দেশ থেকে অবৈধ পথে পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা: ৯ বছরে সুইস ব্যাংকে সঞ্চয় চার হাজার কোটি টাকা

ক্রাইমর্বাতা ডেস্করিপোট:  আখতারুজ্জামান : দেশ থেকে অবৈধ পথে পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ২০১১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলদেশীদের টাকার পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যাংক। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার নিচে। আর ২০১৯ সালে বাংলাদেশীদের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৯০ টাকা হিসাবে) যা কমপক্ষে ১২টি বেসরকারি ব্যাংকের (দেশের) পরিশোধিত মূলধনের সমান। গত ৯ বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের সঞ্চয় বেড়েছে ৪৫ কোটি ১০ লাখ ফ্র্যাংক। অর্থাৎ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের গত ৯ বছরে বাংলাদেশী টাকায় সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়েছে ৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে।
দেশ থেকে টাকা পাচারের বিষয়টি নতুন না হলেও গত কয়েক বছরে তা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে পাচারের তথ্য উঠে আসছে। দেশে অদ্ভুত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাড়ছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। দুর্নীতি বেড়েছে ব্যাপকহারে। নিরাপত্তার অভাবে বিনিয়োগ করার সাহস হারিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে অর্থ পাচার পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে এমনটিই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সামগ্রিকভাবে কেন উচ্চবিত্তরা দেশে টাকা রাখে না, সেটি অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। অর্থ পাচারকারীরা যতবড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন তাদের অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলে পাচার বন্ধ না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগ না হওয়ায় পুঁজি পাচার হচ্ছে। অর্থ পাচারের মূল কারণ হলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দুর্নীতির অর্জিত টাকা দেশে রাখা নিরাপদ বোধ করছেন না। তাদের অভিমত, টাকা তছরুপের তিনটি খাত। তাহলো- ব্যাংকিং খাত, শেয়ারবাজার এবং বৈদেশিক বাণিজ্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পণ্য আমদানির নামে বিদেশে পাচার করা।
জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪টি প্রক্রিয়ায় এই অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশী পণ্যের আমদানিমূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানিমূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা। এ ছাড়া টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ২০ শতাংশই কোনো না-কোনোভাবেই পাচার হচ্ছে। টাকা পাচারের তথ্য এসেছে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপির রিপোর্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজে প্রকাশিত পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে।
বাংলাদেশীদের আমানত : ২০১৯ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের আমানতের স্থিতি ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাংক। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে যা ছিল ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৭ সালে ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৬ সালে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৫ সালে ৫৫ কোটি ৮ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৪ সালে যা ছিল ৫০ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৩ সালে ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যাংক স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ছিল ২২ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১১ সালে ছিল ১৫ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যাংক।
উল্লেখ্য, স্বর্ণালংকার, শিল্পকর্ম এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র সুইস ব্যাংকে জমা রাখা হলে সেগুলো আর্থিক মূল্য হিসাব করে আমানতে যোগ করা হয় না।
মোট আমানত : প্রতিবেদন অনুসারে আলোচ্য সময়ে বিশ্বের সব কটি দেশের আমানত বেড়েছে। আলোচ্য বছরে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে যা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এ হিসাবে এক বছরে আমানত বেড়েছে ৩ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। ২০১৭ সালে ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এ ছাড়া ২০১৬ সালে ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। ২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকে বিদেশীদের মোট আমানত ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। ২০১৪ সালে ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। ২০১৩ সালে ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি, ২০১২ সালে ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। সুইস ব্যাংকে আমানত রাখার দিক থেকে এ বছর প্রথম অবস্থানে যুক্তরাজ্য। ২০১৯ সালে দেশটির আমানতের পরিমাণ ৩৭ হাজার ৬৬০ কোটি ফ্র্যাংক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৫ হাজার ৯০৮ কোটি, সিঙ্গাপুর ৩ হাজার ৭৩০ কোটি, চীন ১ হাজার ৫০৫ কোটি, রাশিয়া ১ হাজার ৩৮৬ কোটি, সৌদি আরব ৯৭৮ কোটি, থাইল্যান্ড ৪৫০ কোটি, তাইওয়ান ১ হাজার ২২ কোটি, জাপান ২ হাজার ৭২১ কোটি, তুরস্ক ৬৬৯ কোটি, ভিয়েতনাম ৭৫ কোটি, কম্বোডিয়া ২ কোটি এবং মালয়েশিয়া ২৩১ কোটি ফ্র্যাংক। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের আমানত সবচেয়ে কমেছে। গত বছর দেশটির আমানত ছিল ৭২ কোটি ফ্র্যাংক। এবার তা কমে ৩৫ কোটিতে নেমে এসেছে। অর্থাৎ সুইস ব্যাংকে আমানতের দিক থেকে এবার পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। ভারত আগের বছরের চেয়ে ৪ কোটি ফ্র্যাংক কমে ৮৯ কোটি ২০ লাখে নেমে এসেছে। এ ছাড়া নেপাল ১৭ কোটি, আফগানিস্তান ৪ কোটি ৫২ লাখ, ভুটান ১৩ লাখ, শ্রীলংকা ৪ কোটি এবং মিয়ানমারের ৪৭ লাখ ফ্র্যাংক আমানত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ২০০৬-২০১৫ সাল পর্যন্ত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের প্রায় সমান। একক বছর হিসাবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ১৫১ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে ৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব।
সূত্র বলছে, দুর্নীতি ও চোরাচালানের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। ওইসব টাকায় দুর্নীতিবাজরা বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলছেন, জমা রাখছেন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। এর বাইরে আরও অনেক ব্যাংকে বাংলাদেশের পাচারকারীদের টাকা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে মালয়েশিয়া সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিদেশীদের জন্য মালয়েশিয়ান সরকারের সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের বিষয়টি গভীর উদ্বেগের। এর আগেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা টাকা পাচারের তথ্য প্রকাশ করেছে। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের যে টাকা রাখা হয়েছে, সেটা মূলত দুর্নীতির। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের মূলত তিনটি কারণ। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতি বেড়েছে বলেই অর্থ পাচারও বেড়েছে। এছাড়া দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণেও অর্থ পাচার বাড়ছে। তার মতে, অর্থ পাচার রোধ করতে হলে দুর্নীতি কমিয়ে আনার বিকল্প নেই। পাশাপাশি বিনিয়োগ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। নাগরিক জীবনেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। টাকা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস মিলে উদ্যোগ নিলে টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এরপর ফিরিয়ে আনা টাকা বাজেয়াপ্ত করাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সাধারণভাবে বাংলাদেশে একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিকে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ নেই। অপরদিকে তারাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। কী কারণে এটি হচ্ছে, তা বোঝা দরকার। তিনি বলেন, এই টাকা পাচারের কয়েকটি কারণ হতে পারে। যেমন- তারা বিনিয়োগের পরিবেশ পাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় টিকে থাকতে পারছে না। অথবা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রতি তাদের আস্থা নেই। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে কেন উচ্চবিত্তরা দেশে টাকা রাখে না, সেটি অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। আবার যদি এ ধরনের কাজ আইনের আওতায় না এনে প্রশ্রয় দেয়া হয়, তবে এটি বাড়তে থাকবে। এ অবস্থার উত্তরণে আমরা বড় ধরনের সংস্কারের কথা বলছি। তার মতে, টাকা তছরুপের তিনটি খাত। এগুলো হল- ব্যাংকিং খাত, শেয়ারবাজার এবং আমদানি খাত। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পণ্য আমদানির নামে বিদেশে পাচার করা। ফলে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকে।
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সুইস ব্যাংকের টাকা অবৈধভাবে নেয়া হচ্ছে বিধায়ই তারা প্রকাশ করছে। তিনি বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার হয়। এর মধ্যে রয়েছে আমদানি পণ্যের মূল্য বেশি দেখানো এবং রফতানিতে কম দেখানো। তিনি বলেন, ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে টাকা পাচার ও তার শাস্তির ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলা আছে। কীভাবে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে, সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং অপরাধীর শাস্তির কথা বলা আছে। বর্তমান আইনে পাচারকৃত অর্থের দ্বিগুণ জরিমানার বিধান রয়েছে। একইভাবে এর সঙ্গে জড়িতদের ৪ থেকে ১২ বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন নেই। ফলে টাকা পাচার বাড়ছে।
তিনি বলেন, আর আইন বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনের কারণ এর পেছনে প্রভাবশালীরা জড়িত। যারা অর্থ পাচার করছে, তারা কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত বা ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে- এই ধরনের সামর্থ্য রয়েছে।  ফলে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে একসময় পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনা কঠিন ছিল। বর্তমানে আর সেটি নেই। এখন চাইলে সহজেই টাকা ফিরিয়ে আনা যায়। কারণ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যে দেশে টাকা পাচার হয়, ওই দেশের কর্তৃপক্ষ টাকা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য। একে বলা হয়, পারস্পরিক আইনি সহায়তা কার্যক্রম। এর মাধ্যমে সরকার চাইলে সুইস কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য দেবে। আর এই প্রক্রিয়ায় টাকা ফিরিয়ে এনে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলে পাচার বন্ধ না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
দেশ থেকে বিদেশে কোনো টাকা নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগে। কিন্তু এ পর্যন্ত কাউকে ব্যাংক থেকে এই ধরনের কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। তারপরও বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় কীভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ হল। কানাডায় রয়েছে বাংলাদেশী অধ্যুষিত অঞ্চল বেগম পাড়া। এ ছাড়া ব্রিটেন, হংকং, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাংকেও বাংলাদেশীদের টাকা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত কাউকে বিদেশে টাকা জমা রাখার বিশেষ অনুমোদনও দেয়া হয়নি। এ ছাড়া কোনো প্রবাসীও সরকারকে জানাননি যে, তিনি সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছেন। ফলে সূত্র বলছে, সুইস ব্যাংকে জমা পুরো টাকাটাই দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে।
সুদীর্ঘ সময় ধনীদের অর্থ গোপনে জমা রাখার জন্য খ্যাত সুইজারল্যান্ড। দেশটিতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৪৬টি ব্যাংক রয়েছে। বিশ্বের বড় বড় ধনী অর্থ পাচার করে দেশটিতে জমা রাখে। ব্যাংকগুলোও কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে। আগে সুইস ব্যাংকে জমা টাকার কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো না। এমনকি আমানতকারীর নাম-ঠিকানাও গোপন রাখা হতো। একটি কোড নম্বরের ভিত্তিতে টাকা জমা রাখা হতো। কিন্তু ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী টাকা পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর করা হয়। এরপর আন্তর্জাতিক চাপে সুইস ব্যাংক জমা টাকার তথ্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তারা ওই সময় থেকে বিভিন্ন দেশের জমা টাকার তথ্য প্রকাশ করছে। ওই প্রতিবেদনে কোন দেশের কত টাকা জমা আছে, সে তথ্য তারা প্রকাশ করছে। আমানতকারীদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করছে না। ফলে পাচারকারীদের ঠেকানো যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন আর সুইস ব্যাংক আগের মতো গোপনীয়তা রক্ষা করে না। তারা কিছু তথ্য শেয়ার করে। টাকা অন্য কোথাও যাচ্ছে কিনা তাও খুঁজতে হবে। কি পরিমাণ অর্থপাচার হচ্ছে সেদিকে নজর দিতে হবে। সরকার চাইলেই সেটা করতে পারে।
এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমান একেবারে কম নয়। এ টাকা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফেরালে অনেক সুফল পাওয়া যাবে। এ ব্যবসায়ী নেতার মতে, পাচার হওয়া টাকার জন্য ঢালাওভাবে সবাইকে দোষ না দিয়ে, পাচারকারীর তথ্য জানানো হোক। এ টাকা উদ্ধার করে করোনা মহামারির এই সময়ে দেশে বিনিয়োগ করলে খুব সুফল পাওয়া যাবে।

Check Also

গাড়িচাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মাসুদের মৃত্যু ‘হত্যাকাণ্ড’

প্রাইভেটকার চাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বর্ণনা করে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ৬ দফা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।