বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের মধ্যেও থেমে নেই র‍্যাব-পুলিশ-বিজিবির কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা: বিবিসি

ক্রাইমর্বাতা ডেস্করিপোট: বাংলাদেশে জুলাই মাসে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে। গত মার্চ মাস থেকে দেশটিতে করোনাভাইরাসের কারণে অনেক কিছু সীমিতভাবে চললেও কমেনি ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৩৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালেও র‍্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছেন দুই জন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোট ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ জুলাই মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে মোট নিহত হয়েছে ১৭৯ জন। এছাড়া নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

আর আরেকটি মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয়মাসে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন মোট ১৪৬ জন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক নীনা গোস্বামী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”বর্তমানে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে ভার্চুয়াল আদালতে কাজ চলছে, সেখানে মামলা ফাইলিং আর জামিনের কাজগুলো হচ্ছে। অর্থাৎ বিচারের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কিন্তু বঞ্চিত হচ্ছে। সেই জায়গাগুলোর সুযোগ নেয়া হচ্ছে কিনা, গবেষণা না থাকায় তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। তবে এটা একটা কারণ হয়তো হতে পারে।”

বিবিসি বাংলার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জুলাই মাসে যারা কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতদের বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

সবচেয়ে বেশি কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারে। গত একমাসে এই জেলায় পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে অন্তত ১৭ জন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা রয়েছে।

সন্ত্রাসীরা হামলা চালালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হয় বলে র‍্যাব-পুলিশ দাবি করে

২০১৮ সালের চৌঠা মে থেকে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে শুধু কক্সবাজার জেলাতেই নিহত হয়েছে ২৬৭ জন।

মানবাধিকার কর্মী নীনা গোস্বামী বলছেন, ”তবে যে কারণেই হোক না কেন, যেভাবেই হোক না কেন, কোনভাবেই সেটাকে যথার্থ করা যাবে না। বিচার বহির্ভূত হত্যা যেকোনো সময়ে, যেকোনো ভাবেই হোক না কেন, সেটা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সুস্পষ্ট একটা বড় বাধা।”

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান বলছেন, ”আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে। আমরা মনে করি, আইনের শাসনের অভাব এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে এই ধরণের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে।”

”দেশের মধ্যে আইনের শাসনের যে অভাব রয়েছে, তার মধ্যে কোভিড-১৯ নিয়ে মানুষ ব্যতিব্যস্ত থাকার মধ্যে এই ধরণের ঘটনাগুলো প্রকট হয়ে উঠছে এবং সংখ্যার দিক থেকে বাড়ছে।” তিনি বলছেন।

‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনাগুলোর পরে র‍্যাব, পুলিশ বা বিজিবির ব্যাখ্যাগুলো প্রায় একই রকম। সেসব ঘটনার ব্যাপারে বলা হয়, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তারা যখন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে অভিযানে যান, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গুলি চালানো হলে তারা পাল্টা গুলি করেন। পরে হামলাকারীরা পালিয়ে গেলে একজন বা একাধিক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আবার কাউকে গ্রেপ্তারের পরের ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনার ব্যাখ্যা বলা হয়, আসামিকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার বা সহযোগীদের গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিশ বা র‍্যাবের দলের ওপর হামলা হয়। সেখানে গোলাগুলি হলে গুলিবিদ্ধ হয়ে আসামি নিহত হয়। পরে অস্ত্র, গুলির খোসা বা মাদক ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়।

তবে অনেক ক্ষেত্রেই নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, তাদের স্বজনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পরবর্তীতে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছে।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।