করোনায় সাতক্ষীরায় লোকসানের মুখে হাজার হাজার আম চাষী: রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন

আবু সাইদ বিশ্বাস:   ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: সাতক্ষীরা: করোনা ভাইরাস ও কালবৈশাখি ঝড়ে আমের সাম্রাজ্য সাতক্ষীরায় আমের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ঝড়ে পড়া সেই কাঁচা আম শুক্রুবার জেলার বাজারে বিক্রি হয়েছে পানির দামে। ৫ থেকে ১৫ টাকা পাইকারী দরে এসব আম ক্রয় করে ট্রাকে ভরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠিয়েছে পাইকারী ব্যবসায়ীরা। এদিকে ৩১ মে থেকে হিমসাগর আম বাজারজাতের সিদ্ধান্ত নেয়ায় শঙ্কা আর উৎকণ্ঠা ভর করছে আম চাষির মধ্যে। যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি আম বাজারজাতের ব্যবস্থা করা না গেলে চাষিরা বিপুল লোকসানের মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ২৯৯টি আম বাগানে আম চাষ হচ্ছে। ১৩ হাজার ৯৯ জন চাষী আম উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে আরো কয়েক হাজার আম চাষী রয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। মে মাসের শেষ সপ্তাহ সপ্তাহ থেকে আম পাড়া শুরু হবে। তার আগেই পাকা আম বাজারে উঠতে শুরু করবে।
জেলার প্রায় লক্ষাধীক পরিবার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে আম চাষের সাথে যুক্ত। পরিবারিক আম চাষের পাশা-পাশি বাণিজ্যিক ভাবে জেলাতে আম চাষ হয়ে আসছে ঐতিহ্যগত ভাবে। শুধুই তাই নয়, বর্তমান রাঝধানীর বেশীরভাগ বাজার গুলিতে প্রধানত এই জেলার আম সরবরাহ হয়। ফলে এই জেলার অর্থনীতির অন্যতম উৎস হচ্ছে আম। হিমসাগর আম ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে রপ্তানি হয়ে আসছে গতকয়েক বছর ধরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, সাতক্ষীরা জেলা থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩১ দশমিক ৮৩ মেট্রিক টন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৭ মেট্রিক টন নিরাপদ ও বালাইমুক্ত আম ইতালি, ডেনমার্ক, সুইডেন ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে এবছর আম রপ্তানি নিয়ে শঙ্কায় আম চাষীরা। আম রপ্তানি করা না গেলে আমের ন্যার্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে আম চাষীরা। হ্রাস পাবে দেশের রাজস্ব।
সাতক্ষীরা পৌরসভার মিয়াসাহেবের ডাঙ্গা গ্রমের আম চাষি জালেম খা ১০টি বাগানে তাঁর ১৫ বিঘা জমিতে ২০০-১৫০টি আম গাছ আছে। এসব আম বাগানের ইজারা ও পরিচর্যা করতে ঋণ নিয়ে খরচ করেছেন প্রায় তিন লাখ টাকা। এখন পরিচর্যা করছেন। আশা করেছিলেন সাড়ে ছয় লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন। কালবৈশাখি ঝড় ও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এক প্রকার বন্ধ। বিদেশে আম রপ্তানি করতে পারবেন না। স্থানীয়ভাবে যা বিক্রি হবে তাতে এক লাখ টাকার বেশি উঠবে বলে তিনি মনে করছেন না।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর এলাকার আম চাষি নূরুল আমিন বলেন, জেলার বাইরে ও বিদেশে আমের বাজার ধরতে না পারলে সবাই লোকসানে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি একটি ১৭ বিঘার আম বাগান তিন লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। দুই সপ্তাহ পর থেকে আম উঠলে আর বাজার স্বাভাবিক থাকলে খুব সহজে তা ছয় লাখ টাকা বিক্রি করা যাবে।
সাতক্ষীরা তালা উপজেলার খলিষখালি গ্রামের রহমান হোসেনের ২০ বিঘার আম বাগান আছে। খরচও হয়েছে অনেক। করোনা পরিস্থিতির কারণে আম বাজারজাত করা যাবে না বলে মনে করছেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে তাঁকে লোকসান গুনতে হবে।
সাতক্ষীরা সুলতানপুর কাঁচা-পাকা বাজার সমবায় সমিতির সভাপতি রাশেদ জানান, কালবৈশাখি ঝড় ও করোনায় আমের বেশ ক্ষতি হয়েছে। বাজার জাতকরণের কারণে দাম কম। আম চাষীদের পাশাপাশি তারাও আমরে ন্যার্য দাম নিয়ে শঙ্কায়।
একই ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রওশনআলী জানান, আম চাষী,খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতারা প্রণোদনার দাবী রাখে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে চাষিদের অনলাইনে আম বিক্রি করতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কালবৈশাখি ঝড়ে আমরে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমস্যা হবে না।
সাতক্ষীরা কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে এবছর বিদেশে আম রপ্তানি করার সুযোগ নেই। বর্তমানে দেশের অন্য জেলায় বাজারজাত করা সম্ভব হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে চাষিরা বিপুল টাকার লোকসানে পড়বে বলেও তাঁর আশঙ্কা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান,করোনা পরিস্থিতিতে নিরাপদ আম বাজারজাত করতে ইত্যোমধ্যে সবধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় আগামী ৩১ মে থেকে হিমসাগর, ৭ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আ¤্রপালি আম ভাঙা ও বাজারজাত করণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল আরো বলেন, সাতক্ষীরার আমের সুনাম রয়েছে। এই সুনাম ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যবসায়ী ও ফল চাষীদের নিয়ে নিরাপদ আম বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য সকলকেই সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।
আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: ০৮/০৫/২০২০-

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।