যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে নিহতদের দাফন সম্পন্ন

যশোর ব্যুরো প্রধান: যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে ‘বন্দি’দের মধ্যে সংঘর্ষে তিন কিশোর নিহত হয়েছে।
নিহত কিশোররা হলো- খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং একই জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার তালিপপুর পূর্বপাড়ার নানু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭)।
পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মরদেহ তিনটি এখন যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
যশোর ডিএসবির পরিদর্শক (ডিআই-১) এম মশিউর রহমান জানিয়েছেন, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের মধ্যে (বন্দি হিসেবে পরিচিত) পাভেল ও রবিউলের নেতৃত্বাধীন দুটি গ্রুপ রয়েছে। আধিপত্য বিস্তারের জন্য আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই দুই গ্রুপ সংঘাতে লিপ্ত হয়। এতে উল্লিখিত তিনজন গুরুতর আহত হয়। এর মধ্যে পাভেল গ্রুপের সদস্য রাব্বি ও সুজন আর রবিউল গ্রুপের সদস্য নাঈম।
কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ দীর্ঘসময় পর সন্ধ্যা সাতটায় রাব্বি, সুজন ও নাঈমকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, হাসপাতালে আনার আগেই এই তিন কিশোর মারা গেছে।
রাতে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল লাইছসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে যান।
রাত আটটা ৪০ মিনিটে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান ঘটনাস্থল থেকে সুবর্ণভূমিকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন কী কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো তা তদন্তে কমিটি করা হবে।
হাসপাতালের চিকিৎসক অমিয় দাস জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তারা মারা যায়। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
বালকদের জন্য দেশে দুটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র আছে। যার একটি গাজীপুরের টঙ্গিতে, অন্যটি যশোর শহরতলির পুলেরহাটে। কিশোর অপরাধীদের জেলখানায় না পাঠিয়ে সংশোধনের জন্য এই উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর এই কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রক।
যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রায়ই অঘটন ঘটে। লাশ উদ্ধার, মারপিটের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা, দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়ম জেঁকে বসেছে। এর আগে একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি এই তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য একগুচ্ছ সুপারিশ করেছিল। কিন্তু অবস্থার যে উন্নতি হয়নি; বরং অবনতি হয়েছে, আজ তিন লাশ উদ্ধারের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হলো।
তিন কিশোরের মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে বলে খবর পেয়ে সেখানে সংবাদকর্মীরা ভিড় জমান। কিন্তু হাসপাতালে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের কাউকে পাওয়া যায়নি।
কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মাসুদের নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে বক্তব্য নেওয়ার জন্য সশরীরে উন্নয়ন কেন্দ্রে যাওয়া হলেও কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা জানান, ভেতরে পুলিশ ছাড়া অন্য কারো প্রবেশ নিষেধ।
পুলিশের দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে অবস্থানরতদের একটি করে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার থাকে। আজ নিহত রাব্বির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ১১৮৫৩। আর রাসেল ও নাঈমের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার যথাক্রমে ৭৫২৪ ও ১১৯০৭। নাঈম হোসেন ধর্ষণ এবং রাব্বি হত্যা মামলার আসামি ছিল।
রাতে যোগাযোগ করা হলে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে আছি। ঘটনা কেন কীভাবে ঘটলো তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।