রুহুল আমিন,উপজেলা করেসপন্ডেন্ট(চৌগাছা) যশোর
যশোরের চৌগাছা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কড়ইতলা বাজারকে চৌগাছার রাজাকার মুজাহিদ আলীর পিতা ও পিচ কমিটির সদস্য আহমদ আলীর নামে ‘আহমদ নগর’ নাম করণের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এবং ওই বাজারকে ‘কড়ইতলা মুক্তিযোদ্ধা নগর’ করার দাবিতে আজ মঙ্গলবার চৌগাছা শহরের ভাস্কর্যের মোড়ে মানববন্ধন করেছে দক্ষিণ কয়ারপাড়া গ্রামবাসি।এবং মানববন্ধন শেষে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে গ্রামবাসির গণস্বাক্ষরকৃত একটি স্মারকলিপি দেন তারা।
লিখিত স্মারকলিপিতে দক্ষিণ কয়ারপাড়া গ্রামবাসি অভিযোগ করেন ‘আমাদের গ্রামে চৌগাছা-যশোর রোডে কড়ইতলা নামক একটি চৌরাস্তা মোড় আছে। গত ২০০৯ সালে সেখানে গ্রামবাসি একটি বাজার বসায়। আমাদের পূর্ব পুরুষদের নাম রাখা কড়ইতলা মোড় বর্তমানে কড়ইতলা বাজার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু একটি স্বার্থন্বেষী মহল স্থানীয় জনগনের মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বাজার এবং বাজার সংলগ্ন দক্ষিণের সড়কটি সশস্ত্র রাজাকার (উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের করা রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীদের নামীয় তালিকায় মুজাহিদ আলীর নাম ৮ নম্বরে মুজাহিদ হোসেন হিসেবে রয়েছে) এর পিতা ও পিচ কমিটির সদস্য আহমদ আলী এর নামে করতে চায়। সেখানে ‘আহমদ নগর’ সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে। যাহাতে লেখা আছে বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন। আমরা উক্ত কড়ইতলা বাজারকে ‘‘কড়ইতলা মুক্তিযোদ্ধা নগর’’ নামে রাখতে চাই। স্মারকলিপিতে স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য রহিমা বেগম, বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফারুক হোসেনসহ গ্রামবাসি স্বাক্ষর করেন।
স্মারকলিপির অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক ডাক্তার নাসির উদ্দিন, যশোরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, দুই ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও চৌগাছা সদর ইউপি চেয়ারম্যানকে দিয়েছেন তারা।
মানববন্ধনে কড়ইতলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন আমরা দক্ষিণ কয়ার পাড়া গ্রামবাসি। আমরা দির্ঘদিন যাবৎ দেখছি আমাদের পূর্বপুরুষদের দেয়া নাম দক্ষিণ কয়ারপাড়া। এই দক্ষিণ কয়ারপাড়াকে চৌগাছা উপজেলার ৮ নম্বর রাজাকারের (মুজাহিদ আলী) পিতা ও পিচ কমিটির সেক্রেটারী আহমদ আলীর নামে বিভিন্ন জায়গায় সাইনবোর্ড বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমরা গ্রামবাসির কেউ এটা মেনে নিচ্ছি না। আমরা কড়ইতলা বাজারকে ‘‘কড়ইতলা মুক্তিযোদ্ধা নগর’’ করার দাবি জানাচ্ছি। আহমদ আলী যে পিচ কমিটির সেক্রেটারী ছিলেন এই মানববন্ধনে মুরব্বীরা রয়েছেন আপনারা তাদের কাছে জানতে পারেন। এসময় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের করা রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর নামের তালিকাও সাংবাদিকদের দেখান ও সরবরাহ করেন তিনি। ২০১১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন কমান্ডার নূরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত তালিকায় দেখা যায় ৮ নম্বরে রয়েছে মুজাহিদ হোসেন পিতা মৃত- আহম্মদ আলী, সাং কয়ারপাড়া। এই মুজাহিদ হোসেনই বর্তমানে মুজাহিদ আলী নামে পরিচিত। তার পিতা তৎকালিন পিচ কমিটির সদস্য আহমদ আলীর নামে ওই বাজারে ‘আহমদ নগর’ বলে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন ওই পরিবারের লোকজন। একই সাথে গ্রামের রাস্তার শুরুতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে আহমদ আলী সড়কও নামকরন করেছেন ওই পরিবার। সেখানে আবার বাস্তবায়নে উপজেলা পরিষদও লেখা হয়েছে। এটা নিয়ে দির্ঘদিন ধরে দক্ষিণ কয়ারপাড়া গ্রামের মানুষের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন কড়ইতলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফারুক হোসেন সহ কলেজ ও স্কুল শিক্ষকসহ দেড় শতাধিক গ্রামবাসি।