মোঃ রুহুল আমিন( চৌগাছা) যশোর,প্রতিনিধিঃপল্লী গাঁয়ের অতি সাধারণ যুবক। কিন্তু অসাধারণ তার বোধশক্তি। যে কাজ তার করার কথা নয় সেই কাজ গুলোই তিনি করছেন। অথচ যাদের কাজগুলো করার কথা ছিল তারা তা করেননি। বরং বিরুদ্ধে কাজ করে দেশের ক্ষতি করছেন। যারা দেখবে তারাই সর্বনাশটা করছেন।
সাধারণ এই যুবকের নাম আক্তারুজ্জামান। বাড়ি চৌগাছা উপজেলার সুকপুকুরিয়া ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামে। কৃষক পিতা আব্দুল বারিকের একমাত্র পুত্র তিনি। দীর্ঘদিন প্রবাস যাপন করে সম্প্রতি কোবিট-১৯ মহামারিতে দেশে ফিরে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। বৃক্ষ প্রেম, পরিবেশ সংরক্ষণ ও সামাজিক কিছু কাজে এলাকার মানুষের আস্তাভাজন হয়ে উঠেছেন তিনি।
প্রবাস ফেরত বৃক্ষ প্রেমিক যুবক আক্তারুজ্জামান ১৩ আগষ্ট বৃহস্পতিার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকৌশলী এনামুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি আবেদন করেছিলেন।
ওই আবেদনপত্রে তিনি বলেন, একজন সাধারণ বৃক্ষ প্রেমিক হিসেবে অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি যে, চৌগাছা উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১১ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে সরকারি গাছে ৫/৭ ইঞ্চি বড় বড় পেরেক বসিয়ে বিল বোর্ড টাঙানো হয়েছে। এতে ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে গাছ। নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে পরিবেশের পরম বন্ধু বৃক্ষরাজি। গাছেরও প্রাণ আছে। গাছ মানুষের বন্ধু, প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে গাছ প্রাণীকুলকে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে গাছের বিকল্প নেই।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গাছের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে নিজ হাতে গাছ রোপণ করে গেছেন। গাছে পেরেক বসানো দেখে আমি ব্যথিত হই। তাই গাছে পেরেক যারা বসায় তাদেরকে আমি ঘৃণা করি। শুধু আমি নই, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ সমাজের প্রতিটি সাধারণ মানুষ তাদেরকে ঘৃণা করে।
যারা এভাবে বিলবোর্ড টানিয়েছেন লিখিত আবেদনে তিনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়েছেন। এই আবেদনের কপি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কাছেও দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যেসকল বিল বোর্ড রয়েছে তার মধ্যে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, কাজী অফিস, পরিবহন কাউন্টার, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, শ্রমিক নেতা, কোচিং সেন্টার, মোবাইল সেন্টার, জমি বিক্রি, বাড়ি বিক্রি, হাজাম, ঔষধালয়, হোমিও ক্লিনিক, ইলেক্টট্রিক ওয়ার্কশপ, দোকান ভাড়া প্রভৃতি নামে।
আক্তারুজ্জামান জানান, ‘ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে প্রাথমিকভাবে কথা বলেছি, কিন্তু তিনি এবিষয়ে তেমন একটা আন্তরিকতা দেখাননি; বরং বিরক্তিবোধ করেছেন মনে হয়। তবে গাছের প্রতি তার এই মমত্ববোধ কেউ তাকে অবজ্ঞা করবেননা বলে আশা ব্যাক্ত করেন তিনি’।
তিনি আরো জানান, গাছের এঅবস্থা যে শুধু চৌগাছা এলাকায় ঠিক তা নয়, সারাদেশেই গাছের চিত্র একই রকম। গাছে পেরেক বসানো সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অবমাননা করছেন শিক্ষিত, সচেতন, বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, রাজনীতিক শ্রেণীর মানুষ। অথচ তারাই নীতিকথা আউড়িয়ে মাঠ গরম করেন। দেশের সাধারণ মানুষ এই অপরাধটি করে না। যারা ব্যবস্থা নেবে তারাইতো এই শ্রেণীভুক্ত। সাধারণ মানুষ যদি এই অপরাধটি করতো তাহলে হয়ত তাদেরকে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য আসামির কাটগড়ায় দাড়াতে হত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, গাছ থেকে বিলবোর্ড সরানোর দাবি জানিয়ে আক্তারুজ্জামান নামের এক যুবক লিখিত আবেদন করেছেন। বিষয়টি সরেজমিনে দেখে গুরুত্বের সাথে পদক্ষেপ নেবেন বলে তিনি জানান।