটানো বুঝাতে )
৩৩। মানুষ বাচেনা মানষির জালাই, কুকুর উট্টি দোতালাই !!
৩৪ । ঝাটায় কাটাখালি পার = মেরে ভূত নামিয়ে দেওয়া।
৩৫ । যার কুনোদিন মুখ দেখিনি সে বড় সুন্দরি, যার হাতের রান্না কুনোদিন খাইনি সে বড় রান্ধুনি।
৩৬। #অল্প_বয়সে_পাকলি_বাল , #তার_দু:খ চিরকাল।
৩৭ । থাকলো ঝোলা , হাটলো ভোলা = ( আত্মভোলা কাউকে বোঝাতে )
৩৮ । দা ‘ য় নেই ধার, মস্ত বড় আছাড় ।
৩৯ । কারোর গুনার সময় নেই। = ( আমি কাউকে ভয় পাইনা )
৪০ । মাথায় কি ছারপোকা হুয়েছে,,,,, ( মাথায় গোবর বুঝাতে )
৪১ । বাড়া ভাতে ওল ওলাস নে। = ( পাকা ধানে মই দিস না )
৪২ । খাটা খেয়ে হাটা দাও । = ( খাটা খেয়েছ এবার বিদেয় হও)
৪৩ । বিশাল আয়জন খুদির খির = ( খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি )
৪৪। ভাত পায়না বাবাঠাকুর খাটা খাটা করে । ( ভাতই জোটে না আবার ডাল খেতে চায় )
৪৫ । পা,য় নি ছাল চামড়া,
খাইতে চায় পাকা আমড়া।
৪৬। হুলো ডালি বাকার দিও না,
৪৭ । ভাত পায় না ঘরের দন্তি কান্দে।
৪৮ । যার মাচা নি,তার আবার বুধবার!!!
৪৯ । ভাত পায় না চা খায় ,হুন্ডা নিয়ে হাগদি যায়।
৫০ । কোপালে না থাকলি ঘি,ঠক ঠুকিলি হবে কি!!!
৫১। যতই রাত হোক বেলায় বেলায় বাড়ি যাবা লাগবে । ( বাড়ি যাবই , থাকব না )
৫২। গায় নেই গোস্ত, নাম রায়িছে মোস্ত।
৫৩। দাঁত উচো দাঁতাল …
৫৪ । নোব বার, নোব বার আট দিন,তিন নোববার পনোর দিন,,,,, ( দিন তারিখের হিসাব )
৫৫ । পাগল হলি জ্বালা খুপ।
৫৬। লাগাও পোল্ট্রি,,, বাজি ধরো , আমরা তোমার সাথেই আছি )।
৫৭ । নাতিখাতি বিলা গেল,শুতি পাল্লাম না। ( আঠারো মাসে বছর অর্থে)
৫৮ । পাছায় নেই কাপড় মাথায় ঘুমটা।
৫৯ । কনে আব্বাস , আর কনে গাবগাছ ,
বা , কনে সুরত আলি আর কনে জুতার কালি
= ( অতুলনীয় দুইটি বিস্তুর মধ্যে তুলনা বুঝাতে )
৬০ । পিরিতির পেত্নী ভাল।( যারে মনে ধরে সে যেমনই হোক সেই আমার পরী )
৬১। ছাদে লোক নেই বামপারে ভিড়।
৬২। মাগি প্যাদে মিনসের দুষ, মিনসে বলে আমার কুপালের দোষ।
৬৩ । দেখার কলা, খাওয়ার কলা না = ( বাইরে ঠিটফাট ভিতরে সদরঘাট )।
৬৪। চিৎ হইয়ি আলিপুর দেকবানি। = ( কোন কাজে ব্যর্থ হবার আশংকা থাকলে বা কাজটি অসম্ভব মনে হলে একজন আর একজনকে সম্ভাব্য ব্যর্থতার সতরকতা হিসেবে বলা হয় । আকাশ কুসুম কল্পনা অর্থে )।

নিজের মায়ের ভাষা নিয়ে লজ্জার কিছু নাই । এত সুন্দর প্রবচন গুলো সাতক্ষীরা হতে দিনে দিনে হারিযে যাচ্ছে । সেই চিন্তা থেকেই সংগ্রহ করা ।

আপনার জানা থাকলে আপনি ও লিখুন কমেন্টে । আপনারটা ও এখানে এ্যাড করা হবে।

সংগ্রহেঃ এ্যাড: ইব্রাহিম খলিল মুহিম
সম্পাদনায়ঃ মোঃ সাইফুজ্জামান মিঠুন

Please follow and like us:

Check Also

আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার

২০২৫ সালে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।