আবু সাইদ বিশ্বাসঃ ক্রাইমবাতা রিপোট: সাতক্ষীরা : জলাবদ্ধতার কবলে সাতক্ষীরা শহর। অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি-ঘর নির্মাণ, শহরের চারপাশে ইচ্ছেমত বেড়িবাঁধ দিয়ে মাছচাষ, পৌরসভার ভিতর পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, প্রাণ সায়ের খাল ভরাটসহ অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সাতক্ষীরা শহর ও সদরের বিস্তির্ণ অঞ্চল পানির মধ্যে। সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাটসহ বসতবাড়ি। ফলে দিনের পর দিন সীমাহীন দূর্ভোগে রয়েছে নিন্ম অঞ্চলে হাজারো মানুষ। সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি ওয়ার্ডেরই মানুষ জলবদ্ধতার কারণে নাকাল হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুম আসলেই জেলা শহরের মানুষদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে জেলা শহরের লক্ষাধীক মানুষ ভিটেহারা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা,কামালনগর,খলিবিলা,মধুমাল্লারডাঙ্গি,মুনজিতপুর, রাজারবাগান, মুন্সিপাড়া, পলাশপোল, কামালনগর, মাঠপাড়া, মাগুরা, বদ্দিপুর কলনীসহ আশপাশের এলাকা জলবদ্ধতার কারণে বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ স্থান কোমর পানিতে ডুবে আছে।
স্থানীয়রা জানায়, শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়র খাল। এই খালের এক প্রান্তে বেতনা নদী এবং অপর প্রান্তে মরিচ্চপ নদী। কিন্তু এই নদী দু’টি পলিজমে ভরাট হয়ে যাওয়ার প্রাণ সায়র খাল দিয়ে আর পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে গ্রামের পর গ্রাম সৃষ্ট হয়েছে জলবদ্ধতা। গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে বছরের প্রায় ৩ মাস এসব এলাকা পানিতে ডুবে থাকে। এতে মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেকের রান্না -খাওয়ার জায়গা নেই। পৌরসভার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে শহরের নিচু এলাকার মানুষের কষ্টের শেষ নেই। রাস্তার ওপর দুই থেকে তিনফুট পানি। কোথাও কোথাও এলাকাবাসি নিজ উদ্যোড়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালু করে যতসামান্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছে।
মুনজিতপুর এলাকার বাসিন্দা রহমান জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরের একাডেমি মসজিদ থেকে জেবুনেছা ছাত্রীনিবাস, মুন্সিপাড়া থেকে ফকির ময়ারার বাড়ি ও মুনজিতপুরের চৌধুরি বাড়ি হতে খোলার টালি পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে। এসব রাস্তায় দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানি। এসব এলাকার মানুষের ঘরের ভিতর ভিতর পানি। অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা যায়, বর্ষা মৌসুম থেকে এসব এলাকার শতশত পরিবার জলাবদ্ধতার করনে পানিবন্দি হয়ে আছে। বর্তমানে পানি দূষিত হয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে অনেকে। তাছাড়া কবে নাগাদ তারা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
তিনটি কারণে সাতক্ষীরা পৌর এলাকাতে জলাবদ্ধতা স্থায়ি রূপ নিতে চলেছে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, অপর্যাপ্ত পয়োনালা ও এগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার না করা এবং খালে পানি নিষ্কাশিত না হওয়া।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে,১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা পৌরসভা কাগজে-কলমে প্রথম শ্রেণি হিসেবে মর্যাদা পেলেও বর্তমানে পরিপূর্ণ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী। প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার যে সুযোগ সুবিধা হওয়ার কথা তা নেই, নেই তেমন নাগরিক সুবিধাও। ৩১.১০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এ পৌরসভা ০৯ টি ওয়ার্ড ও ৪০টি মহলরা ৫ লক্ষ মানুষ পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা বঞ্চিত।
পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অধিকাংশ পয়োনালা রাস্তার কাছে উঁচু এলাকায় হওয়ায় অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার পানি গড়িয়ে যেতে পারে না। অন্যদিকে মোট পয়োনালার এক-পঞ্চমাংশ কাঁচা হওয়ায় সেগুলো দ্রæত মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ফলে পানি ঠিকমতো নিষ্কাশিত হয় না। আবার শহরের দেড় কিলোমিটার পয়োনালার জন্য একটি করে কালভার্ট থাকায় সেগুলো দিয়ে পানি দ্রæতনিষ্কাশিত হয় না।
পৌরসূত্র জানায়, শহরে জলাবদ্ধতার মূল কারণ অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ করা। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার কোল ঘেঁষে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার একজনের বাড়ি থেকে অন্যজনের বাড়ির প্রাচীর একই থাকছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ থাকছে না। পয়োনালা নির্মাণ করার জন্য পথ পর্যন্ত দেওয়া হয় না। ফলে পানি জমে যায়।
পৌর ৭ নং ওয়ার্ডের খড়িবিলা গ্রামের আবুল কাশেম জানান, গেল বর্ষার পর থেকে বাড়ির চারদিকে ৩-৪ ফুট পানি জমে আছে। পরিবারের লোকজন নিয়ে বসবাস করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। মাঝেমধ্যে সাপের উপদ্রæপ দেখা দেয়। এতে ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন কালু জানান,তার জলাবদ্ধতা নিরাশন করতে তার ওয়ার্ডে গতচার দিন ধরে খাল পরিষ্কার,খালে নেটপাটা অপসারণ ও পানির প্রবাহ সৃষ্টি করতে কাজ করে যাচ্ছে। বড় ধরণের বরাদ্ধ পেলে স্থায়ী ভাবে তার অঞ্চলে জলাবদ্ধতা হ্রাস পাবে বলে তিনি আশা করেন।
সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকীন আহমেদ চিশতি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি নির্মাণ এবং পৌরসভার আশপাশে প্রভাবশালীদের ঘের নির্মাণের কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …