প্রতাপনগরের ১৭ গ্রাম ও শ্রীউলার ২০ গ্রামের মানুষ এখনও পানি বন্দি

ক্রাইমবার্তা রিপোট :  সিডর, আইলা, নার্গিস, বুলবুল কমবেশি আঘাত করে প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নে গত এক যুগ আগে। আম্পান নামক সুপার সাইক্লোনে অসহায় হয়ে পড়েছে প্রতাপনগর ইউনিয়নের ১৭ গ্রামের মানুষ ও শ্রীউলা ইউনিয়নের ২০ গ্রামের মানুষ। আম্পান থেমেছে ২৩ দিন আগে। সহায় সম্বল হারানোর ভয়ে এখানকার হাজার হাজার মানুষের হৃদকম্পন থামেনি। চিংড়ী ঘের ভেসেছে, ঘরে তোলা ধান ভেসেছে। কেউ আশ্রয় নিয়েছে রাস্তার উপরে, আবার কেউ আশ্রয় নিয়েছে ভাসমান ট্রলারে। বিত্তবান থেকে নিম্নবিত্ত এখন এক কাতারে। আশাশুনির সর্বশেষ ইউনিয়নটির নাম প্রতাপনগর। আবহাওয়ার সিগনাল দিলে প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। ১৮টি গ্রাম নিয়ে আশাশুনির সর্বশেষ ইউনিয়ন প্রতাপনগর। ২৯ হাজার মানুষের বসবাস। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরের থাবায় প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রাকাটি, হরিসখালী ও কোলা গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ২০০৯ সালের ২৫ মে কপতাক্ষের ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে চাকলা, রুইয়ারবিল, সুভদ্রাকাটি, চুইবাড়ীয়া, দিঘলারআইট, শ্রীপুর, কুড়িকাহুনিয়া ও সোনাতনকাটি গ্রামের মানুষ পানিতে ভাসে। দুই মাসেরও বেশি সময় দূর্ভোগ পোহাতে হয় এখানকার মানুষের। আইলার আঘাতে চাকলা গ্রামের মাঝখান দিয়ে একটি নতুন খালের সৃষ্টি হয়েছিল। শ্রীপুরের ৩০টি পরিবারের ভিটেমাটি কপোতাক্ষের গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। গত ২০ মে আম্পান নামক সুপার সাইক্লোনের আঘাতে চাকলার ক্লোজার, শ্রীপুর লঞ্চঘাট, কোলা, কুড়িকাহুনিয়া সহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েকটি পোল্ডারের ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোনা পানি ভিতরে প্রবেশ করে ঘর বাড়ী, ঘের ভেড়ি ও ঘরে তোলা ধান লোনা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিদিন ২ বার জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করার কারনে এলাকার মানুষের সহায় সম্পদ হারানোর ভয়ে হৃদকম্পন শুরু হয়। এলাকার কয়েক জন ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন ৫০ বছরে এমন দূর্যোগ তারা দেখেনি। ত্রাণ সামগ্রী অপ্রতুল বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউপি সদস্য শেখ গোলাম রসুল জানান, আম্পানের থাবায় গ্রামের মধ্য দিয়ে নতুন একটি খালের সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৯ সালে আইলার থাবায় আরও একটি খাল সৃষ্টি হয়ে গ্রামকে দুইভাবে ভাগ করে ফেলে। আম্পানের থাবায় অনেকেই বেঁচে থানার জন্য রাস্তার উপর কুড়িঘর বেঁধে বসবাস করছে। ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নের ৮ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। স্থানীয় মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন মানুষ দিশেহারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড কবে কাজ শুরু করবে সেই আশায় অপেক্ষা করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা জানান, প্রতাপনগরের ৭টি পয়েন্ট ভেঙ্গে ৭ হাজারের অধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি বলেন, পূর্ণিমা শেষে সেনাবাহিনী সংস্কার কাজ শুরু করবে। অপর দিকে সুপার সাইক্লোন আম্পানের আঘাতে পাউবোর বাঁধ ভেঙ্গে শ্রীউলা ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল জানান, বাঁধ ভেঙ্গে কলিমাখালী, নাছিমাবাদ, হাজরাখালী, মাড়িয়ালা, লাঙ্গলদাড়িয়া, রাধারআটি, বালিয়াখালী, কাকড়াবুনিয়া, গাজীপুর, নাকতাড়া, বকচর, বুড়াখারআটি, থানাঘাটা সহ মোট ২০টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতি হয়েছে ঘর বাড়ী, রাস্তা ঘাট সহ মৎস্য ঘেরের। দিনরাত জীবনের ঝুকি নিয়ে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারিভাবে দ্রুত বাঁধ মেরামতের দাবী জানাচ্ছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন ত্রাণ নয় দ্রুত বাঁধ সংস্কার চাই।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।