ক্রাইমর্বাতা রিপোট: সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী একজনের পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। এরমধ্য দিয়ে এতদিন করোনায় মৃত্যুহীন থাকা সাতক্ষীরা জেলাও মৃত্যুর তালিকাভূক্ত হলো। মৃতের নাম অনিল বিশ্বাস (৭০)। তার বাড়ি দেবহাটার রতেœশ্বরপুর এলাকায়। গত ২২ জুন বিকালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি দেবহাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। ঐ দিন রাতে তার শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ২৩ জুন বেলা ১১টার দিকে তিনি মারা যান। স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে তার মরদেহের সৎকার করা হয় এবং নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শুক্রবার তার রিপোর্ট আসে করোনা পজেটিভ। দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও হটাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় সাতক্ষীরায় নতুন করে আরো ১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত মোট ১৪৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়রে (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টার থেকে পাওয়া নমুনা রিপোর্ট ১৪ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরার স্বাস্থ্য বিভাগ।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের ডাক্তার জয়ন্ত সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এনিয়ে জেলায় গতকাল পর্যন্ত মোট ১৪৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি লক ডাউন করা হয়েছে। টানানো হয়েছে লাল পতাকা।
জেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৪ জন মারা গেলেও প্রাপ্ত ২২ জনের করোনার নুমনা নেগেটিভ এসেছে। সেই তথ্যনুযায়ী ২৭জুন সকাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এক জনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩হাজার ১৯১ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত বিভাগে মারা গেছেন ৪৮জন। তবে বিভাগের ১০জেলার মধ্যে ৯ জেলাতেই করোনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও শুধু সাতক্ষীরা জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেউ মারা যাননি। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭৬৮জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জেলা খুলনা, কম আক্রান্ত জেলা মেহেরপুর। এই বিভাগের ৩৬৯জন করোনা নিয়ে বিভিন্ন হাসপালে ভর্তি আছেন।
সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসেইন সাফায়েত বলেন, ২২জনসহ এ পর্যন্ত মোট ১৩৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ও সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব অনুযায়ী করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এরমধ্যে ২১ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (সামেক) তত্ত্ববধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে করোনা উপসর্গ নিয়ে ২১জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে সর্বশেষ করোনার উপসর্গ নিয়ে (২৩ জুন) সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ জুন) রাতে তারা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে মারা যান। মৃত ব্যক্তিরা হলেন, তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানাধীন কুমিরা গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে ইমান আলী (৫২) ও কলারোয়া উপজেলার আটুলিয়া গ্রামের মোস্তাফিজ সরদারের ছেলে দাউদ আলী (৫০)।
এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ২৫এপ্রিল সামেকে ভর্তি হয়ে ৩০ এপ্রিল মারা যান তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানাধীন মনিহার শেনেরগাতি গ্রমের আকরাম মল্লিকের ছেলে অহাব (৬০), ১৩ মে সদরের শাখরা চৌবাড়িয়ার নূর ইসলামের স্ত্রী তানজিরা (৫২) ভর্তি হয়ে ১৭ মে মারা করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান, ২২ মে ভর্তি হয়ে ২৭ মে মারা যান দেবহাটা উপজেলার ভাতশালার পাঁটপোতা গ্রামের ইসমাইল হোসেনের মেয়ে সেলিনা (৫৬), ২৩ মে ভর্তি হয়ে ২৫ মে মারা যান সদরের রইচপুরে এলাকার মৃত ইজার আলীর ছেলে আয়ুব আলী (৬৭), ২৬ মে ভর্তি হয়ে ২৯ মে মারা যান সদরে ঘোনা ইউনিয়নের কাছন্দা গ্রামের ফজর আলীর ছেলে পিয়ার আলী (৩৫), ২৭ মে ভর্তি হয়ে ৩০ মে মারা তালা উপজেলার মাঝিআড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে শহিদুল (৬০), ৩ জুন ভর্তি হয়ে একই দিনে মারা যান সদর উপজেলার তালতলা এলাকার রহমত আলীর মেয়ে আকিরন (৪৫), ৭ জুন ভর্তি হয়ে ১১ জুন মারা যান সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁকাল এলাকার মাসুদ গণীর স্ত্রী আলেয়া (৩৬), ৮ জুন ভর্তি হয়ে ১৫ জুন মারা যান দেবহাটা উপজেলার টাউন শ্রীপুর এলাকার মৃত ঠাকুর চরণ পালের ছেলে রাধাকান্ত (৭৫), ১১ জুন ভর্তি হয়ে ১২ জুন মারা যান সদরের আগরদাড়ির ইন্দ্রিরা গ্রামের আফসার আলীর মেয়ে শুক্কল বিবি (৮৫), ১৪ জুন ভর্তি হয়ে একই দিনে মারা যান সদরের পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার মৃত মান্দারের ছেলে শাহাবুদ্দিন (৭০), ১৪ জুন ভর্তি হয়ে ১৫ জুন সাতক্ষীরা সদরের মাহমুদপুর ভাড়–খালি এলাকার মোজাম্মেল হোসেন স্ত্রী আমেনা (৩৮), ১৮জুন ভর্তি হয়ে ২২জুন তালা উপজেলার পাটকেলঘাট থানাধীন শাকদহ এলাকার শামছুদ্দিন সরদার ছেলে ইউনুছ আলী (৪২), ১৮ জুন ভর্তি হয়ে ২০জুন মারা যান কলারোয় উপজেলার পারুলিয়া পানিকেউয়া গ্রামের মোছাদ্দেক সরদারে ছেলে দাউত (৫২), ২০ জুন ভর্তি হয়ে ২১ জুন মারা যান দেবহাটার সখিপুর এলাকর বদর উদ্দিনের ছেলে আহাদ (৩২), ২১ জুন ভর্তি হয়ে ২২ জুন সাতক্ষীর সদরের কাউনডাঙ্গা এলাকার ইসমাঈলের ছেলে রোস্তম (৭০), ২১ জুন ভর্তি হয়ে একই দিন মারা যান কলারোয়া উপজেলার হঠাৎগঞ্জের গোয়ালচতর এলাকার মৃত জাহবক্সের ছেলে গেলাম রব্বানী (৬২), ২২ জুন ভর্তি হয়ে একই দিনে মারা যান কালিগঞ্জ উপজেলার তারালীর ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের সিদ্দিকের ছেলে শরিফ (১৩) এবং ২২ জুন সামেকে ভর্তি হয়ে তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের মৃত রহমতউল্লাহর ছেলে আনোয়ার (৮৩) করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৪ জুন মৃত্যু বরণ করেন।
এছাড়া সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, সদরের ভোমরা ইউনিয়নের একজন এবং কালিগঞ্জ উপজেলার একজন করোন উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে মৃত্যুবরণ করা তাদের তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করা হলে করোনা নেগেটিভ আসে। এনিয়ে সাতক্ষীরায় করোনার উপসর্গ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ২১ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাক্তার রাশেদা সুলতানা বলেন, সাতক্ষীরায় করোনায় এখনও পর্যন্ত কেউ মরায় যায়নি। তবে করেনা ১৩৬জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় শনাক্ত হয়েছে ২২জন।