ঈদের পর সাতক্ষীরাসহ সারাদেশে করোনা অক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে

 ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোটঃ    সাতক্ষীরাসহ  ঈদের পর সারা দেশে ব্যাপক মাত্রায় করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ঈদ সামনে রেখে ঢাকা থেকে গ্রামের পথে ছুটছে লাখ লাখ মানুষ। যান চলাচলে শিথিলতা থাকায় নানা উপায়ে মানুষ যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর প্রবেশপথ চেকপোস্ট তুলে দিয়েছে। এর পর থেকে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে।

 

অনেকেই গাড়ি ভাড়া করে বা অ্যা¤ু^লেন্স, লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ ছোট ছোট বাহনে নানাভাবে বাড়ির উদ্দেশে ছুটছে।

এদিকে সারা দেশে ক্রমেই বাড়ছে করোনা রোগী ও মৃতের সংখ্যা। গতকাল এক দিনে রেকর্ড ২৪ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৩২-এ। ১ হাজার ৬৯৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হয়েছে ৩০ হাজার ২০৫। কয়েকদিন ধরে ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পথে মানুষের ঢল নেমেছিল মাওয়া, পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে। জনস্রোত থামাতে শেষ পর্যন্ত ফেরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলার পাশাপাশি বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মানুষের ঈদযাত্রা কিছুটা থামাতে সক্ষম হয় পুলিশ। কিন্তু দেশের অন্য ছয় বিভাগের যাত্রীদের গ্রামে যাওয়া আটকানো যায়নি। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গতকালও অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট কার, পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। এ অবস্থায় বিপদ বাড়ছে গ্রামের। করোনা সংক্রমণ এবার ঢাকার পাশাপাশি গ্রামের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাঁকজমক ঈদের চেয়ে জীবনটা বড়। বেঁচে থাকলে উৎসব করে ঈদ করা যাবে। কিন্তু ঈদ করতে গিয়ে যেন জীবন ঝুঁকিতে না পড়ে সেদিকে সবার নজর দিতে হবে। সবাইকে নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে। যারা নানা উপায়ে ঢাকা ছেড়েছেন তারা সেখানেই অবস্থান করুন

যারা এখনো কোথাও যাননি, তারা বাড়িতেই থাকুন। নিরাপত্তার কারণে সর্বস্তরে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলুন। অনেকে একত্রিত হয়ে এখানে সেখানে ঘুরতে যাওয়া যাবে না। কোনোভাবেই কোলাকুলি করা যাবে না। দীর্ঘদিনের প্রচলিত সামাজিক আচার অনুযায়ী ঈদে মুরব্বিদের সালাম করা এবং সালামি নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সুস্থ থাকতে এর কোনো বিকল্প নেই। এদিকে যান চলাচল শিথিল করে দিয়ে সাধারণ মানুষকে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ দিলেও ঢাকাবাসীকে গ্রামে যেতে নিষেধ করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি গতকাল স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেন, ঢাকাবাসীকে বলব, আপনারা গ্রামে যাবেন না। ঢাকায় অবস্থান করুন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞকরা বলছেন, সারা দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লেও দুই-তৃতীয়াংশের বেশি উপজেলায় এখনো সংক্রমণ ছড়ায়নি। এটি একটি আশাব্যঞ্জক বিষয় ছিল। কিন্তু সর্বোচ্চ সংক্রমিত রাজধানী থেকে যেভাবে লাখ লাখ মানুষ বাড়ি ফিরছে, তাতে ওই গ্রামগুলো আর নিরাপদ থাকবে না। সেখানেও সংক্রমণ ছড়াবে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে গ্রামে না যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেই সরকার দায়িত্ব শেষ করেছে। সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিলে হাজার হাজার মানুষ এভাবে জড়ো হতে পারত না। ঢাকা থেকে কীভাবে এত মানুষ বের হলো? চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশের প্রতি কি এসব মানুষকে ঠেকানোর নির্দেশনা ছিল না? এটি সমন্বয়হীনতার প্রমাণ। দুর্যোগ সামাল দিতে সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক বলেন, ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছে। লকডাউন কার্যকর ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার বিষয়ে শুরু থেকেই বলে আসছি। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতিদিন পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলে সতর্কবার্তা প্রকাশ ও প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ তা শুনছে বলে মনে হচ্ছে না। ওই সতর্কবার্তা শুনলে ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য হাজার হাজার মানুষ এভাবে ফেরিঘাটে ভিড় জমাত না।

Please follow and like us:

Check Also

২৮শে এপ্রিল খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারেও ক্লাসের পরিকল্পনা

আগামী ২৮শে এপ্রিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।