আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সাহেদ

ক্রাইমর্বার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা:  করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদকে বুধবার ভোরে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার সমকালকে বলেন, র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে বুধবার ভোরে সাড়ে ৫টার দিকে সাতক্ষীরার সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হচ্ছে।

তবে এবার প্রথম নয় এর আগেও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সাহেদ। জেলেও ছিলেন তিনি। জেল থেকে বেরিয়ে ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে চালাতে থাকেন অপকর্ম।

সূত্র বলছে, সাহেদের অপকর্মের হাতেখড়ি বিগত জোট সরকারের আমলে। ওই সময়ে  তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। মামুনের হাত ধরে হাওয়া ভবন পর্যন্ত পৌঁছে যান এই প্রতারক। এরপর প্রতারণার নানা ব্যবসা খুলে বসেন তিনি। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামুনের সঙ্গেই জেলে যেতে হয় তাকে। জেল থেকে বেরিয়ে ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে চালাতে থাকেন অপকর্ম। এভাবে হয়ে যান শত শত কোটি টাকার মালিক।

দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, তিনি বীরদর্পে সচিবালয়ে ঘুরে বেড়াতেন। সচিব থেকে শুরু করে বড় কর্তাদের অফিসে দাপটের সঙ্গে কথা বলতেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র বলছে, ওই ব্যক্তি কয়েক বছর আগে পুলিশ সদর দপ্তরে নানা পরিচয়ে নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কক্ষে ঘোরাঘুরি করতেন।

জেল থেকে বেরিয়ে সাহেদ ২০১১ সালে ধানমন্ডিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে ‘বিডিএস ক্লিক ওয়ান’ নামে এমএলএম ব্যবসা শুরু করেন। পরে গ্রাহকের অন্তত ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দেন। মেজর ইফতেখার করিম চৌধুরী নামে ওই প্রতারণা করেন তিনি। প্রতারণার শিকার লোকজন তাকে খুঁজতে শুরু করলে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় কয়েকটি মামলা হয়। গোপনে দেশে ফিরে মামলাগুলোয় জামিন নিয়ে আবার শুরু করেন একই ব্যবসা।

এরপর একে একে রিজেন্ট হসপিটাল লিমিটেড (মিরপুর), রিজেন্ট হসপিটাল লিমিটেড (উত্তরা), ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ, রিজেন্ট ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও হোটেল মিলিনার মালিক হন সাহেদ। সবশেষে দেশে চলমান করোনা দুর্যোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা আর টেস্ট নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেন।

 

বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, করোনা কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত শাহেদ (রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান) ও ডা. সাবরিনা (জেকেজির চেয়ারম্যান) আওয়ামী লীগের লোক। আজকে যখন চারিদিক থেকে আওয়াজ উঠেছে কই, রুই-কাতলা তো ধরা পড়ে না।

রিজভী বলেন, আমরা জানতে চাই, এর পেছনে গডফাদার কারা? এর পেছনে সেই ক্ষমতাশালী লোক কারা? কই তারা তো ধরা পড়ে না।

রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার সাহেদের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, উনি সরকারের পক্ষে টক শো করছেন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির সদস্য তিনি। তারপরে বললেন কি? সে নাকি হাওয়া ভবনের লোক। যখন ফাঁস হয়ে যায়, যখন মুখ দেখানোর কিছু থাকে না, তখন বিএনপি অথবা হাওয়া ভবনের নাম বলে চাপিয়ে দেয় তারা।

তিনি বলেন, ওরা দুর্নীতি-লুটপাট সব করে যখন ধরা পড়ে যায় তখন বলে এসব করছে হাওয়া ভবনের লোকেরা। তাদেরকে বলি, এতোদিন লালন করেছেন, পুষেছেন, সমৃদ্ধি দিয়েছেন, সাধারণ মানুষের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা অর্জন করেছেন। যাদের (করোনা আক্রান্ত রোগী) পজেটিভ তাদেরকে নেগেটিভ সনদ দিয়েছেন, আর যাদের নেগেটিভ তাদেরকে পজেটিভ সনদ দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন।

বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন নিজের পকেট থেকে অর্থ দিয়ে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরায় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার,হোটেল রেস্তোরা ও বেকারি শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে র‌্যালি ও আলোচনা সভা

সাতক্ষীরায় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ১১তম বছর পূর্তি উপলক্ষে র‌্যালি, কেক কাটা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।