তালার মাদরায় আলমগীর বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকবাসি

ক্রাইমবার্তা রিপোট:  আলমগীর হোসেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে তালা উপজেলার মাদরা গ্রামের মানুষ। প্রতিরোধ গড়ে তোলায় নতুন করে হামলার ভয়ে এলাকার বাইরে যেতে পারছে না ব্যবসায়ি, চাকুরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শান্তিপূর্ণভাবে দলুয়া বাজারে ব্যবসা করার জন্য মাদরা গ্রামের বাসিন্দা ১৪ জন ব্যবসায়ি শনিবার দুপুরে পাটকেলঘাটা থানায় আসেন।
সরেজমিনে শুক্রবার সকালে তালা উপজেলার মাদরা গ্রামের খোবরাখালিতে গেলে ঠাকুরদাস রায়, মাধব সরকারসহ কয়েকজন জানান, বালিয়াদহের হোসেন আলী গাজী কলাগাছির একান্ত বাছাড়ের কাছ থেকে ১০ কাঠা জমি কিনে দু’ছেলে আলমগীর ও জাহাঙ্গীরকে নিয়ে ১৯৮০ সাল থেকে তাদের গ্রামে বসবাস শুরু করেন। আলমগীর এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে বহিরাগত সন্ত্রাসীসহ টিকেরামপুর সরদার বাড়ির লোকজনদের বাড়িতে আশ্রয় দিতো। ২০০৬ সালে দলুয়া বাজারের মাছের সেটে বোমা হামলায় নিহত রবীন ও জাহাঙ্গীরকে বোমা মেরে হত্যা মামলার অন্যতম আসামী দোহার গ্রামের আসাদুল সরদার গ্রেপ্তার হন আলমগীর হোসেনের বাড়ি থেকে । চরমপন্থি বিদ্যুৎ বাহিনী প্রধানের সঙ্গে সখ্যতা ছিল আলমগীরের। খোবরাখালি গ্রামের কল্যাণ ম-লের স্ত্রীকে নির্যাতন করে তার গর্ভস্ত সন্তানকে মেরে ফেলার অভিযোগ রয়েছে আলমগীরের বিরুদ্ধে। বিশ্বনাথ ম-লের ছেলে অজিত ম-লকে মারপিট ও নিমাই ম-লের ছাগল মেরে ফেলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় শালিস মানেন না আলমগীর।
পারুল ম-ল জানান, গত মার্চের শেষের দিকে খেতে ছাগল যাওয়া নিয়ে আলমগীরের সঙ্গে তার বচসা হলে দায়ের কোপে তার বাম হাত জখম করে আলমগীর।

নির্যাতনের শিকার খোবরাখালি গ্রামের বাড়িতে শয্যাশায়ী রবিন ম-ল বলেন, তিনি দলুয়া বাজারে গৌর ম-লের জলের ফিল্টারের মিলে কাজ করেন। গত ৬ জুন আলমগীরসহ টিকেরামপুর সরদার বাড়ির রুবেল, তুহিন, শাহীনুর, সজীব, মীম, শান্ত ও বারানগরের সবুজসহ কয়েকজন তাকে ও তার ছেলে অলোককে জীবননাশের হুমকি দেয়। বিষয়টি উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টিও নেতা হিরন্ময় ম-লকে জানালে তিনি বিষয়টি প্রতিবাদ করলে তাকেও কয়েকটি মোবাইল ফোন থেকে হুমকি দেওয়া হয়। পরদিন তাকে ওইসব সন্ত্রাসীরা কারখানায় ঢুকে মারতে যায়।
রবিন ম-লের স্ত্রী সরলা ম-ল বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আলমগীরের নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একদল দুর্বৃত্ত হাতে লোহার রড, চাইনিজ কুড়াল, দা ও লাঠি নিয়ে ১৪টি মোটরসাইকেলে তাদের পাড়ায় ঢোকার সময় মাদরা শ্মশানের পাশে ফাঁকা জায়গায় বসে থাকা শান্ত, কুমারেশ ও সুমনকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে। এরপর তাদের পাড়ায় এসে গালিগালাজ ও ভাঙচুর শুরু করলে বাড়ির পুরুষদের ঘরের মধ্যে আটকে রেখে মহিলারা ঝাঁটা ও লাঠি হাতে হামলাকারিদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। হামলাকারিদের লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়লে কয়েকটি মোটরসাইকেলের গ্লাস ভেঙে যায়। হামলাকারিরা পারুল. অজিত ম-ল, তার স্ত্রী ও মাকে পিটিয়ে জখম করে। ভাঙচুর করে তাদের কয়েকটি বাড়ি। খরর পেয়ে মাদরা বাজারের পার্শ্ববর্তী লোকজন ছুঁটে এলে হামলাকারিরা আলমগীর ও জাহাঙ্গীরের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। শালিখা নদী সাঁতার দিয়ে পালানোর সময় এএসআই জাকিরের নেতৃত্বে পুলিশ এসে কয়েকজনকে আটক করে। পরে তালা ও পাটকেলঘাটার থানার অতিরিক্ত পুলিশ এসে হামলাকারিদের উদ্ধার করে ছেড়ে দেয়।
রবিন ম-ল জানান, মুক্তি পাওয়া সন্ত্রাসীরা মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে দলুয়া বাজরে যেয়ে তাকে গৌরপদ ম-লের ওয়াটার প্লান্টের মধ্য থেকে বের করে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। রাস্তার উপর পড়ে থাকা স্টোন চীপের উপর দিয়ে তাকে টেনে হিচড়ে রক্তাক্ত সঙ্গাহীন অবস্থায় মৃতভেবে ফেলে রেখে চলে যায় তারা। স্থানীয়রা ও পুলিশ এসে রবিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর থেকে মাদরা গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ি, চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা এলাকার বাইরে যেতে পারছেন না।
মাদরা গ্রামের ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক ধ্যানেশ রায়, মৃণাল গাইন ও অনুপম সরকার জানান, বুধবার সকালে তারা আশাশুনির কাদাকাটি তেকে মাছ কিনে বাড়ি আসছিলেন। পথিমধ্যে দলুয়া বাজারে আলমগীরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাদের মারপিট করে আটক রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।
মাদরা বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি হোমিও চিকিৎসক মাদরা গ্রামের ডা. অরুন গাইন বলেন, খোবরাখালি গ্রামে হামলা ও পাল্টা হামলার পর থেকে তাদেরকে বাজারে যেতে নিষেধ করেছেন আলমগীর ও তার লোকজন। ফলে হোমিও চিকিৎসক রবীন বিশ্বাস, বস্ত্র ব্যবসায়ি মিহির ম-ল, হার্ডওয়ার ব্যবসায়ি বিমল ম-লসহ কয়েকজন দোকান খুলতে পারেননি। এমনকি শুক্রবার বার্ষিক হালখাতা করতে পারেননি মিহির ও বিমল। বৃহস্পতিবার রবিন ফিস এ মাছ কিনতে গেলে প্রশান্ত বিশ্বাসকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। জাত তুলে গালিগালাজ করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাটকেলঘাটা রোডের কাটাখালিতে ব্যারিকেড বসিয়ে মাদরা গ্রামের ইঞ্জিনভ্যান চালক, মোটর ভ্যান চালক, ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী চিহ্নিত করে তাদেরকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে দলুয়া বাজাওে ব্যবসা করার সুবিধার্থে তারা মাদরা গ্রামের বাসিন্দা এমন ১৪জন ব্যবসায়ি শনিবার দুপুরে পাটকেলঘাটা থানায় যান।
জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন বলেন, খোবরাখালি গ্রামে হিন্দুপাড়ায় তারা দু’ভাই ও এক বোন বসবাস করেন। ছাগল ও গরুতে ফসল খাওয়া নিয়ে কথা বরলেই শুরু হয় গ-গোল। এ নিয়ে গত তিন মাস তিনি খুব অশান্তিতে আছেন। গত মঙ্গলবার সকালে মাধব যেয়ে বিকেলে শালিস আছে বলে তাকে বলে আসে। তার পক্ষে দলুয়ার আনারুল ভাই, ও বালিয়াদহের কয়েকজন কয়েকটি মোটরসাইকেলে তাদের গ্রামে আসে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মধাব, সুকুমার, অলোকসহ কয়েকজন তার পক্ষের লোকজনদের উপর হামলা চালিয়ে মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। অবরুদ্ধ করে রাখা কয়েকজনকে পুলিশ উদ্ধার করে। রাত ৮টার দিকে মুক্তি পাওয়া ওইসব লোকজন রবীন ম-লকে মারপিট করেছে বলে তিনি শুনেছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় রাত ১০টার দিকে তার(আলমগীর) বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মারপিট করা হয় ভাবী আনোয়ারাকে। বর্তমানে তিনি এলাকায় যেতে পারছেন না।
পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জেল্লাল হোসেন জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিনি প্রতিদিন বেশ কিছু সময় পুলিশ নিয়ে দলুয়া বাজারে অবস্থান করলেও মাদরা গ্রামের ব্যবসায়িরা বাজারে আসেন না। শনিবার দুপুরে তিনি দলুয়া বাজারে অবস্থান করায় থানায় যাওযা ব্যবসায়িদের সঙ্গে তার দেখা হয়নি। তবে মোবাইলে কথা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে তালা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর, পাটকেলঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াহিদ মুর্শিদ ও তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী রাসেলের উপস্থিতিতে রোববার বিকেল চারটায় পার মাদরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিবাদমান দু’টি পক্ষকে নিয়ে বসাবসির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।