ক্রাইমর্বার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম প্রতারণার অভিনব সব কৌশল রপ্ত করেছিলেন। তার প্রতারণার লক্ষ্য শুধু ‘টাকা কামানো’ ছিল না; যশ ও খ্যাতির জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কর্মকাণ্ডে তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। এসব পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে গণমাধ্যমেও তার সরব উপস্থিতি ছিল। তার রাজনৈতিক অভিলাষও ছিল।
সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতালে পরীক্ষা ছাড়া করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্টসহ সাহেদের নানা অপকর্মের বিষয়টি উঠে আসে। এতে সাতক্ষীরায় আলোচনার কেন্দ্রে আসে তার নাম। সাহেদের উত্থান নিয়েও উঠে আসে নানা তথ্য। জানা যায় তার রাজনৈতিক অভিলাষের কথা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাহেদের মা সাফিয়া করিম ২০১০ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ পরিচয় কাজে লাগিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সাহেদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন।
অথচ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কখনোই তার অংশগ্রহণ ছিল না। এরপরও ২০১৮ সালের ৯ নভেম্বর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হয়ে একাদশ জাতীয় সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের ১৪ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেন।
তাদের সবার নাম জানা গেলেও সাহেদ করিমের নাম ছিল অনেকটা অনুচ্চারিত। ঢাকায় মনোনয়ন ফরম জমাদানের সময় সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগ নেতারা জানতে পারেন সাহেদও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। যদিও তিনি মনোনয়ন পাননি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, সাহেদ মূলত ঢাকা থেকে মনোনয়ন ‘ম্যানেজ’ করতে চেয়েছিলেন।
এ জন্য তিনি বিভিন্নভাবে ‘টাকাও ছড়িয়েছেন’। এলাকায় কোনো প্রচার না করে ও নেতকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখেও তিনি ক্ষমতা ও টাকার দাপটে মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন। তাদের ধারণা, সাহেদ অনেক আগে থেকে এমপি হওয়ার ‘ধান্দায়’ ছিলেন।
কারণ, কোথাও কোনো প্রচার না থাকলেও তিনি এলাকায় তার পছন্দের একটি অংশের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে যোগাযোগ রাখতেন। এমনকি নিজেকে মানবিক প্রমাণে ও এলাকায় ‘নাম ছড়াতে’ ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালে সাতক্ষীরার অনেককে বিশেষভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেন।
এ ছাড়া টেলিভিশন টকশোয় সাহেদের সবর উপস্থিতির পেছনেও বড় উদ্দেশ্য ছিল ‘বড় বড় কথা’ দিয়ে নিজেকে পরিচিত করে তুলে এমপি নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সাহেদ করিম জেলা বা উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য তো নন। আওয়ামী লীগ সেজে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তিনি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আসলে মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা দেয়ার সময় থাকে খুবই কম। সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা আসেন। সে জন্য তখন সেভাবে বাছ-বিচার করে দেখার সুযোগ থাকে না।
আর প্রতারকরা এ সুযোগটিই কাজে লাগায়। তিনি বলেন, সাহেদের কোনো দল নেই। এরা প্রতারক, বাটপার, চিটার, অমানুষ। এদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। বিশ্বে এরা বাংলাদেশের মান-মর্যাদা নষ্ট করে দিচ্ছে। সাহেদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।
এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তার হওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে কখনও কোনো প্রতারক কোনো রাজনৈতিক দলে অনুপ্রবেশের চিন্তাও না করে। তিনি আরও বলেন, মাঠের কর্মীরা কখনও দলের ক্ষতি করেন না।
এ ধরনের ব্যবসায়ী, আমলা, প্রতারকরা বিভিন্ন সময়ে দলের ক্ষতি করে। এদের ব্যাপারে আগামীতে আমরা আরও কঠোর হব। এদের তালিকা হবে। শাস্তির আওতায় আসতেই হবে। এটি নেত্রীর নির্দেশনা।(যুগ/১৩/০৭/২০২০)