প্রেসবিজ্ঞপ্তি: প্রলয়ংকারী ঘূণিঝড়আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে সকল শ্রেণীর মানুষের আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ বঙ্গের প্রখ্যাত আলেম হাফেজ মুহাদ্দীস রবিউল বাশার। ২৩ মে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ দুর্দশায় উদ্বেগ এবং মানুষের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। বিবৃতিতে তিনি বলেন ‘২১ মে বৃহষ্পতিবার সুপার সাইক্লোন আম্পান বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করার সময় সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় সমুদ্র উপকূলবর্তী সাতক্ষীরা জেলাটি এই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাঁধ ভেঙে পানি সংলগ্ন এলাকার গ্রামগুলোকে ক্রমান্বয়ে তলিয়ে দিচ্ছে। মানুষের প্রাণহানি ছাড়াও শত শত কাঁচা বাড়িঘর বিধ্বস্ত, সহায়-সম্পত্তি, গাছপালা, চিংড়ি ঘের ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে বিপন্ন মানুষদের প্রতি আমি গভীরভাবে সমব্যথী।
এহেন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুবরণকারীদের পরিবার-পরিজন এবং দুঃখ-দুর্দশায় পতিত বেঁচে থাকা মানুষদের সহানুভূতি জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।
উপদ্রুত এলাকায় বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য, সুপেয় পানি, ওষুধের ও বিদ্যুৎ এর তীব্র সংকটে মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। এই রকম দুর্যোগময় পরিস্থিতির পূর্বাভাস জেনেও উপকূলীয় এলাকার মানুষসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে পারিনি। একদিকে সাতক্ষীরায় প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
প্রতিনিয়ত করোনায় আক্রান্ত ও অসুস্থতা মানুষকে তাড়া করছে, এর ওপর ঘূর্ণিঝড়ের করাল গ্রাসে উপকূলবাসীরা এখন বিপর্যস্থ ও দিশেহারা। ঘূর্ণিঝড়কবলিত এলাকার মানুষের সাহায্যার্থে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। আমি ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত উপকূলীয় মানুষদের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে প্রলয়ংকারী ঘূণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরায় প্রাণিসম্পদে ৭৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এক প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জেলার ৭টি উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬৪টি ইউনিয়নের প্রাণিসম্পদ ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আম্পানে আক্রান্ত হয়েছে ৩৪০টি গরু, ২ হাজার ৮০৭টি ছাগল, ৬৫৬ টি ভেড়া, ৬৬ হাজার ৭৩৫ টি মুরগি এবং ২১টি হাঁস। আম্পানে মৃত্যুবরণ করেছে ৩ হাজার ৮৮০টি গবাদিপশু ও পাখি। এরমধ্যে ১৬টি গরু, ১২৩ ছাগল, ১৮টি ভেড়া, ৩ হাজার ৬৮৮টি মুরগি এবং ৩৫টি হাঁস রয়েছে।
এদিকে জেলায় সড়ক ও জনপদের ৮১ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ’ হয়েছে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫৭.৫০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আগে জেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ লাখ ৭০ হাজার ২৬৪ জন মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করে। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।
ঘূর্ণিঝড় আমপানের আঘাতে সাতক্ষীরায় ২২ হাজার ৭১৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও প্রায় ৬১ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। কৃষি বিভাগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মৎস্য বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ১৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকা। প্রাণিসম্পদের (গবাদিপশু) ৭৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এদিকে, ৮১ কিলোমিটার রাস্তা ও ৫৭.৫০ কিলোমিটার বেড়িবাধের ক্ষতি হয়েছে। দেড় শতাধিক বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, জেলায় ৪ হাজার ৩৩২ হেক্টর জমির ফসলি জমি সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৮ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমি। এ নিয়ে কৃষিতে মোট ক্ষতি হয়েছে ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার টাকার। ভেসে গেছে ১৩ হাজার ৪৯৭ হেক্টর জমির চিংড়ি ঘের ও ১ হাজা ৫০০ হেক্টর জমির মৎস্য খামার। সাড়ে ১২ হাজার মাছের ঘেরের ক্ষতির পরিমান ১৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকা টাকা। ৯১টি খামার ও ৬৪০টি গবাদি পশু ও ৮৬টি হাস মুরগির খামারসহ মোট ৭৭ লাখ টাকা ৬৭ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার উপকূলীয় নদ-নদীর ২৩টি পয়েন্টে বেঁড়িবাধ ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮১ কিলোমিটার রাস্তা ও ৫৭.৫০ কিলোমিটার বেঁড়িবাধ। জেলায় ২২ হাজার ৭১৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও প্রায় ৬১ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।